বৃহস্পতিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

song


Posted by Picasa

মন মানে না


Posted by Picasa

won


Posted by Picasa

বাঙলা ভাষা

 লেখকঃ আলী হাসান তৈয়ব | সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
মানুষের প্রতি আল্লাহর যেসব নিয়ামত ও দানের কথা প্রাতস্মরণীয় ভাষা তার অন্যতম। বৈচিত্র্যময় ভাষা আর নিরূপম বাক প্রতিভার গুণে মানুষ অন্য সব প্রাণী থেকে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। গণমাধ্যমের চরমোৎকর্ষের এ যুগে নিত্যনতুন যোগাযোগ প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হচ্ছে। বাকপ্রতিভা থাকাতেই মানুষ সেসব কাজে লাগিয়ে লাভবান হতে পারছে। আল্লাহ মানুষকে বাকশক্তি দিয়েছেন বলেই এত সব আবিষ্কার স্বার্থক হচ্ছে। বাকশক্তির বদৌলতে মানুষ গান গেয়ে আমোদিত হয়। কবিতা আবৃত্তি করে নিজে তৃপ্ত হয়। বক্তব্য দিয়ে শ্রোতাকে মুগ্ধ ও বিনোদিত করে। তাই ভাষার এ নেয়ামতের প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহ বলেন,

﴿ ٱلرَّحۡمَٰنُ ١ عَلَّمَ ٱلۡقُرۡءَانَ ٢ خَلَقَ ٱلۡإِنسَٰنَ ٣ عَلَّمَهُ ٱلۡبَيَانَ ٤ ﴾ [الرحمن: ١،  ٤]

‘পরম করুণাময়, তিনি শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন, তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনি তাকে শিখিয়েছেন ভাষা।’ {সূরা আর-রহমান, আয়াত : ১-৪}
নিপুণ শিল্পকুশলতায় আল্লাহ যেমন অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বসুন্ধরা সৃষ্টি করেছেন, তেমনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তিনি নানা বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্যের প্রতীক বানিয়ে। মানুষের গোত্র ও গাত্রবর্ণ, স্বরের রুক্ষ্মতা-কোমলতা, দৈহিক উচ্চতা-খর্বতা আর রুচি-অভিরুচির ভিন্নতার মতো তার ভাষায়ও দিয়েছেন নান্দনিক বিভিন্নতা। আল-কুরআনুল কারীমে তাই মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টি আর রকমারি সৃষ্টির মতো ভাষার বিভিন্নতাকেও আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿ وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦ خَلۡقُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَٱخۡتِلَٰفُ أَلۡسِنَتِكُمۡ وَأَلۡوَٰنِكُمۡۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّلۡعَٰلِمِينَ ٢٢ ﴾ [الروم: ٢٢]

‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আসমান ও জমিনের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা। নিশ্চয় এর মধ্যে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শনাবলি রয়েছে। {সূরা আর-রূম, আয়াত : ২২}
পৃথিবীতে ঠিক কতগুলো ভাষা রয়েছে তা অনুমান করা খুব কঠিন। তবে ধারণা করা হয় এর সংখ্যা প্রায় ৩০০০ থেকে ৮০০০ হবে। ঈথনোলোগ (Ethnologue) নামের ভাষা বিশ্বকোষের ২০০৯ প্রকাশিত ১৬তম সংস্করণের হিসেব মতে জীবিত ভাষার সংখ্যা প্রায় ৬৯০৯। ইউকিপিডিয়ার তথ্যমতে, পৃথিবীতে এ পর্যন্ত ৭৩৩০টি ভাষার সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে এতগুলো ভাষার মধ্যে প্রত্যেক জাতির কাছেই নিজ মাতৃভাষা অতুলনীয়। মাতৃভাষার গুরুত্ব সব জাতির কাছেই আলাদা। মাতৃভাষার প্রতি আবেগই অন্যরকম। মাতৃভাষায় যেভাবে মানুষ মনের কথা তুলে ধরতে পারে অন্য ভাষায় তা পারে না। আমাদের হাসি-কান্না আর আনন্দ-বেদনা কিংবা বৈরিতা-মিত্রতা আর আশা-হতাশার সবই প্রকাশ করে মাতৃভাষা। শিশুর প্রতি মা জননীর তুলনারহিত স্নেহ, মায়ের প্রতি শিশুর অস্ফূট ভালোবাসা আর তরুণ-তরুণীর নন্দিত-নিন্দিত সব ভালোবাসারই দূতিয়ালি করে এই মাতৃভাষা। পৃথিবীর প্রত্যেক জাত-বর্ণের লোকই তাই মায়ের মতোই ভালোবাসে তার মাতৃভাষাকে।
মাতৃভাষার গুরুত্ব শুধু ভৌগলিক বা ঐতিহাসিক কারণ অবধি সীমিত নয়; ধর্মীয়ভাবেও মাতৃভাষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। যুগে যুগে মানুষকে সুপথ দেখাতে আসা সব মহামানবই গুরুত্ব দিয়েছেন মাতৃভাষার প্রতি; কেননা স্বজাতির হৃদয় স্পর্শ করতে এরচে উত্তম ভাষা আর হয় না। সেহেতু তাঁরা আল্লাহর দেয়া নবুওয়তের দায়িত্ব পালনে মাতৃভাষাকেই বাহন হিসেবে করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন,

﴿ وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوۡمِهِۦ لِيُبَيِّنَ لَهُمۡۖ فَيُضِلُّ ٱللَّهُ مَن يَشَآءُ وَيَهۡدِي مَن يَشَآءُۚ وَهُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ٤ ﴾ [ابراهيم: ٤]

‘আর আমি প্রত্যেক রাসূলকে তার কওমের ভাষাতেই পাঠিয়েছি, যাতে সে তাদের কাছে বর্ণনা দেয়, সুতরাং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সঠিক পথ দেখান। আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ {সূরা ইবরাহীম, আয়াত : ০৪}
পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ পয়গম্বর তথা আল্লাহর দূত মুহাম্মদ রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাই মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করেন নি। আল্লাহর বিশেষ হিকমতের কারণে উম্মী তথা নিরক্ষর থাকা এই নবীও দেখা যায় দাওয়াত তথা স্বজাতির কাছে রবের বার্তা প্রচারে মাতৃভাষার প্রতি গুরুত্বের ইঙ্গিত করেছেন। অন্যসব ক্ষেত্রের মতো তিনি বরং মাতৃভাষায়ও শ্রেষ্ঠ আরব ছিলেন। এ কোনো কবি-সাহিত্যিক বা ঐতিহাসিকের দাবি নয়। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সত্যবাদী লোকটিই ভাষা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। তিনি নিজে আরবদের মধ্যে সবচে শুদ্ধভাষী ব্যক্তি ছিলেন; কারণ, তিনি কুরাইশ বংশীয় সন্তান আর তিনি বেড়ে উঠেছিলেন ভাষার দিক থেকে প্রসিদ্ধ আরবের তৎকালীন সা‘দ ইবন বকর গোত্রে।
যত্নসহ ভাষা লালন তথা শুদ্ধভাবে জানা এবং চর্চা করা মাতৃভাষার গুরুত্বের অপরিহার্য দাবি। শুদ্ধভাবে মাতৃভাষা বলতে ও লিখতে পারা যে কোনো দায়িত্বসচেতন নাগরিকের কর্তব্য। আর মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বানকারী মুবাল্লিগ ও দীন প্রচারক আলিমদের জন্য এর গুরুত্ব আর সবার চেয়ে বেশি। সব ভাষাই আল্লাহর নেয়ামত বা দান হিসেবে কোনোটাই অকারণ পূজনীয় বা বর্জনীয় নয়। কেবল পবিত্র কুরআন ও হাদীসের ভাষা এবং ইসলামী জ্ঞানের সবচে বড় ও বিশ্বস্ত ভাণ্ডার হিসেবে আরবিই যা আলাদা গুরুত্ব ও মর্যাদার অধিকারী সকল মুসলিমের কাছে। কিন্তু আরবীর গুরুত্ব যদি হয় ইসলামী জ্ঞান আহরণের স্বনির্ভর ঠিকানা বলে তবে সেই জ্ঞান প্রচারের অপরিহার্য দায়িত্ব ও দাওয়াতে দীনের জিম্মাদারির কারণে অনন্য গুরুত্বের দাবি রাখে মাতৃভাষা। আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক ফেরাউনের কাছে অমোঘ সত্যের বাণী পৌঁছানোর দায়িত্ব পেয়ে তাই মুসা আলাইহিস সালাম আপন ভাই হারুনকে চাইলেন সহযোগী হিসেবে। নিজের ভাষায় কিছুটা জড়তা আর ভাইয়ের ভাষা উন্নততর হওয়ায় তিনি এ আবেদন জানান। চলুন কুরআন খুলে দেখি :

﴿ وَأَخِي هَٰرُونُ هُوَ أَفۡصَحُ مِنِّي لِسَانٗا فَأَرۡسِلۡهُ مَعِيَ رِدۡءٗا يُصَدِّقُنِيٓۖ٣٤ ﴾ [القصص: ٣٤]

‘আর আমার ভাই হারূন, সে আমার চেয়ে স্পষ্টভাষী, তাই তাকে আমার সঙ্গে সাহায্যকারী হিসেবে প্রেরণ করুন, সে আমাকে সমর্থন করবে।’ {সূরা আল-কাসাস : ৩৪}
প্রাসঙ্গিকভাবে বলতে হয়, বাঙালী নাকি হুজুগে জাতি। কথাটার ঐতিহাসিক ভিত্তি জানি না। তবে কথাটা যে অমূলক নয় তার প্রমাণ আমার ছোট্ট জীবনে ঢের মিলেছে। জাতীয় দিবসগুলোয় আমরা পথে নেমে আসি। দেশের প্রতি ভালোবাসা আর আবেগ উথলে ওঠে সবার চেতনা এবং শ্লোগানে। কিন্তু ভালোবাসার ব্যাকরণের কঠিন নিয়ম হলো, এ কোনো দাবি বা প্রদর্শনের বিষয় নয়। ভালোবাসা চর্চা ও অনুশীলনের বিষয়। লালন ও প্রমাণের বিষয়। স্ববিস্ময়ে ভাবি, যে জাতি ১৬ ডিসেম্বর আর ২৬ মার্চে এমন বিপুল উন্মাদনায় আলোড়িত-আন্দোলিত হয় সে জাতি কিভাবে দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়! দেশমাতৃকার জন্য যে জাতি অকাতরে প্রাণ কোরবান করে তারা কিভাবে কানাকড়ির জন্য দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেয়! তারা কিভাবে দেশের স্বার্থ এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হতে দেখেও নির্বিকার থাকে!
ভাষার জন্য জীবন দান করে আমরা সারা বিশ্বে নিজেদের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছি। ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ এখন আর কেবল আমাদের শহীদ দিবস নয়; বিগত কয়েক বছর যাবৎ তা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে জাতিসংঘের সব সদস্যরাষ্ট্রে। ফেব্রুয়ারি এলেই সারা দেশে প্রবলভাবে ভাষাজ্বর শুরু হয়। মাতৃভাষার ভালোবাসা তখন মুখের শ্লোগান আর বিজ্ঞাপনের ভাষায় পরিণত হয়। এসব আবেগকে নেতিবাচক ভাবার উপায় ছিল না যদি না উচ্ছল তারুণ্যের টি-শার্ট আর বাংলার নারীর চিরায়ত শ্যামল সৌন্দর্যের শাড়িতে এই ভাষাপ্রেম আটকে থাকত। যে দেশের ক্ষুদে কিশোর থেকে নিয়ে অবুঝ শিশুরা পর্যন্ত ভাষার টানে কিংবা মাতৃভাষার প্রেমে শহীদ মিনারে! গিয়ে তৃপ্তি পায়। সে দেশেই আবার কিভাবে মাতৃভাষা না জানা প্রজন্ম গড়ে ওঠার সুযোগ পায় ইংলিশমিডিয়াম স্কুলের অপশাসনে! কেন সেদেশের কোনো অনুষ্ঠান জমবে না অপসংস্কৃতির জোয়ার তুলে নিজেই ক্রমাগত আতলে হারিয়ে যেতে থাকা হিন্দিগান ছাড়া! স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশেই কেন ভাষাসচেতনদের লড়তে হবে বাংলিশ নামের অশিষ্ট ভাষার বিরুদ্ধে!
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাতৃভাষা ভাষা ছিল আরবী। তিনি সারা জীবনে নিজ মাতৃভাষায় একটি অশুদ্ধ বাক্যও উচ্চারণ করেন নি; বরং অন্যদের মাতৃভাষা বিশুদ্ধভাবে শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন এবং মাতৃভাষা চর্চার মাধ্যমে জ্ঞানের পথ উন্মুক্ত করেছেন। আবার কখনও কখনও তিনি যুদ্ধবন্দীদেরকে ভবিষ্যত প্রজন্ম সন্তান-সন্তুতিদের জন্য নিছক ভাষার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে, ভাষা শিক্ষা প্রদানের বিনিময়ে তাদেরকে মুক্তও করে দিয়েছেন। [তাবাকাতে ইবন সা‘দ]
অথচ আমাদের দেশে এখন কোনো পরিবারে মাতৃভাষা না জানা কৃতিত্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজেরা অশুদ্ধ ইংরেজি বলার বদ অভ্যাসের সঙ্গে নিজেদের সন্তানদেরও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে দিয়ে মাতৃভাষা থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। আরও দুঃখের বিষয় হলো, এমন অনেক শিক্ষিত আছেন, যারা মাতৃভাষায় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা তো দূরের কথা, শুদ্ধ উচ্চারণে মাতৃভাষায় কথা বলতে পর্যন্ত পারেন না।
এদিকে এফএম রেডিও আর কিছু ক্ষ্যাপাটে অর্বাচীন তরুণ-তরুণী টিভি উপস্থাপনায় বাংলিশ তথা বাংলা-ইংরেজির জগাখিচুরি রসায়নে বাংলার বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। এদের উৎপাত-অত্যাচার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। দেশের ভাষাবিদ, কবি-সাহিত্যিক থেকে নিয়ে সচেতন রাজনীতিবিদরা পর্যন্ত এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ-সমালোচনামুখর না হয়ে পারছেন না। প্রধানমন্ত্রীও দু’ বছর আগে ২১ শে বইমেলা উদ্বোধন করতে গিয়ে বিজাতীয় ভাষার আগ্রাসন থেকে বাংলাকে রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু কোন শক্তি আর ক্ষমতাবলে যে এফএম প্রজন্মের জনকরা অব্যাহতভাবে মাতৃভাষা বাংলার সৌন্দর্য হরণ করছে তা বোধগম্য নয়। মনে হয় রাষ্ট্রের প্রধান দুই স্তম্ভ তথা সংসদ ও আদালতের দৃঢ় হস্তক্ষেপ ছাড়া এদের খামখেয়ালি বন্ধ হবে না।
দয়াময় আল্লাহ যার মুখে লালিত্যপূর্ণ ভাষা দিয়েছেন, মনের ভাব শব্দে প্রকাশে বাকশক্তি দিয়েছেন সে বড় ভাগ্যবান। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাই বলেছেন,

«إِنَّ مِنَ البَيَانِ لَسِحْرًا»

“নিশ্চয় ভাষাশৈলিতে জাদু রয়েছে”। [বুখারী, ৫১৪৬] অর্থাৎ ভাষার যে জাদুকরি প্রভাব রয়েছে তা অনস্বীকার্য।
তাই মানুষকে আল্লাহর সব নেয়ামতের সঙ্গে ভাষার নেয়ামতেরও যথার্থ মূল্যায়ন করা উচিত। ভাষার নেয়ামতের কদর করা মানে অশুদ্ধ শব্দ বা বাক্য উচ্চারণ না করা, মিথ্যা বাক্য ব্যবহার না করা, শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা, মাতৃভাষায় সৎ কাজের আদেশ আর অসৎ কাজে নিষেধ করা এবং ভাষার অপপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকা। মাতৃভাষায় সুন্দর ও শুদ্ধ উচ্চারণে মার্জিতভাবে কথা বলাকে যদি বলা হয় স্বর্ণ, আর সে কথাই যদি হয় সৎ কাজের আদেশ, অসৎকাজের বারণ এবং অপরের কল্যাণ কামনা, তবে তা হয় হীরের চেয়েও দামি।
আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুকাল থেকেই বিশুদ্ধ মাতৃভাষায় কথা বলতেন। তিনি জীবনে একটি মিথ্যা বাক্যও উচ্চারণ করেন নি। বচনে, আচরণে, পোশাকে, আখলাকে পবিত্র, পরিচ্ছন্ন ও বিশুদ্ধ থাকাই ছিল তাঁর বৈশিষ্ট্য। তাঁর ভাষা ছিল শুদ্ধ এবং উচ্চারণ ছিল সুস্পষ্ট। তিনি দ্রুত বাক্য বলতেন না। তাঁর প্রতিটি বাক্যই শুধু নয়, প্রতিটি অক্ষরও অন্যরা বুঝতে পারতেন। তাঁর ভাষণ পদ্ধতি এমন ছিল যে, যত বড় মাহফিল হতো, তাঁর স্বর তত উচ্চ হতো। যার ফলে বিদায় হজে আরাফার ময়দানে (মাইক ছাড়া) লাখ লাখ মানুষের তাঁর ভাষা বুঝতে অসুবিধা হয় নি।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে মাতৃভাষা মতো নেয়ামতের যথার্থ কদর করার তাওফীক দান করুন। ভাষার অপপ্রয়োগ ও অপভাষা থেকে বেঁচে বলার তাওফীক দান করুন। আমীন।

*রিপোর্ট করুন

প্রতিদিন ফ্রী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

শুক্রবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

ইখলাসঃ মূলভিত্তি

Posted: 08 Dec 2012 10:39 PM PST
 অনুবাদ ও উন্নয়নঃ মোঃ মুনিমুল হক    ওয়েব সম্পাদনাঃ  মোঃ মাহমুদ -- গাফফার
ইখলাস হল আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চাবিকাঠি।
আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন তিনি রাসুল (সাঃ) কে বলতে শুনেছেন-
কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম এমন এক ব্যক্তির ব্যপারে ফয়সালা হবে যে শহীদ হয়েছিল। তাকে আনা হবে এবং তাকে যেসব সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছিল তা পেশ করা হবে। সে তা চিনতে পারবে। আল্লাহ তা’য়ালা তাকে জিজ্ঞেস করবেন, ‘আমি যে সমস্ত নিয়ামত তোমাকে দিয়েছিলাম, তার বিনিময়ে তুমি কি কাজ করেছ?’ সে বলবে, আমি আপনার পথে লড়াই করে শহীদ হয়েছি। তিনি  বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি এজন্য লড়াই করেছ যে, লোকেরা তোমাকে বীর বাহাদুর বলবে! আর তা বলাও হয়েছে। অতঃপর তার সম্বন্ধে নির্দেশ দেওয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে টেনে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

অতঃপর আরেক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, সে ইলম অর্জন করেছে, তা লোকদের শিক্ষা দিয়েছে আর কুরআন পাঠ করেছে। তাকে উপস্থিত করা হবে এবং তাকে দেওয়া সুযোগ সুবিধা গুলোও তার সামনে তুলে ধরা হবে। সে তা দেখে চিনতে পারবে। তুমি তোমার নিয়ামতের কি সদ্ব্যাবহার করেছ? সে বলবে আমি ইলম অর্জন করেছি, লোকদের তা শিক্ষা দিয়েছি এবং আপনার সন্তুষ্টির জন্য কুরআন পাঠ করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা কথা বলছ। বরং তুমি এই উদ্দেশ্যে বিদ্যা অর্জন করেছিলে যে, লোকেরা তোমাকে আলেম না বিদ্বান বলবে, এবং কুরআন এই জন্য পাঠ করেছিলে যে, তোমাকে ‘ক্বারী’ বলা হবে। আর তা বলাও হয়েছে। অতঃপর তার সম্বন্ধে নির্দেশ দেওয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে টেনে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
অতঃপর আরেক ব্যক্তিকে আনা হবে, তাকে আল্লাহ অজস্র ধন দৌলত দান করেছেন এবং নানা প্রকারের ধন সম্পদ দিয়েছেন। তাকে দেওয়া সুযোগ সুবিধা গুলোও তার সামনে তুলে ধরা হবে। সে তা দেখে চিনতে পারবে। আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন, তোমার এ সম্পদ দ্বারা তুমি কি কাজ করেছ? সে বলবে, যেখানে ব্যায় করলে আপনি সন্তুশ্ত হবেন এমন কোন খাত আমি বাদ দেইনি বরং সেখানেই খরচ করেছি আপনার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে। মহান আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি এই জন্য দান করেছ যে, লোকেরা তোমাকে দাতা বলবে। আর তা বলাও হয়েছে। অতঃপর তার সম্বন্ধে নির্দেশ দেওয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে টেনে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।(সহীহ মুসলিমঃ ৪৭৭১ ইফা)

ইখলাস কি?

কেবলমাত্র আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে যাবতীয় কাজ সম্পাদন করার নামই হল ইখলাস। কে দেখছে কে দেখছেনা সেটা না ভেবে লোকচক্ষু বা লোকলজ্জাকে অবজ্ঞা করে আল্লাহ্‌ সর্বক্ষণ আমাদের দেখছেন এই ভয় বা ভাবনা মাথায় রেখে আমাদের প্রকাশিত বা অপ্রকাশিত সমস্ত কাজগুলো সম্পাদন করবার নামই হল ইখলাস। পবিত্র কোরআনে সুন্দর অনেক আয়াত আছে এই ব্যাপারে। মহান আল্লাহ্‌-তায়ালা বলেনঃ
يُوفُونَ بِالنَّذْرِ وَيَخَافُونَ يَوْمًا كَانَ شَرُّهُ مُسْتَطِيرًا [٧٦:٧]
وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَىٰ حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا [٧٦:٨]
إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنكُمْ جَزَاءً وَلَا شُكُورًا [٧٦:٩]
“তারা মান্নত পূর্ণ করে এবং সেদিনকে ভয় করে, যেদিনের অনিষ্ট হবে সুদূরপ্রসারী। তারা আল্লাহর প্রেমে অভাবগ্রস্ত, এতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করে।তারা বলেঃ কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে আমরা তোমাদেরকে আহার্য দান করি এবং তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না।” [সূরা আদ-দাহর, ৭৬:৭-৯]

ইমাম আল-গাজ্জালী (রঃ) বলেন, যদি কেউ জানতে চায় যে সে যা করছে তা কেবলমাত্র আল্লাহ-তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই কিনা, তখন তার উচিত কেউ যখন তার প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ  করে তখন তার নিজের অনুভূতি কেমন হয় সেটা লক্ষ্য করা। যদি সে  ভেবে বসে যে, “আমি কত নেকবান মানুষ, আমি অন্যকে উপকার করেছি” বা “হু! এত কষ্ট করলাম তাদের জন্য। কিন্তু প্রশংসা তো দূরে থাক, একটা থ্যাংকস পর্যন্ত দিল না কেউ...” এধরনের অনুভূতি যদি হয়ে থাকে আপনার তবে আপনি হয়তো কেবলমাত্র আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য করেননি কাজটা, আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির সাথে সাথে মনের অজান্তে অন্যকিছুও হয়তো প্রত্যাশা করছিলেন এই কাজের বিনিময়ে।

আমরা অনেকেই হয়ত জান্নাতবাসী পতিতার গল্পটা শুনেছি যে কিনা শুধুমাত্র পিপাসায় ছটফট করতে থাকা একটা কুকুরকে পানি পান করানোর বিনিময়ে জান্নাতে যাবে। এখন আমার প্রশ্ন, এই সামান্য কাজের বিনিময়েই জান্নাত পেয়ে গেল সে??!  ব্যাপারটা কি এতই সহজ যে শুধু ওইটুকু কাজের জন্যই জান্নাত পেয়ে গেল সে?? হতেই পারেনা এটা। কেননা একটু আগেই তো জানলাম আমরা, এত সৎকাজ করার পরও এক জ্ঞানী ব্যক্তি, এক শহীদ এবং একজন দানশীল ব্যক্তির জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবার গল্প। আসলে মূল পার্থক্যটা হল ইখলাস। এই সামান্য কাজটা করেই ওই মহিলা জান্নাতে যাবে কেননা সেই কাজটা ছিল কেবলমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করবার জন্য। আর এতসব সৎকাজের পরও উপরোক্ত তিন ব্যক্তি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে কেননা সেসব কাজ ছিল লোকের প্রশংসা অর্জনের জন্য। দেখুন নিয়তের এই সামান্য তারতম্যের পরিনতি কি! এজন্যই বিজ্ঞ আলেমগন সবসময় বলে থাকেন আমাদের প্রত্যেকটা কাজের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।

ইখলাস আর ইহসান খুব কাছাকাছি। যখন ইবাদত বা বা উপাসনা করবেন তখন মনে করবেন আপনি আল্লাহ্‌কে দেখছেন আর আল্লাহ্‌ আপনাকে দেখছেন - এটাই হল ইহসান।

খুর্‌রাম মুরাদ বলেন, “উদ্দেশ্য বা নিয়ত হল আমাদের আত্মার মত অথবা বীজের ভিতরে থাকা প্রাণশক্তির মত। বেশীরভাগ বীজই দেখতে মোটামুটি একইরকম, কিন্তু লাগানোর পর বীজগুলু যখন চারাগাছ হয়ে বেড়ে উঠে আর ফল দেওয়া শুরু করে তখন আসল পার্থক্যটা পরিষ্কার হয়ে যায় আমাদের কাছে। একইভাবে নিয়ত যত বিশুদ্ধ হবে আমাদের কাজের ফলও তত ভাল হবে।”*

ইখলাস হল যেকোনো কাজের মূলভিত্তি। মূলভিত্তি দুর্বল হলে যেমন বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়ে সহজেই, ঠিক তেমনই হবে আমদের কাজের পরিণতি সেটা যদি হয় ইখলাস-বিহীন।

আচ্ছা, ইখলাসের এই ধারনাটি কি শুধুমাত্র কোন বিশেষ ইবাদতের জন্য প্রযোজ্য নাকি আমাদের প্রত্যেকটি কাজের জন্যই প্রযোজ্য এটা?

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ-তায়ালা বলেনঃ
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ [٦:١٦٢]
“আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কোরবাণী এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে।”  [সূরা আল আন-আম, ৬:১৬২]

এই আয়াত অনুযায়ী আমাদের সবকিছুই হওয়া উচিত আল্লাহর জন্য। তাছাড়াও খুর্‌রাম মুরাদ বলেন, “সাধারণত লোকেরা কাজকে দুইভাগে ভাগ করে থাকে- দৈনন্দিন কাজকর্ম ও ধর্মীয় কাজ। কিন্তু আমাদের স্মরণ রাখা উচিত ধর্মীয় কাজ হল কেবলমাত্র সেগুলোই, যে সকল কাজ কেবল মাত্র আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য করা হয়। আর যে সকল কাজ আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা হয় না তা বাহ্যিক দৃষ্টিতে যতই “ধর্মীয়” মনে হোক না কেন আসলে তা দুনিয়াবি কাজ।... যখন কেউ তার পরিবারের জন্য ও আল্লাহর পথে ব্যায় করার জন্য টাকাপয়সা কামাই করে তবে সেটাও অনেক বড় একটা ধর্মীয় (সওয়াবের) কাজ যদি তা করা হয় কেবলমাত্র আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে।”

এমনকি আমাদের ঘুমও হতে পারে কেবলমাত্র আল্লাহ্‌র জন্য; কেউ যদি ফজরের নামাজ পড়বার উদ্দ্যশ্যে ঘুমিয়ে পড়ে তাড়াতাড়ি তবে সেই ঘুমটা হবে আল্লাহ্‌র জন্য। একবার ভাবুন শুধু, ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও সওয়াব বা নেকী অর্জন করছেন আপনি! পার্থক্যটা কেবল নিয়তের।

ঈখলাসের গুরুত্ব

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ-তায়ালা বলেনঃ
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ ۚ وَذَٰلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ [٩٨:٥]
“তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে...।” [সূরা বাইয়্যিনাহ, ৯৮:৫]

কোরআনে বর্ণিত হযরত ইউসুফ (আঃ) এর কাহিনীটি লক্ষ্য করলে বুঝতে পারব আমরা কেবলমাত্র ইখলাসের কারণেই বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। সূরা ইউসুফে আল্লাহ-তায়ালা বলেনঃ
وَلَقَدْ هَمَّتْ بِهِ ۖ وَهَمَّ بِهَا لَوْلَا أَن رَّأَىٰ بُرْهَانَ رَبِّهِ ۚ كَذَٰلِكَ لِنَصْرِفَ عَنْهُ السُّوءَ وَالْفَحْشَاءَ ۚ إِنَّهُ مِنْ عِبَادِنَا الْمُخْلَصِينَ [١٢:٢٤]
“আর সে নারী নিশ্চয়ই তার প্রতি আসক্ত হয়েছিল, আর সেও [ইউসুফ(আঃ)] তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ত যদি না সে তার পালনকর্তার স্পষ্ট-প্রমাণ প্রত্যক্ষ করতে। এইভাবে আমরা যেন তার কাছ থেকে হটিয়ে দিতে পারি মন্দকাজ ও অশ্লীলতা। নিঃসন্দেহে সে ছিল আমার একান্ত অনুরক্ত বান্দাদের একজন।” [সূরা ইউসূফ, ১২:২৪]

সুবহানাল্লাহ! অধিকন্তু, শয়তান সবাইকেই আক্রমণ করতে পারে কেবলমাত্র তাদের ব্যতীত যাদের রয়েছে ইখলাস। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ-তায়ালা বলেনঃ
قَالَ رَبِّ بِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ [١٥:٣٩]
إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ [١٥:٤٠]
“সে [শয়তান] বললঃ হে আমার পলনকর্তা, আপনি যেমন আমাকে পথ ভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তাদের সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করব এবং তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ঠ করে দেব।আপনার মনোনীত বান্দাদের ব্যতীত।” [সূরা হিজর, ১৫:৩৯-৪০]

এই মুহূর্তে উমর (রাদিআল্লাহু আনহু) এর ব্যাপারে বলা নবী করিম(সাঃ ) এর একটা কথা মনে পড়ে গেল আমারঃ “উমর(রাদিআল্লাহু আনহু) যে পথে আছে শয়তান সে পথ পরিহার করে চলবে কেননা সে তাকে ভয় পায়।”(বুখারী-কিতাবুল আদাবঃ ১০৮)

ভেবে দেখুন তাহলে একবার কত মজবুত আর কত বিশুদ্ধ ছিল উনাদের ইখলাস, আর আমরা কোথায় আছি আজ!
যার ইখলাস যত বিশুদ্ধ, সে আল্লাহ্‌র কাছে তত প্রিয়। যেহেতু মানুষ আমরা, ভুল আমাদের হয়েই যায়, তাই মাঝেমধ্যে আমাদের ইখলাসের সাথে অন্যসব দুনিয়াবি উদ্দেশ্যও ঢুকে পড়ে আমদের মনের মধ্যে। আর মাঝে মধ্যে এমনও হয় যে ঠিক কি উদ্দ্যশ্যে কাজগুলো করছি সেটা নিজেরাই জানি না আমরা। আর তাই নিয়তের পরিশুদ্ধতার সবসময় সতর্ক থাকা উচিত আমাদের। আর যতক্ষণ পর্যন্ত একমাত্র আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য কাজ করার ব্যপারে সর্বদা সচেতন থাকতে চেষ্টা করব আমারা ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সেই প্রচেষ্টার জন্যও আল্লাহ্‌র কাছ থেকে উত্তম বিনিময় পাব আমরা ইনশাআল্লাহ্‌।

তবে আমাদের শঙ্কিত বা হতাশ হবার কিছু নেই। আম্‌র বিন আল-আ’স থেকে বর্ণিত, রসুল(সঃ) বলেছেন, “বিচার দিবসে আমার উম্মতদের মধ্যথেকে একজনকে সমস্ত সৃষ্টিকুলের সামনে ডেকে তার নিরানব্বইটা আমল (যার প্রত্যেকটিই দুচোখে যতদূর দেখা যায় তার চাইতেও অধিক) তার সামনে উপস্থিত করে বলা হবেঃ ‘এর মধ্যে কোন আমল কি অস্বীকার করতে পারবে তুমি?’ সে বলবেঃ ‘না, আমার প্রভু।’ তখন তাকে বলা হবে, ‘তোমার কি ওজর বা ভাল আমল আছে কোন?’ সে বলবে, “না, নেই।” তখন তাকে বলা হবে, ‘না, কিছু ভাল কাজ তোমার আছে বটে, অবিচার করা হবেনা আজ তোমার প্রতি কোন।’ তাকে তখন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লা, মুহাম্মদুর রসুল্লাল্লাহ” লেখা দেখানো হবে একটা। তখন সে বলবে, ও আল্লাহ্‌! কিসের লেখা এটা?’ তখন তাকে বলা হবে, ‘তোমার প্রতি কোন অবিচার করা হবেনা আজ।’ এরপর তার নিরানব্বইটা (মন্দ) আমল রাখা হবে নিক্তির এক পাশে আর অন্যপাশে রাখা হবে লেখাটা। তখন দেখা যাবে ওই লেখার ওজন হবে ওইসব মন্দ আমলের চাইতেও বেশি।” [তিরমিযি]

বুঝতেই তো পারছেন কারণটা কি এর। কারণ আর কিছুই নয়; এটা হল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লা’ অর্থাৎ আল্লাহ্‌ ব্যতীত আর কোন ইলাহ্‌ নেই- এই কথায় পরিপূর্ণ, বিশুদ্ধ ও একাগ্র আস্থার ফল।

ইখলাসের গোপন রহস্য

ইখলাস হল এমন একটা জিনিস যা আল্লাহ্‌ তার সেই সব বান্দাদের অন্তরে প্রতিস্থাপন করে দেন যারা এটা মনে প্রানে কামনা করে। শেখ ওমর আব্দেল-কাফীর মতে ইখলাসের তিনটি গোপন রহস্য হলঃ
১. যে ব্যক্তির অন্তরে ইখলাস আছে তা নিয়ে সে গর্ব বা অহংকার করে না কখনোই। উদাহারনস্বরূপ বলা যায়, যদি কেউ লোকচক্ষু পরিহার করে একান্তে বা গোপনে সালাত আদায় করে কিন্তু মনে মনে ভেবে নেয় যে তার ইখলাস অন্যদের চাইতে বেশী (তাই সে এটা করতে পারে) তবে অহংকারের ফাঁদে পড়ে গেল সে। কেননা একমাত্র আল্লাহ্‌ই জানেন কার ইখলাস বেশী।
২. ইখলাস হল একমাত্র আল্লাহ্‌ও তার বান্দার মধ্যকার ব্যাপার; এমনকি ফেরেশতারাও জানতে পারেনা এটা, তাই লিখেও রাখেনা এটা তারা। উপরে বর্ণিত শহীদ, আলেম ও দানশীল ব্যক্তির ঘটনা থেকেও এটা পরিষ্কার বুঝা যায়- ফেরেশতারা শুধু তাদের সৎকাজগুলুই লিপিবদ্ধ করে রেখেছিল, কিন্তু সেসব কাজের পিছনে সত্যিকারের উদ্দেশ্য কি ছিল তা একমাত্র আল্লাহ-তায়ালাই প্রকাশ করেছিলেন।
৩. কারো ইখলাস যদি বিশুদ্ধ হয় তবে শয়তান তাকে কখনোই আক্রমণ করতে পারেনা ।

বিশুদ্ধ ইখলাসের ব্যক্তিদের উদাহারন

বিশুদ্ধ ইখলাসের একটা সুন্দর উদাহারন হল মরিয়ম(আঃ) এর মা,

إِذْ قَالَتِ امْرَأَتُ عِمْرَانَ رَبِّ إِنِّي نَذَرْتُ لَكَ مَا فِي بَطْنِي مُحَرَّرًا فَتَقَبَّلْ مِنِّي ۖ إِنَّكَ أَنتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ [٣:٣٥]
“এমরানের স্ত্রী যখন  বললো-হে আমার পালনকর্তা! আমার গর্ভে যা রয়েছে আমি তাকে তোমার নামে উৎসর্গ করলাম সবার কাছ থেকে মুক্ত রেখে। আমার পক্ষ থেকে তুমি তাকে কবুল করে নাও, নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞাত।” [সূরা আল ইমরান, ৩:৩৫]

তিনি আল্লাহর সাথে এক অপূর্ব একান্ত আলাপচারিতা করছিলেন। তিনি আল্লাহ্‌কে বলছেন তার গর্ভের সন্তান কেবলমাত্র আল্লাহ্‌র জন্য উৎসর্গ করেছেন তিনি। অর্থাৎ তিনি তার সন্তানকে এমনভাবে লালনপালন করবেন যেন সে হয় আল্লাহভক্ত—শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য। আর সেই একাগ্র,  বিশুদ্ধচিত্তের  কথোপকথনে খুশি হয়ে আল্লাহ্‌ তাকে উপহার দিলেন সর্বকালের সর্বোত্তম কন্যাদের (নারীদের) একজনঃ মরিয়ম(আঃ)।
যিনি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহে আল্লাহ্‌র কাছে করা তার মায়ের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

অন্য একটা উদাহারন হল খালিদ বিন আল-ওয়ালিদ (রাদিআল্লাহু আনহু)-
একদিন উমর (রাদিআল্লাহু আনহু) হঠাৎ তাকে তার সেনাপতির পদ থেকে অপসারণ করে নিলেন। নিজেকে একবার তার জায়গায় ভেবে দেখুন। আপনি কোন দলের দলপতি, অথবা কোন প্রতিষ্ঠানের ম্যনেজার। হঠাৎ করে ম্যানেজমেন্ট এ রদবদল হল, আর আপনাকে আপনার পদ থেকে অপসারন করা হল বা নিচের সাধারন কর্মীদের স্তরে নামিয়ে দেওয়া হল। আপনার প্রতিক্রিয়া কি হবে? আপনার কাজে তার কি প্রভাব পড়বে? ক্ষোভ, অপমান আর রাগে সে চাকরি বা কাজ কি করতে ইচ্ছে করবে আর আপনার?? কিন্তু খালিদ (রাদিআল্লাহু আনহু) কি করেছিলেন জানেন? অপমানিত বোধ করা বা যুদ্ধ করতে অসম্মতি জানানো তো দূরে থাক, উল্টো তিনি আরও বেশী অনুপ্রেরণা আর প্রাণশক্তি নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। যখন থাকে জিজ্ঞাস করা হয়েছিল কেন, তিনি বলেছিলেন, “আমি আল্লাহ্‌র জন্য যুদ্ধ করি, উমরের জন্য নয়।”  তিনি এটা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন যে কোন বিশেষ পদমর্যাদার জন্য নয়, কেবলমাত্র আল্লাহ-তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য যুদ্ধ করছেন তিনি।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইখলাস অর্জনের তৌফিক দান করুক!


*In the Early Hours, p. 63.
মূল প্রবন্ধঃ Jinan Bastaki/ জিনান বাসতাকি
ENGLISH VERSION 





কোরআনের চ্যালেঞ্জ


কোরআনের চ্যালেঞ্জ


প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

লিখেছেনঃ ডঃ আবু আমীনাহ বিলাল ফিলিপস্‌
অনুবাদঃ মাসুদ শরিফ
সম্পাদনাঃ আবদ্‌ আল-আহাদ এবং শাবাব শাহরিয়ার খান
প্রকাশনায়ঃ কুরআনের আলো ওয়েবসাইট
বিষয়বস্তু উপস্থাপনের দিক থেকে কোরআন আল-কারীম এক অনন্য সাধারন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হলেও কোরআন নিজেই অলৌকিকতায় ভরপুর এক বিস্ময়কর গ্রন্থ। “অলৌকিক” বলতে সাধারণত আমরা যা বুঝি তা হল, অতিপ্রাকৃতিক কিংবা বিস্ময়কর কোন ঘটনা যা মানুষের পক্ষে কখনই উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। নবী কারীম (সা) তৎকালীন আরবদেরকে কোরআনের ভাষা, ছন্দ ও বিষয়বস্তুর অলংকারের সমতুল্য সাহিত্য রচনার জন্য চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন অথচ তারাই কাব্যসাহিত্যে ব্যাপক পারদর্শী ছিল। কিন্তু কাব্য রচনায় নিজেদের এতো সাফল্য আর উৎকর্ষতা থাকার পরেও তারা উক্ত চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে। কোরআন এর অবিকল কিছু সৃষ্টির ঐ চ্যালেঞ্জ আরবসহ পুরো মানবজাতির উপর তিনটি পর্যায়ে দেয়া হয়েছেঃ

১. সম্পূর্ণ কোরআনঃ

কোরআন আল-কারীমে আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন প্রিয় নবী (সা) কে প্রথমে এই বলে সকল মানুষকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে বলেছেন যে, পারলে তারা যেন কোরআনের সমমর্যাদার কোন গ্রন্থ বানিয়ে দেখায়ঃ
বলঃ যদি সকল মানুষ ও জিন মিলে কোরআনের অবিকল কিছু বানিয়ে আনার চেষ্টা করে, তবুও তারা পারবেনা, এমনকি যদি তারা একে অপরকে সাহায্যও করে। [সূরা আল-ইস্‌রা; ১৭:৮৮]

২. দশটি সূরা

যারা এর সত্যতাকে এরপরও অস্বীকার করে যাচ্ছিল তাদেরকে আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন নিদেনপক্ষে কোরআনের মত করে দশটি সূরা রচনা করতে বললেনঃ
“অথবা তারা কি এটা বলে নাকি যে সে (মুহাম্মাদ) নিজেই এটা রচনা করেছে? (তাদের) বল, ‘যদি তাই হয়, তাহলে তোমরাও এর অনুরূপ (মাত্র) দশটি সূরাহ নিয়ে আসো এবং আল্লাহ্‌ ছাড়া তোমারা আর যাদের উপাসনা কর তাদেরকেও সাহায্য করতে বল, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।” [সূরা হূদ; ১১:১৩]
সর্বশেষ চ্যালেঞ্জ ছিল, অন্তত পক্ষে কোরআন-এর একটি সূরার অনুরূপ তারা যেন বানিয়ে আনে, আর কোরানের সবচাইতে ছোট সূরা হচ্ছে সূরা আল-কাউসার, যার আয়াত সংখ্যা মাত্র তিনটি।
এবং আমার বান্দার (মুহাম্মাদ) উপর আমি যা নাযিল করেছি, তার ব্যাপারে তোমাদের মনে যদি বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকে, তাহলে এর অনুরূপ একটি সূরা নিয়ে আসো, এবং আল্লাহ্‌ ছাড়া তোমাদের আর যেসব সাহায্যকারী আছে তাদের সাহায্যের জন্য ডাকো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও। [সূরা আল বাক্বারাহ্‌;  ২:২৩]
এই চ্যালেঞ্জগুলা কিন্তু নিছক কথার কথা ছিল না যে, কেউ এর জবাব দিতে চায়নি কিংবা কোরআনকে ভুল প্রমাণিত করতে চায়নি। প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা) মানুষদের আল্লাহ্‌র একত্ববাদ, সকল ধরণের মূর্তিপূজা বাতিল এবং দাস-দাসী ও মনিবের মধ্যে যে সাম্যবাদের ডাক দিচ্ছিলেন তা সাধারণভাবে মাক্কার আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট এবং বিশেষ করে শাসকগোষ্ঠী কুরাইশ গোত্রের জন্য তাদের কর্তৃত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। আরবের প্রধান বাণিজ্য ও ধর্মীয় কেন্দ্র মাক্কার অধিবাসীরা রাসূল (সা) এর সেই সাম্যবাদের বিস্তার রোধ করার জন্য মরিয়া হয়ে ছিল। এর জন্য তাদের শুধু এটুকু করলেই চলত, যদি তারা কোরআনের অনুরূপ মাত্র একটি সূরা বানিয়ে আনতে পারত! বহু কুরাইশ কবি ও বাকপটু লোক উক্ত চ্যালেঞ্জের উত্তর দিয়ে গিয়ে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। চ্যালেঞ্জে ব্যর্থ হয়ে তারা বরঞ্চ তাঁকে অনেক সম্পদ, সর্বোচ্চ ক্ষমতার আসন এমনকি গোত্রের সবচাইতে অভিজাত এবং সুন্দরী মেয়েদেরকে উপঢৌকন হিসেবে দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল। আর তা করেছিল শুধুমাত্র এই জন্যে যে, যাতে তিনি ইসলামের এই দা’ওয়াত বন্ধ করে দেন। উল্টো তিনি তাদের সূরা ফুসসিলাত এর প্রথম তেরটি আয়াতের আবৃত্তির মাধ্যমে তাদের জবাব দেন। এতে তারা যারপরনাই বিরক্ত হয়ে তাঁকে থামতে বলেন [ আল হাকীম, আল-বাইহাক্বী, আবূ ইয়’লা ও ইবন্‌ হিশাম কর্তৃক সংগৃহীত, ইব্‌রহীম আল-‘আলী তাঁর সহীহ্‌ আস-সীরাহ্‌ আন-নাবাওয়ীয়্যাহ-তে এই বর্ণনাকে ‘হাসান’ বলেছেন, পৃঃ৬৪]। প্রিয় নবী (সা) কে প্ররোচিত করতে ব্যর্থ হয়ে কুরাইশরা তাদের দাস-দাসী ও আত্মীয়দের মধ্যে যারা ধীরে ধীরে ইসলাম গ্রহণ করছিল, তাদেরকে পৌত্তলিক ধর্মে ফিরিয়ে আনার জন্য নির্যাতন করে যাচ্ছিল। যদিও তারা ইসলাম থেকে ফিরে আসেননি। এতো কিছুতে না পেরে পরবর্তীতে তারা প্রিয় নবী (সা) এবং তাঁর অনুসারী ও তাঁর বংশ বানূ হাশীম গোত্রের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যাতে করে তারা অনাহারের কষ্টে তাদের কাছে মাথা নত করে। বলাবাহুল্য, তাদের এই চেষ্টাও বিফলে গিয়েছে। শেষমেশ তারা তাঁকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। এই উদ্দেশ্যে তারা কুরাইশদের সকল বংশ থেকে একজন করে সশস্ত্র লোককে পাঠায়, যাতে করে পরবর্তীতে নবী কারীম (সা) এর নিজস্ব বংশের লোকেরা আর তাদের উপর প্রতিশোধ নিতে না পারে।
যাইহোক, এই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন রাসূল (সা) সহ তাঁর সকল অনুসারীগণকে মক্কা থেকে উত্তরে ইয়াসরিব নামক শহরে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন যেখানে আগে থেকেই বেশ কিছু মানুষ ইসলাম গ্রহণ করছিল। ইয়াসরিব এর লোকজনদের মধ্যে ইসলাম খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিল এবং বছর না ঘুরতেই মুসলিমরা সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ফেলে। প্রিয় নবী (সা) কে সেখানকার শাসক বানানো হয় এবং ইয়াসরিব শহরটিকে মাদীনাহ্‌  আন-নবী [নবী (সা)-এর শহর] এই নামে নতুন করে নামকরণ করা হয়। পরবর্তী আট বছরের বিভিন্ন সময়ে মক্কা এবং এর আশেপাশের বিভিন্ন গোত্র ও বংশের অধিবাসীরা ক্রমবর্ধমান মদীনাহ্‌-এর মুসলিম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ব্যর্থ যুদ্ধাভিযান চালায়। যার পরিসমাপ্তি ঘটে মুসলিমদের মক্কা বিজয়ের মধ্য দিয়ে।
কুরাইশ এবং তাদের মিত্র বাহিনী কেউ যদি শুধুমাত্র কোরআনের সূরা এর অনুরূপ মাত্র তিনটি কবিতার লাইন কিংবা পুঁথি রচনা করতে পারত তাহলেই কিন্তু এতো রক্তারক্তির আর দরকার পড়ত না। সুতরাং, একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, কোরআনের ভাষাশৈলীর অনুপম মর্যাদা, শব্দের মাধুর্য এবং ছন্দের গতিশীলতার এই অলৌকিক বিস্ময় কোন মানুষের পক্ষে অনুকরণ করা সম্ভব নয়।
অনেকে এমনটা ধারণা করে যে, কোরআনের অসাদৃশ্যতা এমন কোন অনন্য বৈশিষ্ট্য নয়। যেমন, বিখ্যাত ইংরেজ কবি শেক্সপীয়ার, চসার অথবা যে কোন ভাষারই যে কোন বিখ্যাত কবির প্রত্যেকেরই নিজস্ব একটা রচনাশৈলী থাকে যা তাদের সমসাময়িক অন্যান্য লেখকদের থেকে পৃথক করে রাখে। কিন্তু যদি এমন হয়, আজকের দিনের শীর্ষস্থানীয় কোন কবি শেক্সপীয়ার এর সাহিত্যকর্মের উপর গভীর পড়াশুনা করে এবং পুরাতন কালি দিয়ে পুরাতন কোন কাগজে শেক্সপীয়ারের রচনাশৈলী নকল করে নিজে কোন ‘সনেট’ লিখে সেটা শেক্সপীয়ারের নামে দাবী করে, তাহলে তার সেই দাবীকৃত কবিতাটি ভালভাবে দেখার পর হয়তো সেটা শেক্সপীয়ারের বলেই মেনে নেয়া হবে। একজন কবি যতই বড় হোকনা কেন, এভাবে ঠিকই তাঁর রচনাশৈলীর অনুকরণ করা যায়। অনেক বড় এবং বিখ্যাত চিত্রকরের চিত্রকর্ম ঠিক যেমন অনুকরণ করা সম্ভব হয়েছে। [প্রকৃত পক্ষে অনেক ইংরেজ সাহিত্যিকদের মতে শেক্সপীয়ার এর সাহিত্যকর্ম হিসেবে যেগুলা ধরা হয়, তার বেশকিছু আসলে তারই সমসাময়িক লেখক ক্রিস্টোফার মার্‌ল এর লেখা।] কোরআন এই ক্ষেত্রে অনেক বেশীই উপরে। কেননা, ১৪০০ বছর আগ থেকে এখন পর্যন্ত অনেকেই কোরআন এর অনুরূপ সূরা নকল করে লেখার অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু ভাল করে পরীক্ষা করার পর দেখা গেছে ওগুলো নিরর্থক পণ্ডশ্রম; নান্দনিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে কোরআনের সামান্য একটি আয়াতের ধারেকাছে যাওয়ারও ক্ষমতা এদের নেই। যেমনটি আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, তখন কোরআন এর অনুকরণ করার চেষ্টা ছিল এখনকার যেকোনো সময়ের চেয়ে বড় সময়ের দাবি, যখন কোরআন নাযিল হচ্ছিল, যখন সাহিত্যের চর্চা ছিল সর্বোচ্চ শিখরে। অথচ তখনই কেউ এর অনুরূপ কিছু সৃষ্টি করতে পারেনি, আর এখনতো প্রশ্নই উঠে না!

আমাদের সাথে অনুবাদক হিসাবে কাজ করতে চাইলে এইখানে ক্লিক করুন।

*রিপোর্ট করুন

প্রতিদিন ফ্রী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন



'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'। প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

Tagged as: , , , ,
Icon
 
News
Recent Activity
Recommended
 
 
 
Share

“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌”র ক্ষমতা


প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

লেখকঃ শেইখ সলীহ্‌ ইবন্‌ ফাওযান আল–ফাওযান 
অনুবাদ ও সম্পাদনাঃ আবদ্‌ আল-আহাদ | ওয়েব এডিটিং: শাবাব শাহরিয়ার খান

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌

অর্থাৎ, আল্লাহ্‌ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য অন্য কোন সত্য ইলাহ্‌ নেই। এই কথা যদি কেউ সত্যতার সাথে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে উচ্চারন করে, এ কথার অর্থ যা বলে সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে, বিশ্বাস এবং চালচলনে এই কথাকে বাস্তবিক রূপদান করে তাহলে ব্যক্তি ও সমাজ উভয় জীবনেই একথার প্রভাব আসলেই চমৎকার এবং প্রশংসনীয়।

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ এর তিনটি উল্লেখযোগ্য ক্ষমতাঃ


[১] গোটা মুসলিম উম্মাহ্‌কে একত্রীকরণঃ

একথা গোটা মুসলিম উম্মাহ্‌কে ঈমানের শক্তিতে বলীয়ান করবে। ফলে তারা বাতিল শক্তি তথা তাদের শত্রুদের বিপক্ষে সংগ্রামে বিজয়ী হবে। আর এটা তখনই সম্ভব যখন আমরা সকলেই আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন কর্তৃক মনোনীত একমাত্র সত্য ধর্ম ইসলামকে অনুসরণ করব, মেনে চলব। যখন আমাদের আকীদাহ্‌ তথা ধর্মীয় বিশ্বাস হবে এক ও অভিন্ন। মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ

আর তোমরা একযোগে আল্লাহ্‌র রজ্জুকে সুদৃঢ়রূপে ধারন কর ও বিভক্ত হয়ে যেয়ো না। [সূরা আল ইমরান; ৩:১০৩]

আর তারা যদি তোমাকে প্রতারিত করার ইচ্ছা করে তবে তোমার জন্যে আল্লাহ্‌ই যথেষ্ট, তিনিই তোমাকে স্বীয় সাহায্য দ্বারা এবং মুমিনগণ দ্বারা শক্তিশালী করেছেন। আর তিনি মুমিনদের অন্তরে প্রীতি ও ঐক্য স্থাপন করেছেন, তুমি যদি পৃথিবীর সমুদয় সম্পদও ব্যয় করতে তবুও তাদের অন্তরে প্রীতি, সদ্ভাব ও ঐক্য স্থাপন করতে পারতে না; কিন্তু আল্লাহ্‌ই ওদের পরস্পরের মধ্যে প্রীতি ও সদ্ভাব স্থাপন করে দিয়েছেন, নিঃসন্দেহে তিনি মহাশক্তিমান, মহাকৌশলী। [সূরা আনফাল; ৮:৬২-৬৩]

আকীদাহ্‌ তথা বিশ্বাসগত পার্থক্যের কারনেই মুসলিম উম্মাহ্‌র মধ্যে আজ এতো বিভেদ, অনৈক্য, বিভ্রান্তি আর বিশৃঙ্খলা। একমাত্র এই কারনেই মুসলিম উম্মাহ্‌র ভিতর আজ এতো দ্বন্দ্ব আর হানাহানির সৃষ্টি হয়েছে। মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ

নিশ্চয় যারা নিজেদের দ্বীনকে খণ্ড-বিখণ্ড করেছে এবং বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই, তাদের বিষয়টি নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌হাওলায় রয়েছে, পরিশেষে তিনি তাদেরকে তাদের কার্যকলাসম্পর্কে অবিহিত করবেন। [সূরা আন’আম; ৬:১৫৯]

কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে তাদের দ্বীনকে বহুভাগে বিভক্ত করেছে; প্রত্যেক দলই তাদের নিকট যা আছে তা নিয়েই আনন্দিত। [সূরা মু’মিনূন; ২৩:৫৩]

আর তাই মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃতঅর্থে ঐক্যবদ্ধ হতে পারবেনা যতক্ষণ না তারা ঈমান এবং আকীদাহ্‌ সম্পর্কে যথার্থ এবং বিশুদ্ধ উপলব্ধি অর্জন করতে পেরেছে। এখানেই নিহিত লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ এর তাৎপর্য। একথার তাৎপর্য উপলব্ধি না করে কারোর পক্ষে ঈমান ও আকীদাহ্‌গত পরিশুদ্ধি অর্জন করা সম্ভব নয়। ইসলাম আবির্ভাবের পূর্বে এবং পরে আরবের অবস্থার দিকে দৃষ্টিপাত করলেই বোঝা যায় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর কী ক্ষমতা।

[২] শান্তি ও নিরাপত্তা অর্জন:

যে সমাজ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ এর শিক্ষায় বিশ্বাসী এবং এর শিক্ষাকে বাস্তবে রূপ দেয় সেই সমাজে বিরাজ করে শুধুই শান্তি ও নিরাপত্তা। এমন সমাজের প্রতিটি মানুষই কেবলমাত্র সেই কাজের ব্যপারে যত্নশীল হবে যা আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন তাদের জন্য হালাল বা বৈধ ঘোষণা করেছেন। পক্ষান্তরে, তারা সেই সমস্ত কাজ পরিহার করে চলবে যা তিনি হারাম বা অবৈধ ঘোষণা করেছেন। সমাজের প্রতিটি মানুষই তখন তাদের এক ও অভিন্ন আকীদাহ্‌ তথা ধর্মীয় বিশ্বাসকে অনুসরণ করে সকল কাজ-কর্ম সম্পাদন করবে। কারণ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ এর দাবী হল, যে কেউ এই কথার মৌখিক স্বীকৃতি দেবে তাকে এর সত্যতা বাস্তবায়ন করতে হবে কর্মের মাধ্যমে। কর্মহীন মৌখিক ঐ স্বীকৃতি একটি অন্তঃসার শূন্য স্লোগান ছাড়া কিছুই নয়। কাজেই কালিমার শিক্ষায় বিশ্বাসী এবং সেই শিক্ষাকে মেনে চলে এমন সমাজের লোকদেরকে দ্বারা কখনও জুলুম-অত্যাচার, অন্যায়, পারস্পারিক হানাহানি ইত্যাদি সংঘটিত হতে পারেনা। এমন সমাজের লোকেরা গভীর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সৎকর্ম সম্পাদনের জন্যে পরস্পরকে সহযোগিতা করবে এবং ভালবাসবে। আর তাদের এই পারস্পারিক সহযোগিতা ও ভালবাসা হবে কেবলমাত্র আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের জন্যে, তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে। আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ
মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। [সূরা হুজুরাত; ৪৯:১০]

বিষয়টি অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত সে সব আরবদের জীবনে যারা একসময় ইসলাম মেনে চলত না। অথচ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌” এর পরশে তাদের জীবনে এসেছিল আমূল পরিবর্তন। ইসলাম পূর্ব সময়ে তাদের জীবন ছিল পারস্পারিক মারামারি, কাটাকাটি, হানাহানি, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, খুনাখুনি, লুটতরাজ ইত্যাদিতে জর্জরিত। সেই মানুষগুলোই যখন গ্রহণ করল তখন সব কিছু বদলে গেল। যারা রক্তের বদলে রক্ত চাইত তারা ইসলামের কারনেই শান্তি সৌহার্দ আর সম্প্রীতির এক অমায়িক বন্ধনে আবদ্ধ হল। যারা ছিল চরম শত্রু তারাই হল পরম বন্ধু। এই হল ইসলাম তথা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ এর ক্ষমতা। আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ

মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহ্‌রাসূল; আর যারা এর সাথে আছে তারা কাফিরদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরে সহানুভূতিশীল...। [সূরা ফাত্‌হ; ৮৪:২৯]

...এবং তোমাদের প্রতি আল্লাহ্‌র যে নেয়ামত রয়েছে তা স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে তখন তিনিই তোমাদের অন্তঃকরণে প্রীতি স্থাপন করেছিলেন, তৎপরে তোমরা তাঁর অনুগ্রহে ভ্রাতৃত্বে আবদ্ধ হলে...। [সূরা আল-ইমরান; ৩:১০৩]

[৩] সুমহান লক্ষ্য অর্জন:

প্রকৃত সুখ-শান্তি অর্জন, পৃথিবীতে খেলাফাত (ইসলামিক কর্তৃত্ব ও শাসন ব্যবস্থা) প্রতিষ্ঠা, ইসলামের বিশুদ্ধ চর্চা এবং সমস্ত রকম বাতিল ও শয়তানি অপশক্তির আক্রমণের বিরুদ্ধে ধৈর্য এবং নিষ্ঠার সাথে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া- এসবের একটিও সম্ভব নয় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ এর বাস্তবিক প্রয়োগ ছাড়া। আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ

তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে সৎকর্ম করে আল্লাহ্‌ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি তাদেরকে পৃথিবীতে খেলাফাত (প্রতিনিধিত্ব) অবশ্যই দান করবেন, যেমন তিনি (প্রতিনিধিত্ব) দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের দ্বীনকে যা তিনি তাদের জন্যে মনোনীত করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে তাদেরকে অবশ্যই নিরাপত্তা দান করবেন; তারা শুধু আমার ইবাদত করবে, আমার সাথে কাউকে শরীক করবেনা, অতঃপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে তারা তো সত্যত্যাগী (ফাসিক) । [সূরা নূর; ২৪:৫৫]

কাজেই আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন উল্লেখিত সুমহান লক্ষ্যসমূহের অর্জনকে আমাদের জন্য শর্তসাপেক্ষ করে দিয়েছেন। অর্থাৎ, আমরা এগুলো কেবল মাত্র তখনই অর্জন করতে সমর্থ হব যখন আমরা শুধু মাত্র এবং কেবলমাত্র তাঁরই ইবাদত এবং আনুগত্য করব, তাঁর দেয়া বিধানকে প্রশ্নাতীতভাবে মেনে চলব এবং তাঁর সাথে কোন শরীক স্থাপন করব না। আর এটাই হল “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ এর নিহিত মর্মার্থ।

আল-ইস্‌তিক্কামাহ্‌, ইস্যু নং-১

পাদটীকাঃ

[১] লা ইলাহা ইল্লালাহ্‌, মানাহা, মাকানাতুহা ওয়া ফাদ্‌লুহা (পৃষ্ঠা নং:৩৬-৩৯) হতে সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত।

*রিপোর্ট করুন

প্রতিদিন ফ্রী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন



'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'। প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

Tagged as: , , , , , , , , , ,
Icon
 
News
Recent Activity
Recommended