মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০১৩

১০ মিনিটের নৃশংসতা

১০ মিনিটের নৃশংসতা ঝটিকা অভিযানে হাজার হাজার তৌহিদী জনতা নিহত ও অসংখ্য আহত দাবি হেফাজতে ইসলাম ও বিএনপি’র
অসংখ্য গুলি, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিয়ে নৃশংস, বর্বর ও ইতিহাসের জঘন্যতম হামলা চালানো হয় হেফাজতে ইসলামের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে
ইনকিলাব রিপোর্ট : রাজধানী মতিঝিলের শাপলা চত্বরকে ঘিরে হেফাজতে ইসলামের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে মধ্যরাতে ঝটিকা অভিযান চালায় র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি’র ১৫ থেকে ২০ হাজার সদস্য। দৈনিক বাংলা ও ফকিরাপুল মোড়সহ তিন দিক থেকে অপারেশন শুরু করা হয়। পরে একযোগে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে অসংখ্য গুলি, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিয়ে নৃশংস, বর্বর ও ইতিহাসের জঘন্যতম হামলা চালানো হয়। তখন ইত্তেফাক মোড় ঘিরে রাখে র‌্যাবের শত শত সদস্য। অভিযানের সময় সশস্ত্র অপারেশনের আওয়াজে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে মতিঝিল ও এর আশপাশের এলাকা। রাত আড়াইটা থেকে শুরু হওয়া এই যৌথ অভিযানে ১০ মিনিটের মধ্যেই হেফাজত ইসলামের প্রায় এক লাখ নেতা-কর্মীকে মতিঝিল থেকে হটিয়ে দেয়া হয়। এ সময় তারা যাত্রাবাড়ি ও ডেমরার দিকে চলে যান। ঝটিকা অভিযানে হাজার হাজার তৌহিদী জনতা নিহত ও অসংখ্য আহত হয়েছেন বলে বিএনপি ও হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা দাবি করেছেন। অভিযানের পর পরই আন্তর্জাতিক মিডিয়াসহ বিভিন্ন ওয়েব সাইটে অভিযানের বিভিন্ন ধরনের ছবি তুলে ধরা হয়েছে। বিভিন্ন ওয়েব সাইটে শত শত লাশের ছবি দেখা গেছে। পুলিশ কন্ট্রোল রুমে বসে পুরো অভিযান পর্যবেক্ষণ করেন আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা। নৃশংস এ অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন র‌্যাবের গোয়েন্দা ইউনিটের প্রধান লেঃ কর্নেল জিয়া, ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মারুফ হাসান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অর্থ) আব্দুল জলিল মন্ডল। অভিযানের সময় এপিসি (আর্মার্ড পার্সোন্যাল কেরিয়ার) থেকেও শত শত রাউন্ড গুলি  ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট শামসুল হক টুকু সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে। সরকার মনে করছে, এ মুহূর্তে কোনো সভা-সমাবেশের অনুমতি দেয়া হলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে। সে জন্যই মধ্যরাত পর্যন্ত সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকারের প্রতিটি বাহিনী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। কোথাও কোনো ধরনের ঘটনা ঘটলে তারা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবে।
হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগর প্রচার সেল প্রধান মাওলানা আহলুল্লাহ ওয়াছেল বলেন, মতিঝিলের শাপলা চত্বরকে ঘিরে হেফাজতে ইসলামের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে মধ্য রাতে নিরীহ জনতার উপর বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তাতে হাজার হাজার জনতার প্রাণ কেড়ে নেয়া হয়েছে। তারা শহীদ হয়েছেন। ২০ সহস্্রাধিক মানুষকে পঙ্গু করেছে। তা ইতিহাসে কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা সাংবাদিকদের বলেন, মতিঝিলে রোববার রাতে অবস্থান নেয়া হেফাজতে ইসলামের ‘সহস্রাধিক’ নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন এবং তাঁদের শত শত লাশ গুম করা হয়েছে। খোকার দাবি, হেফাজতে ইসলামের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার মধ্যরাতে হামলা চালিয়েছে। এটিকে তিনি ‘গণহত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
সূত্র জানায়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রোববার দিবাগত রাত ১২টা থেকেই সতর্ক ও সশস্ত্র অবস্থান গ্রহণ করেন। চরম অভিযানে শীর্ষ কর্মকর্তাদের নির্দেশের অপেক্ষায় ছিলেন তারা। নির্দেশ পাওয়া মাত্রই তারা অ্যাকশনে নামেন। অভিযানে পুলিশের পাশাপাশি অংশ নেয় বিপুল সংখ্যক র‌্যাব ও বিজিবি সদস্য। পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মারুফ হাসান অভিযানের পূর্বে ডিএমপি অ্যাক্টের কোন ধারা অনুযায়ী এবং কিভাবে অভিযান পরিচালিত হবে, কোন কোন ধরনের অস্ত্র এবং যানবাহন ও সামগ্রী ব্যবহার করা হবে এ ব্যাপারে যৌথ বাহিনীকে সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং করেন। সে অনুযায়ী অভিযানে রাবার বুলেট, বুলেট, টিয়ার গ্যাস শেল, পিপার গান এবং সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করার কথা। কিন্তু অভিযানের শুরুর পরপরই দেখা যায়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সাথে থাকা চাইনীজ রাইফেল এবং একে-৪৭ এর মতো অটোমেটিক রাইফেল দিয়েও মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ করছে। আর এর ফলেই হতাহতের সংখ্যা মুহূর্তেই হাজার ছাড়িয়ে যায়।
গতকাল সকালে ফকিরাপুল পেট্রোল পাম্পের বিপরীতের এক আবাসিক হোটেলের ম্যানেজার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তিনি সারা রাত তার ভবনের ছাদে বসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজত খেদাও অভিযান প্রত্যক্ষ করছিলেন। অভিযানের পরপরই তিনি ট্রাকে করে নীল পলিথিনে ঢেকে ট্রাকভর্তি লাশ নিয়ে যেতে দেখেছেন। অনেকেই গোপনে এসব দৃশ্য ভিডিও করেছ্নে। অভিযানের সময় আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সিভিল পোশাকে বেশ কিছু লোকজন অংশ গ্রহণ করে। তারা আহত হেফাজত কর্মীদের উপর নির্মম নির্যাতন চালায় বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, টানা অবস্থানের ঘোষণা দেয়া হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের গভীর রাতে ১০ মিনিটের ঝটিকা অভিযানে মতিঝিল থেকে উৎখাত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত ৫ মে রোববার দিনভর সংঘাতে ১৬জন নিহত হওয়ার পর রাত আড়াইটার দিকে মতিঝিলে ঝটিকা অভিযান শুরু করে র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশ। মূল অপারেশনের আগেই ওই এলাকার ডিস লাইন ও বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন করা হয়। দৈনিক বাংলা ও ফকিরাপুল মোড় থেকে এক যোগে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে অসংখ্য গুলি, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিয়ে নৃশংস, বর্বর ও ইতিহাসের জঘন্যতম হামলা চালানো হয়। তখন ইত্তেফাক মোড় ঘিরে রাখে র‌্যাবের শত শত সদস্য। অভিযানের সময় সশস্ত্র অপারেশনের আওয়াজে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে মতিঝিল ও এর আশপাশের এলাকা। কাঁদানে গ্যাস ও বুলেটে টিকতে না পেরে বিভিন্ন গলিতে ঢুকে পড়েন মতিঝিলে অবস্থানকারীরা।
রাত আড়াইটায় র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশের যৌথ ঝটিকা অভিযানের আগে পুলিশ ও র‌্যাবের কর্মকর্তারা হ্যান্ডমাইকে হেফাজতকর্মীদের মতিঝিল ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করে অবস্থানকারীরা। ১৫ থেকে ২০ হাজার র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশ সদস্য যখন অভিযান শুরু করেন, তখনো প্রায় এক লাখ কর্মীর উপস্থিতিতে সমাবেশ মঞ্চ থেকে বিভিন্ন সেøাগান দেয়া হচ্ছিল, চলছিলো বক্তব্যও। ফকিরাপুল হয়ে নটরডেম কলেজ ও দৈনিক বাংলা থেকে র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশ একযোগে অভিযান শুরু করে ১০ মিনিটের মধ্যে মতিঝিলে শাপলা চত্বরের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তখন ট্রাকের ওপর নির্মিত অস্থায়ী সমাবেশ মঞ্চে হেফাজতের কোনো নেতাকে দেখা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী হাসান জানান, ঝটিকা অভিযানে অংশ গ্রহণকারীরা বৃষ্টির মতো গুলি চালায়। গুলি, টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিয়ে নৃশংস হামলায় নিরস্ত্র হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা টিকতে না পেরে এক পর্যায়ে আর কে মিশন রোডের চৌরাস্তা দিয়ে গোপিবাগ ও টিকাটুলির মোড় দিয়ে ডেমরার দিকে চলে যায়। তখন ইত্তেফাক মোড়ে সশস্ত্র র‌্যাব-বিজিবি অবস্থান করায় কেউ সামনে এগোতে পারেনি।  র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির নির্মম সশস্ত্র হামলার সময় হেফাজত ইসলামের নেত্-াকর্মীরা ইট পাটকেল ছুড়ে মোকাবেলার চেষ্টা করেন। কিন্তু আগ্নেয়াস্ত্রের কাছে তারা টিকতে পারেননি। ঝটিকা অভিযানের সময় অসংখ্য হেফাজত কর্মীকে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
ঝটিকা অভিযানে অংশ নেয়া আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর দু’জন সদস্য দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ঝটিকা অভিযানের আগেই বিপুল সংখ্যক ট্রাক আনা হয়। তাছাড়া অভিযানের পর দ্রুত এলাকা পরিষ্কার করার জন্য সিটি কর্পোরেশনের লোকজনকে অপেক্ষমাণ রাখা হয়। অভিযানের পর পরই তারা মতিঝিল এলাকায় পরিষ্কারের জন্য মাঠে নামেন। প্রাথমিকভাবে অভিযানের বিভিন্ন ধরনের আলামত এবং হতাহতদের রক্তও পরিষ্কার করা হয়। হেফাজতকর্মীরা চলে যাওয়ার পর মতিঝিলের সড়কে অসংখ্য কাগজ, স্যান্ডেল এবং কিছু ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখা যায়। বিভিন্ন স্থানে স্তূপ করে রাখা কাগজে আগুনও জ্বলছিল। পুড়িয়ে দেয়া পাঁচটি গাড়িও দেখা যায় সড়কের পাশে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ঠেকাতে সড়ক বিভাজকের স্টিলের বেড়া ভেঙে সড়কের ওপর আড়াআড়ি করে রেখেছিল হেফাজতকর্মীরা। সেখান থেকে ইট খুলেও তারা টুকরো টুকরো করে রাখে, যা পুলিশের দিকে ছোড়া হয়।
গতকাল ভোর রাতে হেফাজত ইসলামে বেশ কয়েকজন কর্মী জানান, র‌্যাব-পুলিশের অভিযানের মুখে মুহূর্তেই ফাঁকা হয়ে গেল মতিঝিলের শাপলা চত্বর এলাকা। কয়েক স্তরের মানব ঢাল দিয়ে নিরাপত্তা ব্যুহ তৈরি করেও টিকতে পারলো না শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়া হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। মূলত: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মোকাবেলায় এই ব্যুহ তৈরি করেছিল তারা। এর আগে র‌্যাবের গোয়েন্দা প্রধান লে. কর্নেল জিয়াউর আহসান হেফাজতের কর্মীদের শাপলা চত্বর ছাড়ার নির্দেশনা দেন। এ নিয়ে হেফাজতের নেতাদের সঙ্গে তার কথাও হয়। মাইকিং করে সতর্ক করা হয়। এরপর টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ, লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট ও অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করে সরিয়ে দেয়া হয় হেফাজতের কর্মীদের। এ সময় হাজার হাজার নেতা-কর্মী নিহত ও অসংখ্য আহত হয়েছে বলে তাদের দাবি।

হেফাজতে ইসলামের উপর

স্বার্থবাদী মিডিয়া যুবলীগের সন্ত্রাসীদের বাঁচাতে মরিয়াস্টাফ রিপোর্টার : মার্কিন পাদ্রী টেরী জোনস ২০১০ সালে পবিত্র কুরআনে আগুন দেয়ার ফলে বিশ্বের মুসলমানদের হৃদয়ে ক্ষতের সৃষ্টি করে। নানা দেশের মতো প্রতিবাদে ফেটে পড়ে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরাও। আর বাংলাদেশে সেইসব প্রতিবাদ বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন হেফাজতে ইসলামের সাথে যুক্ত হাক্কানী আলেম ও তাদের সমর্থকরা।
অথচ মাত্র তিন বছর পর এ বাংলাদেশেই টেরী জোনসের সেই একই নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। কিন্তু এবার পটভূমি ভিন্ন। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আজ্ঞাবহ এদেশি স্বার্থবাদী কিছু মিডিয়া এ ঘটনার নায়ক যুবলীগ সন্ত্রাসীদের বাঁচাতে মরিয়া। শুধু তাই নয়, তারা এর দায় চাপাতে চাচ্ছে খোদ আলেম ওলামাদের সংগঠন হেফাজতে ইসলামের উপর।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত রোববার বাদ আসর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট দিয়ে বেরিয়ে আসছিল মুসল্লিরা। এসময় পূর্ব থেকেই সেখানে অবস্থান নেয়া যুবলীগ সন্ত্রাসীরা মুসল্লিদের মধ্যে যাদেরকে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী কিংবা আলেম মনে হয়েছে, তাদেরকেই লাঠিসোঁটা দিয়ে বেধরক পেটাতে থাকে। পুলিশ এসময় সন্ত্রাসীদের পাশে নীরব দাঁড়িয়ে থাকে। জীবন বাঁচাতে মরিয়া মুসল্লিরা এ অবস্থায় আর দক্ষিণ গেট মারাননি।
ঠিক তখনই ঘটে চরম অঘটন। যুবলীগ সন্ত্রাসীরা দক্ষিণ গেটের ফুটপাতে বন্ধ থাকা ইসলামী বই ও কোরআন শরীফের দোকানে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া তারা ১৫-২০টি জুতার দোকানেও তারা একইভাবে আগুন দেয়। সংঘর্ষ পরিস্থিতির কারণে রোববার বন্ধ ছিলো ফুটপাতের এসব দোকান। মোড়ানো ছিলো পলিথিন দিয়ে। আগুনের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে গোটা এলাকা। প্যান্ট-গেঞ্জির দোকান ছাড়াও এসময় পুড়ে যায় কোরআন শরীফসহ বিভিন্ন ধর্মীয় পুস্তকের দোকান।
এসময় সেখানে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক এবং সেই দোকানগুলোর দু’একজন মালিকও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু অস্ত্র হাতে দাড়িয়ে থাকা সন্ত্রাসী এবং পুলিশের ভয়ে কেউ প্রতিবাদের সাহস পায়নি।
এদিকে গতকাল বিএনপি’র সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে বলা হয় যে, বায়তুল মোকাররম মসজিদে অবস্থিত বই এর দোকানে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা দেবাশীষের নেতৃত্বে লুটপাট এবং পবিত্র কোরান শরীফসহ ধর্মীয় গ্রন্থসমূহে অগ্নিসংযোগ করা হয়। যা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার খবরে দেবাশীষের ছবিসহ প্রচার করা হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাস্তব প্রমাণ সত্ত্বেও উক্ত ঘটনা হেফাজতে ইসলাম করেছে বলে অপপ্রচার চালিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আর এরপরই সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আজ্ঞাবহ এদেশি স্বার্থবাদী কিছু মিডিয়া এ ঘটনার নায়ক যুবলীগ সন্ত্রাসীদের বাঁচাতে মাঠে নেমে পড়ে। ইসলামের সাথে যুক্ত কোন বিষয়ে যারা সর্বদাই নিরাসক্ত এখন ঢালাওভাবে হেফাজতের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নাস্তিকদের রক্ষা করার চেষ্টায় লিপ্ত সেই মিডিয়াগুলো। কিন্তু তারা এসব সংবাদে একটি প্রমাণও উপস্থাপন করছে না। পত্রিকা এবং টেলিভিশনে এ ঘটনার ফুটেজ দেখে অপরাধীদের বের করারও কোন চেষ্টা দেখা যাচ্ছে না সংশ্লিষ্টদের। অথচ বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেলে পল্টন এলাকায় জিন্সের প্যান্ট ও গেঞ্জী পরিহিত এবং হেলমেট মাথায় দেয়া লম্বা শারিরীক গঠনের কয়েক যুবককে হাতে পেট্রোলের বোতল নিয়ে বইয়ের দোকানগুলোতে আগুন দেয়ার ফুটেজ প্রচার করা হয়েছে। 
অপরদিকে সরকারও হেফাজতের ঘাড়ে এ ঘটনার দায় চাপানোর জন্য পুরো মতিঝিল, পল্টন এবং বিজয়নগরের পোড়া সামগ্রী এবং আবর্জনা পরিষ্কার করে ফেললেও গতকাল বিকেল পর্যন্ত আগুনে পোড়া কুরআনের অবশিষ্টাংশ রেখে দেয়। আবার বিভিন্ন টিভি মিডিয়াকে আমন্ত্রণ করে এনে সংবাদ তৈরি করতে থাকে। সেখানে এমনসব লোকের মতামত নিতে থাকে যারা ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিল না। এর মাধ্যমে ঐসব মিডিয়া আলেমদের বিরুদ্ধে জনগণকে খেপিয়ে তোলার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে।

সোমবার, ৬ মে, ২০১৩

কি চাও

Norul Abcar shared কম্বল চোর আওয়ামিলীগ ও বিশ্ব চোর আওয়ামিলীগ's photo.
আমি কাঁদিতে চাহিয়া, কাঁদতে পারিনি। করিতে পারিনি চিৎকার…

আমি দেখিনি ২৫ মার্চের কালো রাত্রি কিন্তু দেখেছি ৫ মের আওয়ামী নরপশুদের হত্যাকান্ড.… কী দোষ করেছি আমরা। একটি সরকার গুটি কয়েক নাস্তিকদের বাঁচানোর জন্যে সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানদের উপর হায়েনার মত গুলি করছে… হে আল্লাহ, আমরা তোমার দ্বীন ইসলামকে প্রতিষ্টার জন্যে লড়াই করছি, তুমি আমাদের এ জালিম, মুনাফিকদের হাত থেকে রক্ষা করো। আমাদেরকে শক্তি দাও, হিকমত দাও..… আমরা তোমার কুদরতি সাহায্যের অপেক্ষায়..

Masoud Mohammed

Shahadat Hossain shared বাংলার বাঘ. বেচে থাক's photo.
Masoud Mohammed
[প্লীজ এড়িয়ে যাবেন না! এক মিনিট বিরতি দিয়ে হলেও এই লিখাটি পড়ুন]

দেশের এই ক্রান্তিকালে সেনাবাহিনীর নিরবতা দেখে আমি যতটা না অবাক হয়েছি, তার চেয়ে বেশি দুঃখ পেয়েছি! ক্ষোভের আগুনও জ্বলছে বুকে এই কাপুরুষ নিয়ে আমরা এতদিন গর্ব করতাম! আফসোস হচ্ছে! ভীষণ আফসোস হচ্ছে!

সাভার ট্রাজেডির সামান্য কিছুদিন আগেও আমাদের এলাকার এক ছোট ভাইকে আমি বলেছিলাম, দেশে সামরিকবাহিনীর মধ্যে একমাত্র খাঁটি দেশপ্রেমিক থাকলে আমাদের সেনাবাহিনী-ই আছে!

অথচ এই দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর নিরবতাতেই ঘটে গেলো এদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণ হত্যা! আফসোস আমাদের বুঝতে দেরি হয়েছে যে সেনাবাহিনীও সরকারের পা চাটা গোলাম!

আসলে আমাদের সেদিনই বোঝা উচিত ছিল, যেদিন তারা বলেছিলো, হাসিনার উৎসাহেই তারা সাভারের রানা প্লাজার উদ্ধার তৎপরা চালাতে মনের জোর পেয়েছিলো!

হে প্রিয় দেশবাসী! একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারো উপর ভরসা করে বসে থাকলে আমরা বিরাট ভুল করবো! ইসলাম টিকিয়ে রাখতে, ঈমান বাঁচাতে ও দেশ থেকে আগাছাগুলো পরিষ্কার করতে আমাদেরকে উচিত রাজপথে নেমে পড়া।

ভয় নেই। আল্লাহ আমাদের সাথেই আছেন।
Masoud Mohammed
[প্লীজ এড়িয়ে যাবেন না! এক মিনিট বিরতি দিয়ে হলেও এই লিখাটি পড়ুন]

দেশের এই ক্রান্তিকালে সেনাবাহিনীর নিরবতা দেখে আমি যতটা না অবাক হয়েছি, তার চেয়ে বেশি দুঃখ পেয়েছি! ক্ষোভের আগুনও জ্বলছে বুকে এই কাপুরুষ নিয়ে আমরা এতদিন গর্ব করতাম! আফসোস হচ্ছে! ভীষণ আফসোস হচ্ছে!

সাভার ট্রাজেডির সামান্য কিছুদিন আগেও আমাদের এলাকার এক ছোট ভাইকে আমি বলেছিলাম, দেশে সামরিকবাহিনীর মধ্যে একমাত্র খাঁটি দেশপ্রেমিক থাকলে আমাদের সেনাবাহিনী-ই আছে!

অথচ এই দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর নিরবতাতেই ঘটে গেলো এদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণ হত্যা! আফসোস আমাদের বুঝতে দেরি হয়েছে যে সেনাবাহিনীও সরকারের পা চাটা গোলাম!

আসলে আমাদের সেদিনই বোঝা উচিত ছিল, যেদিন তারা বলেছিলো, হাসিনার উৎসাহেই তারা সাভারের রানা প্লাজার উদ্ধার তৎপরা চালাতে মনের জোর পেয়েছিলো!

হে প্রিয় দেশবাসী! একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারো উপর ভরসা করে বসে থাকলে আমরা বিরাট ভুল করবো! ইসলাম টিকিয়ে রাখতে, ঈমান বাঁচাতে ও দেশ থেকে আগাছাগুলো পরিষ্কার করতে আমাদেরকে উচিত রাজপথে নেমে পড়া।

ভয় নেই। আল্লাহ আমাদের সাথেই আছেন।

অপারেশন ফ্রিডম


গতরাতে মতিঝিল ‘অপারেশন ফ্রিডম' নামক গণহত্যার বিবরণঃ
(Exclusive News...By News & Entertainment)
(১০০% সঠিক সংবাদ, সুত্রঃ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কয়েকজন পুলিশ,
আল্লাহর কসম প্রতিটি লাইন সেই পুলিশদের বলা)

অপারেশনঃ
গতকাল রাতের গনহত্যায় মৃতেরসংখ্য‍া ২৫০০ (আড়াই হাজার) এরও বেশি,
গনহত্যায় অংশ নেয় র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও প্রফেশনাল শুটার এর দল...
প্রফেশনাল শুটারদের কথা সাধারন মানুষ জানতেই পারেনি.....
কারন, প্রফেশনাল শুটাররা সব উচু ভবনের ছাদে ছিল, এবং তারা ব্যবহারকরেছে স্নেইপার রাইফেল, যা বাংলাদেশের কোন বাহিনী এই প্রথম ব্যবহার করল....
র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবির কয়েকটি টিম একসাথে ব্রাশফায়ার করা শুরু করে....
ঠিক একই সময়ে প্রফেশনাল শুটাররা স্নেইপার রাইফেল দিয়ে বুক ও মাথা তাক করে গুলি করে...
একই সাথে চলে টিয়ার শেল, গরম পানি ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ..
বেশিরভাগ হেফাজত কর্মীরা ঘুমিয়ে থাকায় হঠাত চতুর্মুখি আক্রমনে দিগ্বিদিক ছুটতে থাকে হেফাজতকর্মীরা...কিছু হেফাজত কর্মী প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেওব্রাশ ফায়ার ও স্নেইপার রাইফেলেরগুলিতে তাদের চেষ্টা নিমেষেই ব্যর্থ হয়..
সাজোয়া যান নিয়ে যৌথ বাহিনী হেফাজতের বাধ ভেঙে ঢুকে যায় সমাবেশের মধ্যে....
প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়ে হেফাজত কর্মীরা বিভিন্ন ভবনেঢুকে যায়, আবার কেউ রাস্তা দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে....
রাস্তা দিয়ে যারা পালাতে চেষ্টা করে তারা ব্রাশ ফায়ারের সামনে পড়ে বেশির ভাগই স্পটে মারা যায়, কেউ কেউ পালাতে সক্ষম হয়.....
এই হলো সংক্ষেপে দেড় ঘন্টার নৃশংস অভিযান...
যতদুর জানা যায়, কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি, অর্ডার ছিলো সরাসরি মেরে ফেলার.....।।।

লাশ কোথায়ঃ
মোট ৯ টি ট্রাকে করে লাশ নেয়া হয় এবং তুরাগসহ ৩টি নদীতে ভাগ ভাগ করে ফেলা হয়...

বর্তমান পরিস্থিতিঃ
সরকারের পক্ষ থেকে যৌথ বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন পালিয়ে যাওয়া
হেফাজত কর্মীরা বাড়ী ফিরতে না পারে....
এই উদ্দেশ্যে মাদারীপুরে অবস্থান নিয়েছে আর্মড পুলিশের টিম...
ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে আরেকটিটিম থাকার কথা আছে....
গনহত্যা শেষ হয়নি, আরো চলবে...সব মাদ্রাসায় চলবে অভিযান.....।

আর্মড পুলিশের যে ৩জন সদস্যএই তথ্য দিয়েছেন তারা গতকাল উপস্থিতছিলেন গনহত্যার স্পটে, তারা ছিলেন ব্যথিত, মর্মাহত....
তারা দেখেছেন বেশ কিছু কনস্টেবল পর্যায়ের পুলিশের চোখের পানি, কারো কিছুই করার ছিলনা, কারন সরকারের নির্দেশ মানতে তারা বাধ্য । তবে সরকারকেন তাদের গনহত্যার নির্দেশ দিলো সে সম্পর্কে তারা সন্দিহান । তদের ধারনা এটা ভারতের নির্দেশ........ ­­ ­..
collected
গতরাতে মতিঝিল ‘অপারেশন ফ্রিডম' নামক গণহত্যার বিবরণঃ
(Exclusive News...By News & Entertainment)
(১০০% সঠিক সংবাদ, সুত্রঃ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কয়েকজন পুলিশ,
আল্লাহর কসম প্রতিটি লাইন সেই পুলিশদের বলা)

অপারেশনঃ
গতকাল রাতের গনহত্যায় মৃতেরসংখ্য‍া ২৫০০ (আড়াই হাজার) এরও বেশি,
গনহত্যায় অংশ নেয় র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও প্রফেশনাল শুটার এর দল...
প্রফেশনাল শুটারদের কথা সাধারন মানুষ জানতেই পারেনি.....
কারন, প্রফেশনাল শুটাররা সব উচু ভবনের ছাদে ছিল, এবং তারা ব্যবহারকরেছে স্নেইপার রাইফেল, যা বাংলাদেশের কোন বাহিনী এই প্রথম ব্যবহার করল....
র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবির কয়েকটি টিম একসাথে ব্রাশফায়ার করা শুরু করে....
ঠিক একই সময়ে প্রফেশনাল শুটাররা স্নেইপার রাইফেল দিয়ে বুক ও মাথা তাক করে গুলি করে...
একই সাথে চলে টিয়ার শেল, গরম পানি ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ..
বেশিরভাগ হেফাজত কর্মীরা ঘুমিয়ে থাকায় হঠাত চতুর্মুখি আক্রমনে দিগ্বিদিক ছুটতে থাকে হেফাজতকর্মীরা...কিছু হেফাজত কর্মী প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেওব্রাশ ফায়ার ও স্নেইপার রাইফেলেরগুলিতে তাদের চেষ্টা নিমেষেই ব্যর্থ হয়..
সাজোয়া যান নিয়ে যৌথ বাহিনী হেফাজতের বাধ ভেঙে ঢুকে যায় সমাবেশের মধ্যে....
প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়ে হেফাজত কর্মীরা বিভিন্ন ভবনেঢুকে যায়, আবার কেউ রাস্তা দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে....
রাস্তা দিয়ে যারা পালাতে চেষ্টা করে তারা ব্রাশ ফায়ারের সামনে পড়ে বেশির ভাগই স্পটে মারা যায়, কেউ কেউ পালাতে সক্ষম হয়.....
এই হলো সংক্ষেপে দেড় ঘন্টার নৃশংস অভিযান...
যতদুর জানা যায়, কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি, অর্ডার ছিলো সরাসরি মেরে ফেলার.....।।।

লাশ কোথায়ঃ
মোট ৯ টি ট্রাকে করে লাশ নেয়া হয় এবং তুরাগসহ ৩টি নদীতে ভাগ ভাগ করে ফেলা হয়...

বর্তমান পরিস্থিতিঃ
সরকারের পক্ষ থেকে যৌথ বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন পালিয়ে যাওয়া
হেফাজত কর্মীরা বাড়ী ফিরতে না পারে....
এই উদ্দেশ্যে মাদারীপুরে অবস্থান নিয়েছে আর্মড পুলিশের টিম...
ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে আরেকটিটিম থাকার কথা আছে....
গনহত্যা শেষ হয়নি, আরো চলবে...সব মাদ্রাসায় চলবে অভিযান.....।

আর্মড পুলিশের যে ৩জন সদস্যএই তথ্য দিয়েছেন তারা গতকাল উপস্থিতছিলেন গনহত্যার স্পটে, তারা ছিলেন ব্যথিত, মর্মাহত....
তারা দেখেছেন বেশ কিছু কনস্টেবল পর্যায়ের পুলিশের চোখের পানি, কারো কিছুই করার ছিলনা, কারন সরকারের নির্দেশ মানতে তারা বাধ্য । তবে সরকারকেন তাদের গনহত্যার নির্দেশ দিলো সে সম্পর্কে তারা সন্দিহান । তদের ধারনা এটা ভারতের নির্দেশ........ ­­ ­..
collected

হেফাজত কালরাত্রী০১


আমার পেশাগত জীবনের দীর্ঘ ১৪ বছরের মধ্য গতরাতের মতো এতো কঠিন পরিস্থিথির মুখে কোনদিন পড়িনি। জীবনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একাধিকবার ভয়ানক দুষ্কৃতিকারীদের সাথে গোলাগুলি করেছি । কিন্তু একবারও হাত কাঁপেনি। একবারও মনের মাঝে অপরাধবোধ কাজ করেনি । কিন্তু গতরাতের অবস্থা ছিল পুরোটা ভিন্ন ।
আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করতে গিয়ে আমাদের অনেক সময় মানুষ থেকে কুকুরে পরিনত হতে হয় । কারন পশু না হলে আপনি আপনার দায়িত্ব পালন করতে সবসময় পারবেন না । দায়িত্ব পালন ঠিক মতো না হলে বউ বাচ্চা নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে । ঠিক যেমনটি হতে হয়েছিল গতকাল । একটি শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিলাম যা সারা জীবন হয়তো আমাকে তাড়া করবে যার নাম ‘অপারেশন ফ্রিডম ‘, অপারেশন ফ্রিডমের একটা মোহড়া গতকালেই আমরা দিয়ে দিলাম যা সবাইকে সংক্ষেপে একটু বলি ।
বিকালে একদিকে হেফাজত কর্মীদের দোকানপাট, রাস্তাঘাটে লাগানো আগুন নিভাচ্ছিলাম অন্যদিকে হেফাজত কর্মীদের মতিঝিল থেকে যে কোন মূল্য সরিয়ে দেয়ার জন্য ভয়াবহ আগুন জ্বালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম । রাত ২.৩০ মিনিট । একটা যুদ্ধের প্রস্তুতির মতোই ভারী অস্রসস্র নিয়ে আমরা সংখ্যায় তিন বাহিনী মিলে ১০/১১ হাজার মানুষ পলটন থেকে মতিঝিলে যাওয়া শুরু করলাম । পল্টনে দেখা মিললো বিএনপি, ছাত্রদলের শো দুয়েক কর্মীর। যাদের সবাইকে পল্টন ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হলো । আমাদের রণসাজ দেখে ঐ শো দুয়েক কর্মী কোনরকম বাৎচিত করার সাহস পেলো না। মতিঝিলে প্রবেশের তিনটি পথ বন্ধ করে দিয়ে শুধুমাত্র টিকাটুলি যাওয়ার রাস্তা খোলা রাখলাম । হেফাজতের মঞ্চ থেকে মাইকে তখন ‘আল্লাহ ,আল্লাহ ‘ জিকির শোনা যাচ্ছিল । অপারেশন কমান্ডার হ্যান্ড মাইকে হেফাজত কর্মীদের মতিঝিল থেকে সরে যেতে অনুরোধ করলেন । কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে সরে না যাওয়ার ঘোষণা আসলো। এরপর আর কোন সুযোগ না দিয়ে তিনদিক থেকে ঘিরে রাখা সবাই একসাথে চোখ বন্ধ করে গুলি করা শুরু করলাম। সবার বন্দুকের নল বুক বরাবর তাক করা। আমি প্রথম ১/২ মিনিট বুক বরাবর নল তাক করে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে সামনের দিকে এগোতে লাগলাম অন্য সবার মতো । এরপর নিজের বন্দুকের নলটি আরেকটু নিচের দিকে নামিয়ে পা বরাবর গুলি করতে লাগলাম হয়তো কোন বিবেকের তাড়নায় । ১৫/২০ মিনিট অবিরাম গুলিবর্ষণ চলতে লাগলো কমান্ডারের পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত । কত শত /হাজার রাউনড গুলি ছোড়া হয়েছে তার কোন হিসাব নেই , হিসাব মেলানোও যাবে না । কারন তখন আমরা ১০ হাজার মানুষ থেকে ১০ হাজার পশু ছিলাম । হেফাজত কর্মীরা শাপলা চত্বর থেকে পিছু হটে টিকাটুলি , হাটখোলার বিভিন্ন গলিতে ঢুকে গেলো । আমাদের অবিরাম গুলিও বন্ধ হয়ে গেলো । শাপলা চত্বর নির্দেশ মোতাবেক নিজেদের দখলে নিলাম । যখন গুলি থামলো তখন ধোঁয়াচ্ছন্ন চারদিক। ধোঁয়া সরে যখন একটু পরিস্কার হলো তখন দেখি শত শত নিথর দেহ, স্যান্ডেল , টুপি, ব্যাগ, পানির বোতল আর রক্ত । নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে নিলাম । কতশত নিহত আর কতশত আহত হয়েছে তা গোনার সময় নেই , কারন যত কিছুই ঘটুক তা এই রাতের আধারেই ধুয়ে মুছে শেষ করতে হবে । সময় খুব কম । তাই বারবার তাগাদা আসছিল সব ধুয়ে মুছে পরিস্কার করার জন্য । মাঝে মাঝে নিজের বন্দুকের নলটি নিজের বুকের মাঝে তাক করছিলাম প্রচণ্ড ঘৃণায় , ক্ষোভ নিয়ে । কতজন নিহত হবে ? ১০০/৫০০/১০০০ বা তারও অনেক বেশি ? কিভাবে হিসাব করে? কার কি আসে যায়? আমি আমার চেয়ারে থাকতে পারলেই তো হলো । এই চেয়ার আমার, আমার বাপদাদার সম্পত্তি। এই চেয়ার আমি কাউকে দিবো না , কাউকে দিবো না । তার জন্য যদি আমাকে আরও লক্ষ লাশ ফেলতে হয় আমি ফেলবো । পশুদের এই রাজত্বে আমি একটি মানুষকেও রাখবো । শুধু থাকবে পশু আর আমি থাকবো সেই পশুদের রাজা ‘পশুরাজ’ হয়ে আমৃত্যু পর্যন্ত । আমার শুধু ভয় একটাই তা হলো ‘যে আগুন জ্বালিয়ে দিলাম সেই আগুন যদি পশুদের এই রাজত্বকেও জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় ‘ তখন কি হবে ? জানিনা, জানতেও চাইনা ।http://www.parisvisionnews.com/2011-07-14-13-36-49/69-political-news/7020-2013-05-06-16-09-59.html#.UYfXEbTCjBZ.facebook

বৃহস্পতিবার, ২ মে, ২০১৩

৫ ই মে যোগ দাও

লংমার্চের মতো যদি ৫ই মে'র ঢাকা অবরোধ সফল করা যায়, তবে এদেশে নাস্তিক্যবাদ ও ইসলাম বিদ্বেষীদের চূড়ান্ত মৃত্যুঘন্টা বেজে যাবে ইনশাআল্লাহ। তবে লংমার্চের বাধা আর অবরোধের বাধা একটু ভিন্ন ধরণের।

তখন সরকার চেয়েছিল জনবিচ্ছিন্ন শাহবাগীদের দিয়ে লংমার্চ ঠেকাতে, এবার মাঠে নামিয়েছে মাজার পুজারী গ্রুফকে। তবে আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, মাজারপুজারী গ্রুফের বাধা ধোপে টিকবে না ইনশাআল্লাহ। একেতো ওদের সংখ্যা খুবই নগন্য, দ্বিতীয়ত চট্রগ্রাম ছাড়া অন্য কোথাও তাদের তেমন কোন সংগঠিত শক্তি নেই। আর সেজন্যই পঁচা শামুকে যেন পা না কাটে সিদিকে লক্ষ রাখা দরকার হেফাজতের। মাজারপুজারী গ্রুফের সাথে সংঘর্ষ এড়ানোর সর্বাত্মক চেষ্টা থাকা দরকার আমাদের।

কারণ, ওরা সামান্য গোলমাল বাধিয়ে দিতে পারলেই তাদের দালাল মিডিয়া অপপ্রচার করবে যে, ধর্মীয় গোষ্ঠিই দেশে অশান্তি সৃষ্টি করছে। সুতরাং আক্রমনাত্মক ভূমিকায় না থেকে আমাদেরকে আত্মরক্ষার ভূমিকায় থাকতে হবে। মনে রাখা দরকার, এই আন্দোলনের মূল ও প্রধান লক্ষ একটাই- আর সেটা হলো ইসলাম যেন এদেশে মাথাউঁচু করে থাকে। ইসলামের বিরোদ্ধে সংঘবদ্ধ অপপ্রচারণা ও ষড়যন্ত্রের খেলা যেন বন্ধ হয়। এই মহত উদ্দেশ্যের সাথে জড়িতদের আমি এযুগের শ্রেষ্ঠ মুজাহিদ মনে করি। এই আন্দোলনের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারা গর্বের।

হাটহাজারীতে ফোন করে জানতে পেরেছি, অবস্থা বেগতিক হলে অবরোধ স্থায়ী করার চিন্তাভাবনা করছেন হেফাজত নেতৃবৃন্দ। সুতরাং সকলের উচিত দীর্ঘ মেয়াদী প্রস্তুতি নিয়ে অবরোধে অংশগ্রহণ করা। ঢাকা ও ঢাকার উপশহরবাসীদের উচিত, আগতদের জন্য ফান্ড সংগ্রহ করে শুকনো খাবার ও পানির ব্যবস্থা করা। আর হ্যঁ, আত্মরক্ষার লাঠি সাথে আনার যে আহবান করা হয়েছে, সেটা এখন থেকেই প্রস্তুত করা দরকার। ইনশাআল্লাহ চিরদুর্বলচিত্তের বাতিলের চোখে সেই লাঠিই হবে খালিদ বিন ওয়ালিদের তরবারী।

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৩

ছাত্রলীগের দেহ ব্যবসা

Zahadur Rahman added a new photo.
Photo

mojiborer fas kotha

photo.
এই তথ্যগুলো মার্কিন দূতাবাস তাদের ফরেন অ্যাফেয়ার্সে পাঠায়।

সারসংক্ষেপঃ জানুয়ারী ২৫,১৯৭৫ তারিখের সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাশের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান এখন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট। এই আমূল (sweeping) পরিবর্তন হয় নামকা-ওয়াস্তে (minuscale) বিরোধীদলের ওয়াক-আউটের মধ্য দিয়ে, কোন প্রকার আলোচনা ছাড়াই। সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি এবং একটি মন্ত্রীপরিষদ সম্বলিত সরকারব্যাবস্থা চালু হয়। মন্ত্রীপরিষদ সদস্য হবার জন্য পার্লামেন্টের সদস্য হওয়া জরুরূ ছিল না। সংশোধনীর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের একক এবং নিরংকুশ ইচ্ছায় সকল রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে একটি মাত্র দল গঠন করার বিধান রাখা হয়েছে। আইন পাশ হওয়ার সাথে সাথেই স্বয়ংক্রিয়ভাবেই মুজিব পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট বনে যান, জাতীয় সংসদের মেয়াদও পাঁচ বছর বেড়ে যায়। দেশের সমস্যা এবং শিক্ষিত সমাজের দুর্নীতি-অনিয়ম মোকাবিলায় ব্যবস্থার পরিবর্তন জরুরী ছিল বলে মুজিব সাফাই দেন।

পরের সপ্তাহে জাতীয় সংসদও আজকে রুটিনমাফিক জরুরী আইন অনুমদন করে প্রেসিডেন্টের গত সপ্তাহে গৃহীত পদক্ষেপকে বৈধতা দিয়েছে।
END SUMMARY
১,একটি সুপরিকল্পিতভাবে সাজানো দুঘন্টার অধিবেশনে জাতীয় সংসদে ২৫ জানুয়ারি সকালে প্রথমে প্রেসিডেন্টের গতমাসের আদেশকে বৈধতা দিয়ে একটি জরূরী আইনের বিল পাশ করে। দ্রুত উত্থাপিত এবং পাশকৃত চথুর্থ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। আলোচনার সুযোগ না পাওয়ায় বিরোধীদল ওয়াক-আউট করে; এর ফলে দুইবারের ভোটাভুটির পরও সংশোধনীটি ২৯২-০ ভোটে পাশ হয়েছে বলে ধরা হয়। মুজিবের, যিনি ইতমধ্যেই স্বতসিদ্ধভাবে একটিমাত্র অধিবেশনের মাধ্যমে সংশোধনীর যুগপৎ পাশ ও কার্যকরিতার বলে প্রেসিডেন্ট হয়ে গিয়েছিলেন, শপথ অনুষ্ঠিত হওয়া নির্ধারিত হয়েছে দুপুরে অনির্দিষ্টকালের জন্য সংসদ মুলতবি করে দেয়ার পরপরই, এক সংক্ষিপ্ত গোপন শপথ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ।
সংবিধানের মূল পরিবর্তন গুলো নিম্নরূপঃ

২,রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতিঃ পার্ট ৪, চ্যাপ্টার ১, নির্বাহী বিভাগ, এবং চ্যাপ্টার দুই, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীসভা-কে দুটি নতুন অধ্যায় দিয়ে স্থানচ্যুত করা হয়েছে যে অধ্যায়গুলোর নাম হচ্ছে ‘রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতি’ এবং ‘কাউন্সিল-অব-মিনিস্টারস’,রাষ্ট্রপতি(and head of the state) নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হবার কথা থাকলেও, শেষ আর্টিকেলের একটি বিশেষ ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে যার মাধ্যমে বর্তমান রাষ্ট্রপতি (মোহাম্মাদুল্লাহ) অভিসংসিত বলে গন্য হবেন এবং তদস্থলে মুজিবুর রহমান নির্বাচিত হয়েছেন বলে ধরা হবে। উপ-রাষ্ট্রপতি নিয়গ দেবেন রাষ্ট্রপতি, দুজনের মেয়াদই পাঁচ বছর, তাদের কেউই সংসদ সদস্য হতে পারবেন না (মুজিব আজকেই তার সংসদ সদস্য পদে ইস্তফা দিয়েছেন ),দাপ্তরিক কাজের জন্য প্রেসিডেন্ট বা ভাইস-প্রেসিডেন্ট কার কাছে জবাবদিহি করবেন না,অযোগ্যতার দায়েও পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্টকে অভিসংশিত বা বরখাস্ত করতে পারবে না , প্রেসিডেন্ট বা ভাইস-প্রেসিডেন্ট এর যেকোন একজন ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় স্পিকার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না। প্রজাতন্ত্রের সকল নির্বাহি ক্ষমতা প্রেসিডেন্ট প্রয়োগ করবেন এবং সাজা মওকুফ ও দন্ড পরিবর্তনের সকল ক্ষমতা তার হাতে থাকবে।
৩,দি কাউন্সিল অব মিনিস্টারসঃ
প্রেসিডেন্ট নিয়গকৃত এবং তার খেয়াল-খুশিমত একতি মন্ত্রীপরিষদ থাকবে যারা তাকে সাহায্য করবে এবং সীমিত ক্ষাত্রে পরামর্শ দেবে।

প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত এবং তার পারিষদের মত কোন কোর্ট চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না। একজন প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রীরা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি এবং প্রতিমন্ত্রী, যদি প্রয়োজন হয় তাহলে এম.পি. দের মধ্য থেকে বা এম.পি. হবার যোগ্য এমন কার মধ্য থেকে ন্যগকৃত হবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অন্যান্য প্রতিমন্ত্রীরা কাউন্সিলের সদস্য হবেন না। সকল মন্ত্রীরাই পার্লামেন্তে কথা বলতে পারবেন, যারা এম.পি. কেবল তারা ভোট দিতে পারবেন।
৪,লোকাল গভর্ন্মেন্টঃ সংশধনী লোকাল গভর্নমেন্টের ধারনা বিলুপ্ত করে এবং এখানে অন্য কিছু প্রতিস্থাপনও করে নি।
৫,দি পার্লামেন্টঃ এই সংশোধনী পার্লামেন্টের দ্বারা সরকারকে সমালচনার ক্ষমতা একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে। যদি কেউ দল থেকে পদত্যাগ করে তাহলে পার্লামেন্টে তার আসনও ছাড়তে হবে, এই বিধানের সাথে যুক্ত হয়েছে যদি কোন এম.পি. ভট দেয়া থেকে বিরত থাকে বা ভোটের সময় পার্টির অনুমতি ছাড়া সঙ্গসদে অনুপস্থিত থাকে তাহলে ধরে নেয়া হবে তিনি পার্টির বিরুদ্ধ মতে পার্লামেন্টে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ১২০
দিনের মধ্যে পার্লামেণ্ট আবার মিলিত হবে এই বিধান বাদ দিয়ে বছরে যে কোন সময় দুইবার অধিবেশন ডাকলেই যথেষ্ট হবে বলে দেয়া হয়েছে।
৬,জুডিশীয়ারীঃ আগের মত এখনব আর বিচারক বা ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতিকে সুপ্রিমকোর্টের প্রধানবিচারপতির পরামর্শ নিতে হবে না;ল তনি যাকে ইচ্ছা নিয়োগ দেবেন। ট্রাইব্যুনালগুলকে হাইকোর্টের নিয়ন্ত্রন থেকে মুক্ত করা হয়। আইন বিভাগের সকল কর্মকর্তা, কর্মচারি এবং ম্যাজিষ্ট্রেটরা সুপ্রিমকোর্ট নয়, বরং তাদের আচরন ও শৃংখলার জন্য প্রেসিডেন্টের কাছে দায়ি থাকবেন। যদিও এক জায়াগায় বলা হয়েছে,
---
“বিচারকরা বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগে স্বাধীন থাকবেন। এখন থেকে প্রেসিডেন্ট যে কোন বিচারককে দুর্ব্যবহার বা অযোগ্যতার দায়ে পদচ্যুত করতে পারবেন।”যদিও এর আগে বিচারককে পদচ্যুত করতে সংসদের দু-তৃতিয়াংশ এর অনুমোদন লাগত।

source=>
https://www.wikileaks.org/plusd/cables/1975DACCA00457_b.html
এই তথ্যগুলো মার্কিন দূতাবাস তাদের ফরেন অ্যাফেয়ার্সে পাঠায়।

সারসংক্ষেপঃ জানুয়ারী ২৫,১৯৭৫ তারিখের সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাশের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান এখন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট। এই আমূল (sweeping) পরিবর্তন হয় নামকা-ওয়াস্তে (minuscale) বিরোধীদলের ওয়াক-আউটের মধ্য দিয়ে, কোন প্রকার আলোচনা ছাড়াই। সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি এবং একটি মন্ত্রীপরিষদ সম্বলিত সরকারব্যাবস্থা চালু হয়। মন্ত্রীপরিষদ সদস্য হবার জন্য পার্লামেন্টের সদস্য হওয়া জরুরূ ছিল না। সংশোধনীর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের একক এবং নিরংকুশ ইচ্ছায় সকল রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে একটি মাত্র দল গঠন করার বিধান রাখা হয়েছে। আইন পাশ হওয়ার সাথে সাথেই স্বয়ংক্রিয়ভাবেই মুজিব পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট বনে যান, জাতীয় সংসদের মেয়াদও পাঁচ বছর বেড়ে যায়। দেশের সমস্যা এবং শিক্ষিত সমাজের দুর্নীতি-অনিয়ম মোকাবিলায় ব্যবস্থার পরিবর্তন জরুরী ছিল বলে মুজিব সাফাই দেন।

পরের সপ্তাহে জাতীয় সংসদও আজকে রুটিনমাফিক জরুরী আইন অনুমদন করে প্রেসিডেন্টের গত সপ্তাহে গৃহীত পদক্ষেপকে বৈধতা দিয়েছে।
END SUMMARY
১,একটি সুপরিকল্পিতভাবে সাজানো দুঘন্টার অধিবেশনে জাতীয় সংসদে ২৫ জানুয়ারি সকালে প্রথমে প্রেসিডেন্টের গতমাসের আদেশকে বৈধতা দিয়ে একটি জরূরী আইনের বিল পাশ করে। দ্রুত উত্থাপিত এবং পাশকৃত চথুর্থ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। আলোচনার সুযোগ না পাওয়ায় বিরোধীদল ওয়াক-আউট করে; এর ফলে দুইবারের ভোটাভুটির পরও সংশোধনীটি ২৯২-০ ভোটে পাশ হয়েছে বলে ধরা হয়। মুজিবের, যিনি ইতমধ্যেই স্বতসিদ্ধভাবে একটিমাত্র অধিবেশনের মাধ্যমে সংশোধনীর যুগপৎ পাশ ও কার্যকরিতার বলে প্রেসিডেন্ট হয়ে গিয়েছিলেন, শপথ অনুষ্ঠিত হওয়া নির্ধারিত হয়েছে দুপুরে অনির্দিষ্টকালের জন্য সংসদ মুলতবি করে দেয়ার পরপরই, এক সংক্ষিপ্ত গোপন শপথ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ।
সংবিধানের মূল পরিবর্তন গুলো নিম্নরূপঃ

২,রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতিঃ পার্ট ৪, চ্যাপ্টার ১, নির্বাহী বিভাগ, এবং চ্যাপ্টার দুই, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীসভা-কে দুটি নতুন অধ্যায় দিয়ে স্থানচ্যুত করা হয়েছে যে অধ্যায়গুলোর নাম হচ্ছে ‘রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতি’ এবং ‘কাউন্সিল-অব-মিনিস্টারস’,রাষ্ট্রপতি(and head of the state) নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হবার কথা থাকলেও, শেষ আর্টিকেলের একটি বিশেষ ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে যার মাধ্যমে বর্তমান রাষ্ট্রপতি (মোহাম্মাদুল্লাহ) অভিসংসিত বলে গন্য হবেন এবং তদস্থলে মুজিবুর রহমান নির্বাচিত হয়েছেন বলে ধরা হবে। উপ-রাষ্ট্রপতি নিয়গ দেবেন রাষ্ট্রপতি, দুজনের মেয়াদই পাঁচ বছর, তাদের কেউই সংসদ সদস্য হতে পারবেন না (মুজিব আজকেই তার সংসদ সদস্য পদে ইস্তফা দিয়েছেন ),দাপ্তরিক কাজের জন্য প্রেসিডেন্ট বা ভাইস-প্রেসিডেন্ট কার কাছে জবাবদিহি করবেন না,অযোগ্যতার দায়েও পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্টকে অভিসংশিত বা বরখাস্ত করতে পারবে না , প্রেসিডেন্ট বা ভাইস-প্রেসিডেন্ট এর যেকোন একজন ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় স্পিকার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না। প্রজাতন্ত্রের সকল নির্বাহি ক্ষমতা প্রেসিডেন্ট প্রয়োগ করবেন এবং সাজা মওকুফ ও দন্ড পরিবর্তনের সকল ক্ষমতা তার হাতে থাকবে।
৩,দি কাউন্সিল অব মিনিস্টারসঃ
প্রেসিডেন্ট নিয়গকৃত এবং তার খেয়াল-খুশিমত একতি মন্ত্রীপরিষদ থাকবে যারা তাকে সাহায্য করবে এবং সীমিত ক্ষাত্রে পরামর্শ দেবে।

প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত এবং তার পারিষদের মত কোন কোর্ট চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না। একজন প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রীরা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি এবং প্রতিমন্ত্রী, যদি প্রয়োজন হয় তাহলে এম.পি. দের মধ্য থেকে বা এম.পি. হবার যোগ্য এমন কার মধ্য থেকে ন্যগকৃত হবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অন্যান্য প্রতিমন্ত্রীরা কাউন্সিলের সদস্য হবেন না। সকল মন্ত্রীরাই পার্লামেন্তে কথা বলতে পারবেন, যারা এম.পি. কেবল তারা ভোট দিতে পারবেন।
৪,লোকাল গভর্ন্মেন্টঃ সংশধনী লোকাল গভর্নমেন্টের ধারনা বিলুপ্ত করে এবং এখানে অন্য কিছু প্রতিস্থাপনও করে নি।
৫,দি পার্লামেন্টঃ এই সংশোধনী পার্লামেন্টের দ্বারা সরকারকে সমালচনার ক্ষমতা একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে। যদি কেউ দল থেকে পদত্যাগ করে তাহলে পার্লামেন্টে তার আসনও ছাড়তে হবে, এই বিধানের সাথে যুক্ত হয়েছে যদি কোন এম.পি. ভট দেয়া থেকে বিরত থাকে বা ভোটের সময় পার্টির অনুমতি ছাড়া সঙ্গসদে অনুপস্থিত থাকে তাহলে ধরে নেয়া হবে তিনি পার্টির বিরুদ্ধ মতে পার্লামেন্টে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ১২০
দিনের মধ্যে পার্লামেণ্ট আবার মিলিত হবে এই বিধান বাদ দিয়ে বছরে যে কোন সময় দুইবার অধিবেশন ডাকলেই যথেষ্ট হবে বলে দেয়া হয়েছে।
৬,জুডিশীয়ারীঃ আগের মত এখনব আর বিচারক বা ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতিকে সুপ্রিমকোর্টের প্রধানবিচারপতির পরামর্শ নিতে হবে না;ল তনি যাকে ইচ্ছা নিয়োগ দেবেন। ট্রাইব্যুনালগুলকে হাইকোর্টের নিয়ন্ত্রন থেকে মুক্ত করা হয়। আইন বিভাগের সকল কর্মকর্তা, কর্মচারি এবং ম্যাজিষ্ট্রেটরা সুপ্রিমকোর্ট নয়, বরং তাদের আচরন ও শৃংখলার জন্য প্রেসিডেন্টের কাছে দায়ি থাকবেন। যদিও এক জায়াগায় বলা হয়েছে,
---
“বিচারকরা বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগে স্বাধীন থাকবেন। এখন থেকে প্রেসিডেন্ট যে কোন বিচারককে দুর্ব্যবহার বা অযোগ্যতার দায়ে পদচ্যুত করতে পারবেন।”যদিও এর আগে বিচারককে পদচ্যুত করতে সংসদের দু-তৃতিয়াংশ এর অনুমোদন লাগত।

source=>
https://www.wikileaks.org/plusd/cables/1975DACCA00457_b.html

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৩

mobile emergency


Photo

CHOR

ল্লা - Basherkella added a new photo.
Photo

MOJIBOR

Bangladesh - বাংলাদেশের চোখ's photo.
এই তথ্যগুলো মার্কিন দূতাবাস তাদের ফরেন অ্যাফেয়ার্সে পাঠায়।

সারসংক্ষেপঃ জানুয়ারী ২৫,১৯৭৫ তারিখের সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাশের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান এখন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট। এই আমূল (sweeping) পরিবর্তন হয় নামকা-ওয়াস্তে (minuscale) বিরোধীদলের ওয়াক-আউটের মধ্য দিয়ে, কোন প্রকার আলোচনা ছাড়াই। সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি এবং একটি মন্ত্রীপরিষদ সম্বলিত সরকারব্যাবস্থা চালু হয়। মন্ত্রীপরিষদ সদস্য হবার জন্য পার্লামেন্টের সদস্য হওয়া জরুরূ ছিল না। সংশোধনীর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের একক এবং নিরংকুশ ইচ্ছায় সকল রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে একটি মাত্র দল গঠন করার বিধান রাখা হয়েছে। আইন পাশ হওয়ার সাথে সাথেই স্বয়ংক্রিয়ভাবেই মুজিব পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট বনে যান, জাতীয় সংসদের মেয়াদও পাঁচ বছর বেড়ে যায়। দেশের সমস্যা এবং শিক্ষিত সমাজের দুর্নীতি-অনিয়ম মোকাবিলায় ব্যবস্থার পরিবর্তন জরুরী ছিল বলে মুজিব সাফাই দেন।

LIMITED OFFICIAL USE

LIMITED OFFICIAL USE

PAGE 02 DACCA 00457 01 OF 02 251135Z

পরের সপ্তাহে জাতীয় সংসদও আজকে রুটিনমাফিক জরুরী আইন অনুমদন করে প্রেসিডেন্টের গত সপ্তাহে গৃহীত পদক্ষেপকে বৈধতা দিয়েছে।
END SUMMARY
১,একটি সুপরিকল্পিতভাবে সাজানো দুঘন্টার অধিবেশনে জাতীয় সংসদে ২৫ জানুয়ারি সকালে প্রথমে প্রেসিডেন্টের গতমাসের আদেশকে বৈধতা দিয়ে একটি জরূরী আইনের বিল পাশ করে। দ্রুত উত্থাপিত এবং পাশকৃত চথুর্থ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। আলোচনার সুযোগ না পাওয়ায় বিরোধীদল ওয়াক-আউট করে; এর ফলে দুইবারের ভোটাভুটির পরও সংশোধনীটি ২৯২-০ ভোটে পাশ হয়েছে বলে ধরা হয়। মুজিবের, যিনি ইতমধ্যেই স্বতসিদ্ধভাবে একটিমাত্র অধিবেশনের মাধ্যমে সংশোধনীর যুগপৎ পাশ ও কার্যকরিতার বলে প্রেসিডেন্ট হয়ে গিয়েছিলেন, শপথ অনুষ্ঠিত হওয়া নির্ধারিত হয়েছে দুপুরে অনির্দিষ্টকালের জন্য সংসদ মুলতবি করে দেয়ার পরপরই, এক সংক্ষিপ্ত গোপন শপথ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ।
সংবিধানের মূল পরিবর্তন গুলো নিম্নরূপঃ

২,রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতিঃ পার্ট ৪, চ্যাপ্টার ১, নির্বাহী বিভাগ, এবং চ্যাপ্টার দুই, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীসভা-কে দুটি নতুন অধ্যায় দিয়ে স্থানচ্যুত করা হয়েছে যে অধ্যায়গুলোর নাম হচ্ছে ‘রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতি’ এবং ‘কাউন্সিল-অব-মিনিস্টারস’,রাষ্ট্রপতি(and head of the state) নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হবার কথা থাকলেও, শেষ আর্টিকেলের একটি বিশেষ ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে যার মাধ্যমে বর্তমান রাষ্ট্রপতি (মোহাম্মাদুল্লাহ) অভিসংসিত বলে গন্য হবেন এবং তদস্থলে মুজিবুর রহমান নির্বাচিত হয়েছেন বলে ধরা হবে। উপ-রাষ্ট্রপতি নিয়গ দেবেন রাষ্ট্রপতি, দুজনের মেয়াদই পাঁচ বছর, তাদের কেউই সংসদ সদস্য হতে পারবেন না (মুজিব আজকেই তার সংসদ সদস্য পদে ইস্তফা দিয়েছেন ),দাপ্তরিক কাজের জন্য প্রেসিডেন্ট বা ভাইস-প্রেসিডেন্ট কার কাছে জবাবদিহি করবেন না,অযোগ্যতার দায়েও পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্টকে অভিসংশিত বা বরখাস্ত করতে পারবে না , প্রেসিডেন্ট বা ভাইস-প্রেসিডেন্ট এর যেকোন একজন ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় স্পিকার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না। প্রজাতন্ত্রের সকল নির্বাহি ক্ষমতা প্রেসিডেন্ট প্রয়োগ করবেন এবং সাজা মওকুফ ও দন্ড পরিবর্তনের সকল ক্ষমতা তার হাতে থাকবে।
৩,দি কাউন্সিল অব মিনিস্টারসঃ
প্রেসিডেন্ট নিয়গকৃত এবং তার খেয়াল-খুশিমত একতি মন্ত্রীপরিষদ থাকবে যারা তাকে সাহায্য করবে এবং সীমিত ক্ষাত্রে পরামর্শ দেবে।
LIMITED OFFICIAL USE

LIMITED OFFICIAL USE

PAGE 03 DACCA 00457 01 OF 02 251135Z
প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত এবং তার পারিষদের মত কোন কোর্ট চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না। একজন প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রীরা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি এবং প্রতিমন্ত্রী, যদি প্রয়োজন হয় তাহলে এম.পি. দের মধ্য থেকে বা এম.পি. হবার যোগ্য এমন কার মধ্য থেকে ন্যগকৃত হবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অন্যান্য প্রতিমন্ত্রীরা কাউন্সিলের সদস্য হবেন না। সকল মন্ত্রীরাই পার্লামেন্তে কথা বলতে পারবেন, যারা এম.পি. কেবল তারা ভোট দিতে পারবেন।
৪,লোকাল গভর্ন্মেন্টঃ সংশধনী লোকাল গভর্নমেন্টের ধারনা বিলুপ্ত করে এবং এখানে অন্য কিছু প্রতিস্থাপনও করে নি।
৫,দি পার্লামেন্টঃ এই সংশোধনী পার্লামেন্টের দ্বারা সরকারকে সমালচনার ক্ষমতা একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে। যদি কেউ দল থেকে পদত্যাগ করে তাহলে পার্লামেন্টে তার আসনও ছাড়তে হবে, এই বিধানের সাথে যুক্ত হয়েছে যদি কোন এম.পি. ভট দেয়া থেকে বিরত থাকে বা ভোটের সময় পার্টির অনুমতি ছাড়া সঙ্গসদে অনুপস্থিত থাকে তাহলে ধরে নেয়া হবে তিনি পার্টির বিরুদ্ধ মতে পার্লামেন্টে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ১২০
দিনের মধ্যে পার্লামেণ্ট আবার মিলিত হবে এই বিধান বাদ দিয়ে বছরে যে কোন সময় দুইবার অধিবেশন ডাকলেই যথেষ্ট হবে বলে দেয়া হয়েছে।
৬,জুডিশীয়ারীঃ আগের মত এখনব আর বিচারক বা ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতিকে সুপ্রিমকোর্টের প্রধানবিচারপতির পরামর্শ নিতে হবে না;ল তনি যাকে ইচ্ছা নিয়োগ দেবেন। ট্রাইব্যুনালগুলকে হাইকোর্টের নিয়ন্ত্রন থেকে মুক্ত করা হয়। আইন বিভাগের সকল কর্মকর্তা, কর্মচারি এবং ম্যাজিষ্ট্রেটরা সুপ্রিমকোর্ট নয়, বরং তাদের আচরন ও শৃংখলার জন্য প্রেসিডেন্টের কাছে দায়ি থাকবেন। যদিও এক জায়াগায় বলা হয়েছে,
LIMITED OFFICIAL USE

NNN

LIMITED OFFICIAL USE

PAGE 01 DACCA 00457 02 OF 02 251148Z

13
ACTION NEA-09

INFO OCT-01 EUR-12 ISO-00 CIAE-00 DODE-00 NSAE-00 NSCE-00

SSO-00 USIE-00 INRE-00 PM-03 H-01 INR-07 L-02 NSC-05

PA-01 RSC-01 PRS-01 SP-02 SS-15 OMB-01 AID-05 IO-10

SSC-01 /077 W
--------------------- 038825
O R 251000Z JAN 75
FM AMEMBASSY DACCA
TO SECSTATE WASHDC NIACT IMMEDIATE 5568
INFO AMEMBASSY ISLAMABAD
AMEMBASSY NEW DELHI
AMEMBASSY LONDON
AMEMBASSY KATHMANDU

LIMITED OFFICIAL USE SECTION 2 OF 2 DACCA 0457
“বিচারকরা বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগে স্বাধীন থাকবেন। এখন থেকে প্রেসিডেন্ট যে কোন বিচারককে দুর্ব্যবহার বা অযোগ্যতার দায়ে পদচ্যুত করতে পারবেন।”যদিও এর আগে বিচারককে পদচ্যুত করতে সংসদের দু-তৃতিয়াংশ এর অনুমোদন লাগত।

https://www.wikileaks.org/plusd/cables/1975DACCA00457_b.html

collected from basher kella
এই তথ্যগুলো মার্কিন দূতাবাস তাদের ফরেন অ্যাফেয়ার্সে পাঠায়।

সারসংক্ষেপঃ জানুয়ারী ২৫,১৯৭৫ তারিখের সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাশের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান এখন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট। এই আমূল (sweeping) পরিবর্তন হয় নামকা-ওয়াস্তে (minuscale) বিরোধীদলের ওয়াক-আউটের মধ্য দিয়ে, কোন প্রকার আলোচনা ছাড়াই। সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি এবং একটি মন্ত্রীপরিষদ সম্বলিত সরকারব্যাবস্থা চালু হয়। মন্ত্রীপরিষদ সদস্য হবার জন্য পার্লামেন্টের সদস্য হওয়া জরুরূ ছিল না। সংশোধনীর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের একক এবং নিরংকুশ ইচ্ছায় সকল রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে একটি মাত্র দল গঠন করার বিধান রাখা হয়েছে। আইন পাশ হওয়ার সাথে সাথেই স্বয়ংক্রিয়ভাবেই মুজিব পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট বনে যান, জাতীয় সংসদের মেয়াদও পাঁচ বছর বেড়ে যায়। দেশের সমস্যা এবং শিক্ষিত সমাজের দুর্নীতি-অনিয়ম মোকাবিলায় ব্যবস্থার পরিবর্তন জরুরী ছিল বলে মুজিব সাফাই দেন।

LIMITED OFFICIAL USE

LIMITED OFFICIAL USE

PAGE 02 DACCA 00457 01 OF 02 251135Z

পরের সপ্তাহে জাতীয় সংসদও আজকে রুটিনমাফিক জরুরী আইন অনুমদন করে প্রেসিডেন্টের গত সপ্তাহে গৃহীত পদক্ষেপকে বৈধতা দিয়েছে।
END SUMMARY
১,একটি সুপরিকল্পিতভাবে সাজানো দুঘন্টার অধিবেশনে জাতীয় সংসদে ২৫ জানুয়ারি সকালে প্রথমে প্রেসিডেন্টের গতমাসের আদেশকে বৈধতা দিয়ে একটি জরূরী আইনের বিল পাশ করে। দ্রুত উত্থাপিত এবং পাশকৃত চথুর্থ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। আলোচনার সুযোগ না পাওয়ায় বিরোধীদল ওয়াক-আউট করে; এর ফলে দুইবারের ভোটাভুটির পরও সংশোধনীটি ২৯২-০ ভোটে পাশ হয়েছে বলে ধরা হয়। মুজিবের, যিনি ইতমধ্যেই স্বতসিদ্ধভাবে একটিমাত্র অধিবেশনের মাধ্যমে সংশোধনীর যুগপৎ পাশ ও কার্যকরিতার বলে প্রেসিডেন্ট হয়ে গিয়েছিলেন, শপথ অনুষ্ঠিত হওয়া নির্ধারিত হয়েছে দুপুরে অনির্দিষ্টকালের জন্য সংসদ মুলতবি করে দেয়ার পরপরই, এক সংক্ষিপ্ত গোপন শপথ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ।
সংবিধানের মূল পরিবর্তন গুলো নিম্নরূপঃ

২,রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতিঃ পার্ট ৪, চ্যাপ্টার ১, নির্বাহী বিভাগ, এবং চ্যাপ্টার দুই, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীসভা-কে দুটি নতুন অধ্যায় দিয়ে স্থানচ্যুত করা হয়েছে যে অধ্যায়গুলোর নাম হচ্ছে ‘রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতি’ এবং ‘কাউন্সিল-অব-মিনিস্টারস’,রাষ্ট্রপতি(and head of the state) নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হবার কথা থাকলেও, শেষ আর্টিকেলের একটি বিশেষ ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে যার মাধ্যমে বর্তমান রাষ্ট্রপতি (মোহাম্মাদুল্লাহ) অভিসংসিত বলে গন্য হবেন এবং তদস্থলে মুজিবুর রহমান নির্বাচিত হয়েছেন বলে ধরা হবে। উপ-রাষ্ট্রপতি নিয়গ দেবেন রাষ্ট্রপতি, দুজনের মেয়াদই পাঁচ বছর, তাদের কেউই সংসদ সদস্য হতে পারবেন না (মুজিব আজকেই তার সংসদ সদস্য পদে ইস্তফা দিয়েছেন ),দাপ্তরিক কাজের জন্য প্রেসিডেন্ট বা ভাইস-প্রেসিডেন্ট কার কাছে জবাবদিহি করবেন না,অযোগ্যতার দায়েও পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্টকে অভিসংশিত বা বরখাস্ত করতে পারবে না , প্রেসিডেন্ট বা ভাইস-প্রেসিডেন্ট এর যেকোন একজন ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় স্পিকার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না। প্রজাতন্ত্রের সকল নির্বাহি ক্ষমতা প্রেসিডেন্ট প্রয়োগ করবেন এবং সাজা মওকুফ ও দন্ড পরিবর্তনের সকল ক্ষমতা তার হাতে থাকবে।
৩,দি কাউন্সিল অব মিনিস্টারসঃ
প্রেসিডেন্ট নিয়গকৃত এবং তার খেয়াল-খুশিমত একতি মন্ত্রীপরিষদ থাকবে যারা তাকে সাহায্য করবে এবং সীমিত ক্ষাত্রে পরামর্শ দেবে।
LIMITED OFFICIAL USE

LIMITED OFFICIAL USE

PAGE 03 DACCA 00457 01 OF 02 251135Z
প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত এবং তার পারিষদের মত কোন কোর্ট চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না। একজন প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রীরা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি এবং প্রতিমন্ত্রী, যদি প্রয়োজন হয় তাহলে এম.পি. দের মধ্য থেকে বা এম.পি. হবার যোগ্য এমন কার মধ্য থেকে ন্যগকৃত হবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অন্যান্য প্রতিমন্ত্রীরা কাউন্সিলের সদস্য হবেন না। সকল মন্ত্রীরাই পার্লামেন্তে কথা বলতে পারবেন, যারা এম.পি. কেবল তারা ভোট দিতে পারবেন।
৪,লোকাল গভর্ন্মেন্টঃ সংশধনী লোকাল গভর্নমেন্টের ধারনা বিলুপ্ত করে এবং এখানে অন্য কিছু প্রতিস্থাপনও করে নি।
৫,দি পার্লামেন্টঃ এই সংশোধনী পার্লামেন্টের দ্বারা সরকারকে সমালচনার ক্ষমতা একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে। যদি কেউ দল থেকে পদত্যাগ করে তাহলে পার্লামেন্টে তার আসনও ছাড়তে হবে, এই বিধানের সাথে যুক্ত হয়েছে যদি কোন এম.পি. ভট দেয়া থেকে বিরত থাকে বা ভোটের সময় পার্টির অনুমতি ছাড়া সঙ্গসদে অনুপস্থিত থাকে তাহলে ধরে নেয়া হবে তিনি পার্টির বিরুদ্ধ মতে পার্লামেন্টে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ১২০
দিনের মধ্যে পার্লামেণ্ট আবার মিলিত হবে এই বিধান বাদ দিয়ে বছরে যে কোন সময় দুইবার অধিবেশন ডাকলেই যথেষ্ট হবে বলে দেয়া হয়েছে।
৬,জুডিশীয়ারীঃ আগের মত এখনব আর বিচারক বা ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতিকে সুপ্রিমকোর্টের প্রধানবিচারপতির পরামর্শ নিতে হবে না;ল তনি যাকে ইচ্ছা নিয়োগ দেবেন। ট্রাইব্যুনালগুলকে হাইকোর্টের নিয়ন্ত্রন থেকে মুক্ত করা হয়। আইন বিভাগের সকল কর্মকর্তা, কর্মচারি এবং ম্যাজিষ্ট্রেটরা সুপ্রিমকোর্ট নয়, বরং তাদের আচরন ও শৃংখলার জন্য প্রেসিডেন্টের কাছে দায়ি থাকবেন। যদিও এক জায়াগায় বলা হয়েছে,
LIMITED OFFICIAL USE

NNN

LIMITED OFFICIAL USE

PAGE 01 DACCA 00457 02 OF 02 251148Z

13
ACTION NEA-09

INFO OCT-01 EUR-12 ISO-00 CIAE-00 DODE-00 NSAE-00 NSCE-00

SSO-00 USIE-00 INRE-00 PM-03 H-01 INR-07 L-02 NSC-05

PA-01 RSC-01 PRS-01 SP-02 SS-15 OMB-01 AID-05 IO-10

SSC-01 /077 W
--------------------- 038825
O R 251000Z JAN 75
FM AMEMBASSY DACCA
TO SECSTATE WASHDC NIACT IMMEDIATE 5568
INFO AMEMBASSY ISLAMABAD
AMEMBASSY NEW DELHI
AMEMBASSY LONDON
AMEMBASSY KATHMANDU

LIMITED OFFICIAL USE SECTION 2 OF 2 DACCA 0457
“বিচারকরা বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগে স্বাধীন থাকবেন। এখন থেকে প্রেসিডেন্ট যে কোন বিচারককে দুর্ব্যবহার বা অযোগ্যতার দায়ে পদচ্যুত করতে পারবেন।”যদিও এর আগে বিচারককে পদচ্যুত করতে সংসদের দু-তৃতিয়াংশ এর অনুমোদন লাগত।

https://www.wikileaks.org/plusd/cables/1975DACCA00457_b.html

collected from basher kella

রবিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৩

পুলিম ধর্ষন

এক শিবির কর্মীর চিন্তা

Tarek Meah shared প্রবাসী যাযাবর's photo.
আই লাভ ছাত্রশিবির...
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির আমার প্রাণের স্পন্দন । আমার শরীরের প্রতিটি রক্তকণিকা যেমন প্রতি নিয়ত লা-ইলাহা’র জিকির করে তেমনি জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতি আমার সীমাহীন ভালবাসা আর দোয়া সবসময় সবখানে বিরাজমান । হয়তো পরিস্থিতির কারনে দেখাতে পারিনা । কিন্তু তারা মিশে আছে আমার অন্তরে ।  আমি আমার ধর্মকে যেমন ভালবাসি, আমি আমার দেশকে যেমন ভালবাসি, আমি আমার মা-বাবা ভাইবোনকে যেমন ভালবাসি, আমি আমার সন্তানকে যেমন ভালবাসি তেমনি আমি ভালবাসি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামকে এবং বাংলাদেশ  ইসলামী ছাত্রশিবিরকে । হয়তো আমার শরীর থেকে মাথা আলাদা হয়ে যাবে । হয়তো অন্ধকার কুঠরীতে মাসের পর মাস ধুকে ধুকে দিনাতিপাত করতে হবে । হয়তো আমার ঠিক মতো আহার জুটবে না । তবুও জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতি আমার মহব্বতের এতটুকু কমতি হবে না। 
কেন জানেন ? 
কারণ হচ্ছে আমি অনেক ভেবেছি, অনেক চিন্তা-গবেষণা করেছি , অনেক স্টাডী করেছি । 
আমি দেখেছি দল দু‘টির মাঝে আল্লাহর প্রিয় রাসূল হযরত মোহাম্মদ [স:] এর পুরনাঙ্গ জীবনের প্রতিচ্ছবি । 
যে যতই বলুক আমি জানি ইসলামের অনেকগুলো দলের মধ্যে সঠিক দলটি যাচাই করতে গেলে প্রথমেই ইসলামের শত্রুদের চিহ্ণিত করতে হবে । এরপর দেখতে হবে ঐ শত্রুরা ইসলামের কোন দলটিকে নিশ্চিন্ন করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে.. 
যে দলটি ইসলামকে মেনে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইনকে প্রতিষ্ঠা করার মানসে সংগ্রাম করছে শয়তান চাইবে ঐ দলটিকে বিভিন্ন ছলেবলে কৌশলে অপবাদ নিন্দাবাদ দিয়ে কোণঠাসা করে রাখতে । 
নাস্তিক্যবাদিরা, ইসলামের দুষমনেরা যে দলটির বেশী বিরুধীতা করবে বুঝতে হবে সে দলটেই ইসলামের সবচেয়ে সঠিক পথে আছে । 
আমি মহান আল্লাহর দরবারে একটানা তিনবছর পর্যন্ত প্রার্থনা করেছি আমাকে সঠিক পথের দলটিকে সমর্থন করার তৌফিক দেবার জন্য । অবশেষে আমি নিজেকে ইসলামী ছাত্র শিবিরের মঞ্চের গোড়ায় আবিস্কার করেছি । 
আমি অবাক বিস্ময়ে হতবাক, স্তম্ভিত হৃদয়ে ভ্রুকুঞ্চিত করে নিজের কপালের মধ্যখানে আল্লাহু দেখতে পেয়েছি । 
আমার অন্তর জীবন্ত হয়েছে, আমি আবিস্কার করেছি সহজ সরল পথের দিশারী সঠিক ইসলামী দলটি । 
আল্লাহর কাছে চেয়েছি বলেই আল্লাহ, আমার আল্লাহ, আমার মালিক, আমি যার গোলাম, আমি যার দাস, তিনিই আমাকে সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন । 
তাইতো আমি ইসলামী ছাত্র-শিবির এবং জামায়াতে ইসলামীকে এত এত এত ভালবাসি  । আমি সঠিক ভাবে নিশ্চিত রূপেই জানি এই ভালবাসা আমাকে ঠকাবে না, ইহকালে শান্তি আর পরকালে মুক্তি – দুটিই আমার চাই । আমি অনেক স্বার্থবাদী, তাইতো আমি শিবিরকে ভালবাসি । আই লাভ ছাত্রশিবির । মনে অনেক দু:খ বেদনা যে জীবনের শ্রেষ্ট একটি স্ট্যাটাস ছদ্মনামে দিতে হল আওয়ামী নাস্তিক্যবাদী পরিস্থিতির কারনে । ক্ষমা করো বন্ধুরা, ঈমানটা যে বড় বেশী দূর্বল । 
Probasi Jajabar (13.04.13)
আই লাভ ছাত্রশিবির...
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির আমার প্রাণের স্পন্দন । আমার শরীরের প্রতিটি রক্তকণিকা যেমন প্রতি নিয়ত লা-ইলাহা’র জিকির করে তেমনি জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতি আমার সীমাহীন ভালবাসা আর দোয়া সবসময় সবখানে বিরাজমান । হয়তো পরিস্থিতির কারনে দেখাতে পারিনা । কিন্তু তারা মিশে আছে আমার অন্তরে । আমি আমার ধর্মকে যেমন ভালবাসি, আমি আমার দেশকে যেমন ভালবাসি, আমি আমার মা-বাবা ভাইবোনকে যেমন ভালবাসি, আমি আমার সন্তানকে যেমন ভালবাসি তেমনি আমি ভালবাসি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামকে এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে । হয়তো আমার শরীর থেকে মাথা আলাদা হয়ে যাবে । হয়তো অন্ধকার কুঠরীতে মাসের পর মাস ধুকে ধুকে দিনাতিপাত করতে হবে । হয়তো আমার ঠিক মতো আহার জুটবে না । তবুও জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতি আমার মহব্বতের এতটুকু কমতি হবে না।
কেন জানেন ?
কারণ হচ্ছে আমি অনেক ভেবেছি, অনেক চিন্তা-গবেষণা করেছি , অনেক স্টাডী করেছি ।
আমি দেখেছি দল দু‘টির মাঝে আল্লাহর প্রিয় রাসূল হযরত মোহাম্মদ [স:] এর পুরনাঙ্গ জীবনের প্রতিচ্ছবি ।
যে যতই বলুক আমি জানি ইসলামের অনেকগুলো দলের মধ্যে সঠিক দলটি যাচাই করতে গেলে প্রথমেই ইসলামের শত্রুদের চিহ্ণিত করতে হবে । এরপর দেখতে হবে ঐ শত্রুরা ইসলামের কোন দলটিকে নিশ্চিন্ন করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে..
যে দলটি ইসলামকে মেনে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইনকে প্রতিষ্ঠা করার মানসে সংগ্রাম করছে শয়তান চাইবে ঐ দলটিকে বিভিন্ন ছলেবলে কৌশলে অপবাদ নিন্দাবাদ দিয়ে কোণঠাসা করে রাখতে ।
নাস্তিক্যবাদিরা, ইসলামের দুষমনেরা যে দলটির বেশী বিরুধীতা করবে বুঝতে হবে সে দলটেই ইসলামের সবচেয়ে সঠিক পথে আছে ।
আমি মহান আল্লাহর দরবারে একটানা তিনবছর পর্যন্ত প্রার্থনা করেছি আমাকে সঠিক পথের দলটিকে সমর্থন করার তৌফিক দেবার জন্য । অবশেষে আমি নিজেকে ইসলামী ছাত্র শিবিরের মঞ্চের গোড়ায় আবিস্কার করেছি ।
আমি অবাক বিস্ময়ে হতবাক, স্তম্ভিত হৃদয়ে ভ্রুকুঞ্চিত করে নিজের কপালের মধ্যখানে আল্লাহু দেখতে পেয়েছি ।
আমার অন্তর জীবন্ত হয়েছে, আমি আবিস্কার করেছি সহজ সরল পথের দিশারী সঠিক ইসলামী দলটি ।
আল্লাহর কাছে চেয়েছি বলেই আল্লাহ, আমার আল্লাহ, আমার মালিক, আমি যার গোলাম, আমি যার দাস, তিনিই আমাকে সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন ।
তাইতো আমি ইসলামী ছাত্র-শিবির এবং জামায়াতে ইসলামীকে এত এত এত ভালবাসি । আমি সঠিক ভাবে নিশ্চিত রূপেই জানি এই ভালবাসা আমাকে ঠকাবে না, ইহকালে শান্তি আর পরকালে মুক্তি – দুটিই আমার চাই । আমি অনেক স্বার্থবাদী, তাইতো আমি শিবিরকে ভালবাসি । আই লাভ ছাত্রশিবির । মনে অনেক দু:খ বেদনা যে জীবনের শ্রেষ্ট একটি স্ট্যাটাস ছদ্মনামে দিতে হল আওয়ামী নাস্তিক্যবাদী পরিস্থিতির কারনে । ক্ষমা করো বন্ধুরা, ঈমানটা যে বড় বেশী দূর্বল ।

শযতানের চেহারা

আমলীগ কেন ইসরামবিদ্বেশী


আওয়ামী লীগের ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের কারণ অনুধাবন করতে হলে আওয়ামী লীগের জন্ম, জন্মদাতা এবং জন্মদানের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে পর্যালোচনা করতে হবে। এ বিষয়ে স্যার উইনস্টন চার্চিলের অমর উক্তির ‘যত দূরবর্তী অতীত ইতিহাস তুমি জানবে তত দূরতম ভবিষ্যত তুমি দেখবে’) প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ করতে হবে। ৭১১ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয় থেকে শুরু করে ১৭৫৭ সালের পলাশী বিপর্যয়, টিপু সুলতানের পরাজয়, দিল্লী পতন, ১৮৫৮ সালের সিপাহী বিপ্লবে মুসলমানদের চূড়ান্ত পতন এবং ১৮৭০ পরবর্তী মুসলমানদের উত্থান প্রক্রিয়া, ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা, ১৯৭১ সালের পাকিস্তান ভাঙা এবং ’৭১ পরবর্তী পুনরায় মুসলিম শাসনের পতনের ধারাবাহিকতা, কারণ ও উপাদান সমূহ বিশ্লেষণ করলে আওয়ামী লীগের জন্মদাতা ও পালন কর্তাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য দিবালোকের মত সুস্পষ্ট হবে।৭১১ সাল থেকে ১৭৫৭ সাল পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন মুসলিম শাসনের সময় ভারত বর্ষের জনগণ একজাতির ন্যায় বসবাস করেছিল। কেননা মুসলিম শাসনামলে ধর্মের কারণে, বর্ণের কারণে, সম্প্রদায়ের কারণে কখনো প্রতিপক্ষ অত্যাচারিত হয়নি। উক্ত আমলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গারও কোনো নজির নেই। এতদসত্ত্বেও ভারতের বর্ণহিন্দুরা মনের দিক থেকে কখনো মুসলিম শাসন মেনে নেয়নি। মুসলমানদের উদারতার সুযোগ নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায় প্রথমে শক্তি সঞ্চয় করে এবং পরবর্তীতে ভারতবর্ষ থেকে মুসলিম শাসন উৎখাত করতে ইউরোপীয়দেরকে এদেশের শাসন ক্ষমতায় বসায়। দীর্ঘ ১৯০ বছর এই ইঙ্গ-হিন্দু চক্র মুসলমানদেরকে ভারতবর্ষ থেকে নিশ্চিহ্ন করার যাবতীয় প্রচেষ্টা গ্রহণ করে। এসময়ে মুসলমানদেরকে ভারতবর্ষের জমির মালিকানা থেকে, সরকারি চাকরি থেকে, সেনাবাহিনী থেকে উচ্ছেদ করে ভূমিদাসে পরিণত করে। এতদ্সত্ত্বেও কিছু দূরদর্শী মুসলিম ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ১৯৪৭ সালে বিশাল ভারতবর্ষের একটি ক্ষুদ্র অংশে নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়। এই ক্ষুদ্র ভূখ-েও যাতে মুসলমানরা ক্ষমতাসীন থাকতে না পারে সে লক্ষ্যে ইঙ্গ-হিন্দু শক্তি ৪৭ পরবর্তী সময়ে পুনরায় চক্রান্ত শুরু করে। এই চক্রান্তের শুরুতেই পাকিস্তানের ইসলামী ঐক্যকে দুর্বল ও ধ্বংস করার লক্ষ্যে প্রথমে মুসলিম ছাত্রলীগ তৎপর আওয়ামী মুসলিম লীগ এবং আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। তাদের সাথে যোগ করা হয় সাম্রাজ্যবাদ সৃষ্ট কমিউনিস্ট পার্টি সমূহ এবং অখ- ভারত প্রতিষ্ঠায় সংকল্পবদ্ধ পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রেসকে। এভাবেই প্রথমে পাকিস্তানের মুসলমানদেরকে দ্বিধাবিভক্ত করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা হয়। অতপর বাংলাদেশী মুসলমানদেরকে দ্বিধাবিভক্ত করার জন্য বাঙালি/বাংলাদেশী, স্বাধীনতার পক্ষÑবিপক্ষ, ধর্মভিত্তিক-ধর্মনিরপেক্ষ শ্রেণীর সৃষ্টি করা হয়। ইতোপূর্বে অর্থাৎ ১৭৫৭-১৯৪৭ সময়কালে ভারতের উগ্রহিন্দুরা মুসলমানদের উপর যে অত্যাচার-নির্যাতন চালাত বর্তমান বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ভারতন্থীরা ধর্মভিত্তিক ও ধর্মীয় ভাবাপন্ন মুসলমানদের উপর একই প্রকার অত্যাচার-নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করছে। হিন্দু শাসনে ভারতের মুসলমানরা যেরূপ অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার বাংলার মুসলমানরাও আওয়ামী শাসনে একইরূপ অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। প্রশ্ন উঠতে পারে আওয়ামী লীগ কি মুসলমানদের দল নয়? তার উত্তর হচ্ছে এই যে, যে দল সংবিধান থেকে ‘আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস’ মুছে দিতে পারে সে দল গায়ের জোরে বা আরবী নামের কারণে মুসলমান থাকে কিভাবে? আল্লাহর উপর আস্থা বা ঈমান না থাকলে কেউ মুসলমান হয় না, তার অকাট্য প্রমাণ হলো আরবী নামধারী আবু জেহেল, আবু লাহাব ও আবু তালেব মুসলমান ছিল না। তদুপরি যে দলটি মুসলমানদের চেয়ে অমুসলমানদেরকে বেশি আপন মনে করে, সে দলের শীর্ষ পরিবারটি মুসলমানদেরকে বাদ দিয়ে ইহুদী-খ্রিস্টান-হিন্দুদের সাথে আত্মীয়তা করে, যে দলের সেক্রেটারী জেনারেল নামের পূর্বে সৈয়দ রেখে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয় ‘আমি হিন্দু ও না মুসলমান ও না’ এবং যে দলটি মন্দির-গীর্জা-প্যাগোডাকে নিরাপদ মনে করে এবং কেবলমাত্র মসজিদকে ঘিরে রাখে র্যা ব-পুলিশ ও গোয়েন্দা দিয়ে। সে দলটি কোন স্তরের মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করে তা বোকা লোকটি ও বুঝতে পারে। এ দলটির সাথে অখ- ভারতে বিশ্বাসী এবং মুসলিম শাসন উৎখাতে প্রয়াসী, বর্ণহিন্দুদের জন্মগত সম্পর্কের ব্যাপারে অসংখ্য তথ্য প্রমাণ রয়েছে। তন্মধ্যে পাঠকদের জ্ঞাতার্থে প্রদত্ত কয়েকটি তথ্য নিম্নরূপ
১. ২০১২ সালের নভেম্বরে বেগম খালেদা জিয়ার ভারত সফরকে ব্যর্থ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্থ করার জন্য দিল্লী থেকে ২য়বার বার্তা পাঠিয়ে বলা হয়‘ আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের জন্মগত সম্পর্ক, এর পরেই অন্যদের প্রসঙ্গ’। (সূত্র : দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, তাং০৩-১১-১২ইং)
২. ২০০৭ সালের এপ্রিলে রায়রেরিলির এক জনসভায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘আমার পরিবারই পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে।’
৩. ৩০ নভেম্বর ১৯৭০ সালে জনসভায় ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ‘ভারত কখনো পাকিস্তানের অস্তিত্বকে মেনে নেবে না।’ (সূত্র : ঐ পৃ-১১২)
৪. পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর শেখ মজিবুর রহমান বিরোধী রাজনীতিতে একটি অবস্থান তৈরি করার জন্য ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার জ্যোতি সেন গুপ্তের সান্নিধ্যে আসেন, যিনি মনোরঞ্জন ধরসহ কতিপয় কংগ্রেস নেতার সঙ্গে মুজিবের পরিচয় করিয়ে দেন। মুজিব তাদের সাথে মিলে পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্য হাসিলে কাজ করার ব্যাপারে একমত হন। (সূত্র : জ্যোতি সেন গুপ্ত, হিস্ট্রী অব ফ্রীডম মুভমেন্ট অব বাংলাদেশ, ১৯৪৭-৭৩ : সাম ইনভলভমেন্ট)
৫. ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির পর সলিমুল্লাহ মুসলিম হল থেকে বিপুল পরিমাণ ধ্বংসাত্মক প্রচারপত্র উদ্ধার করা হয়। নারায়ণগঞ্জের মিছিলে জয়হিন্দ এবং যুক্তবাংলা চাই স্লোগান দেয়া হয়। নবগঠিত আওয়ামী লীগের নেতা (এমএলএ) যিনি হিন্দু মাড়োয়ারী ব্যবসায়ীর সাথে পাট ব্যবসায়ে সম্পৃক্ত ছিলেন তাঁর (ওসমান আলীর) বাসগৃহ থেকে ধ্বংসাত্মক লিফলেট উদ্ধার করা হয় এবং একই স্থান থেকে ভারতীয় হিন্দু যুবকদের গ্রেফতার করা হয়। একই রূপ ভারতীয় হিন্দু যুবক গ্রেফতার হয় চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং আরো কিছু স্থানে। (সূত্র : ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, বি আল হেলাল, পৃ: ৪৪৯-৫০)
৬. ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট গঠনের মূল কাজটি সম্পাদন করে কমিউনিস্ট পার্টি। প্রকাশ্য রাজনীতিতে কার্যতঃ নিষিদ্ধ এই পার্টি যুক্তফ্রন্ট গঠনে প্রধান ভূমিকা পালন করে। বামধারার ছাত্র ইউনিয়ন, গণতন্ত্রী দল ও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে কর্মরত বামরাই এতে প্রধান ভূমিকা পালন করে। তৎকালে হিন্দুস্থানে কমিউনিস্টদের উপর দমন-পীড়ন অব্যাহত থাকলে ও দিল্লী পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্টদের পৃষ্ঠপোষকতা দান করত শুধুমাত্র পাকিস্তানকে ধ্বংস করার জন্য। কমিউনিস্ট নেতৃত্বের মূল কাঠামোয় হিন্দু নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত থাকার কারণে ভারতীয় সাহায্য তাদের জন্য অবারিত ছিল। (সূত্র : মোহাম্মদ হান্নান, বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস, পৃ-২৫)
৭. শেরেবাংলা একে ফজলুল হক যুক্তফ্রন্ট গঠনের বিরোধী ছিলেন। ছাত্ররা এক বিরাট বিক্ষোভ মিছিল সংগঠিত করে তাঁর বাসভবন ঘেরাও করে রাখে। শেষ পর্যন্ত ছাত্রদের চাপে রাজি হলে তাঁকে ছাত্ররা কাঁধে নিয়ে উল্লাস করতে করতে ফিরে আসে। (প্রাগুক্ত পৃ: ২৫) দেশপ্রেমিক ইসলামী শক্তি ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত করলেও পরবর্তীতে এর নিয়ন্ত্রণ এসে যায় কমিউনিস্টদের হাতে। ’৫২ সালের পর তারা রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পুরোপুরি সক্রিয় হয়ে উঠে। প্রথমতঃ তারা মুসলিম জনমানসকে ইসলামী সংস্কৃতি থেকে তথাকথিত বাঙালি (হিন্দু) সংস্কৃতি অভিমুখে নিয়ে যায় স্মৃতিস্তম্ভ, শহীদ মিনার স্থাপন করে এবং হিন্দুয়ানী কায়দায় বিভিন্ন দিবস পালন করে। ২য় পর্যায়ে মুসলিম ঐক্যকে দ্বিধাবিভক্ত করার জন্য গঠন করে যুক্তফ্রন্ট। এভাবে তারা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আদর্শিক চেতনা থেকে জনগণকে বিচ্ছিন্ন করে ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজে লাগায়।
৮. স্বাধীন হিন্দুরাষ্ট্র তৈরির চেষ্টা আজকের নয়, পঞ্চাশের দশকেই হয়েছিল এর ব্লু প্রিন্ট। ‘বঙ্গভূমি ও বঙ্গসেনা’ পুস্তিকায় ডা. কালিদাস বৈদ্য নিজেই স্বীকার করেছেন যে, ১৯৬২ সালে তারা তিন জন যুবক কলকাতা থেকে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে যান এবং ‘সংখ্যালঘুদের মুক্তির জন্য ব্যাপক কর্মতৎপরতা চালান।’ গোপনে স্বাধীনতা ও তার সঙ্গে স্বতন্ত্র বাসভূমির কথাও প্রচার করেন। ঐ তিন যুবক হলো কালিদাস বৈদ্য, চিত্তররঞ্জন ছুতার ও নীরদ মজুমদার। ... কালিদাস বৈদ্য ও চিত্ত ছুতার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এবং বাংলাদেশে বহুকাল ভারতের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। ... মুজিব সরকারের উপর প্রভাব খাটানোর জন্য চিত্ত সুতারকে ভারত সরকার চিরকাল ব্যবহার করেছে। এখনো ভারত সরকারের তরফে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন চিত্তবাবু। (সূত্র : একশ’ বছরের রাজনীতি : আবুল আসাদ)
৯. পাকিস্তানের জন্মের প্রায় শুরু থেকে ভারতের ষ্টেটম্যান পত্রিকার ঢাকা অফিসে দায়িত্বপালনকারী ভারতীয় সাংবাদিক জ্যোতিসেন গুপ্ত স্বীকার করেছেন যে, শেখ মুজিবর রহমান সহ তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের বহু মহলের সাথে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার যোগাযোগ ছিল। (সূত্র : বাংলাদেশ মারাত্মক অপপ্রচারণা ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের শিকার, এমটি হোসেন, পৃ-৯৮)
১০. শেখ মুজিবের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে ১৯৭৭ সালের ১৫ আগস্ট কলকাতায় আযোজিত এক সভায় বঙ্গভূমি আন্দোলনের সূচনা করা হয়। সেই সমাবেশে ভারতে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আশ্রিতা শেখ হাসিনা ওয়াজেদ ও উপস্থিত ছিলেন।
১১. পূর্ব পাকিস্তানী রাষ্ট্রবিরোধী ব্যক্তিদের সঙ্গে হিন্দুস্থানী যোগসাজসের প্রত্যক্ষ পরিচয় পাওয়া গেল ১৯৬৭তে যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র উদঘাটিত হল। কয়েকজন সাক্ষ্য দিল যে, শেখ মুজিবর রহমান এই ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে যখন দেশের অবশিষ্ট অংশ থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে পৃথক করার উদ্দেশ্যে একটি বিপ্লবী সংস্থা গঠিত হয়েছিল।... পরিকল্পনার মূল বিষয় ছিল কমান্ডো হামলায় পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক ইউনিটসমূহের অস্ত্রাগারসমূহ দখল করে সেগুলোকে অচল করে দেয়া। ভারত এ কাজে বিদ্রোহীদেরকে অস্ত্র সরবরাহ করবে। (সূত্র : বাংলাদেশের স্বাধীনতা, যুদ্ধের আড়ালে যুদ্ধ, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, পৃ-১৩৩)
১২. ১৯৬২-৬৩ সালে আগরতলায় ভারতীয় আইবি করেন ডেক্সের ফরেন অপারেটিভদের সঙ্গে মুজিব অংশের একটি বৈঠক হয়। (প্রাগুক্ত পৃ-৩৭)
১৩. ’৬৫ সালের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সবাই সেদিন এক কাতারে সামিল হয়েছিল পাকিস্তানের পক্ষে। তবে একটি রাজনৈতিক দলের ভূমিকা ছিল রহস্যময়। এ দলটি ভারতকে ধিক্কার দিতে একবারও মুখ খোলেনি। সমসাময়িক পত্র-পত্রিকা সাময়িকীতে এর প্রমাণ মিলবে। ... সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটা আমাদের সবাইকে হতবাক করে দিয়েছিল তা হলো তৎকালীন গভর্নর মোনেম খাঁ যুদ্ধকালীন ঘটনা বলতে গিয়ে বৈঠকে বলেছেন, যুদ্ধ চলাকালে পূর্বপাকিস্তান যখন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন তখন শেখ মুজিব মোনেম খানকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি যদি এই সুযোগে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন তবে তাঁর দল সর্বোতভাবে তাঁকে সমর্থন দেবে। আর এটা শুধু নৈতিক বা আনুষ্ঠানিক সমর্থনই হবে না, হবে সর্বাত্মক সমর্থন। যুদ্ধাবস্থায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে এই ভেবে জনাব খান বিষয়টি চেপে গিয়েছিলেন। পরে অবশ্য তিনি বিষয়টি পিন্ডিকে জানিয়েছিলেন। (সূত্র : স্মৃতির পাতা থেকে, পিএ নাজির পৃ: ২১৪-২১৫)
১৪. ’৭০-এর নির্বাচনী জনসভায় মুজিব যেসব কথা বলেছিলেন, ঘটনা প্রবাহ সেভাবে এগোচ্ছিল না। ১৯৭০ সালে এলএফও ঘোষণার পর মুজিবকে তার ইনার কেবিনেটের সসদ্যদের উদ্দেশ্যে স্পষ্ট বলতে শোনা গেছে, আমার আসল লক্ষ্য বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। নির্বাচনের পর আমি এলএফও ছিঁড়ে ফেলব। কে তখন আমাকে চ্যালেঞ্জ করবে? এ ব্যাপারে বাইরের সূত্র থেকে সাহায্য আসবে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি সম্ভবত ভারত থেকে।
১৫. ১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ এক পরিচালক এক সিম্পোজিয়ামে বলেন, ভারতকে আজ এই সত্য অনুধাবন করতে হবে যে, পাকিস্তান ভেঙে গেলে আমাদের স্বার্থ উদ্ধার হবে। এ সুযোগ আর কখনো নাও আসতে পাারে। তাতে আরো বলা হয় বাংলাদেশের এই সঙ্কট তার এক নম্বর শত্রু পাকিস্তানকে বিনাশ করার জন্য শতাব্দীর সুযোগ এনে দিয়েছে। (প্রাগুক্ত-পৃ-১৭০)
১৬. ২৭ মার্চ ১৯৭১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী রাজ্য সভায় বলেন, অনেক কারণে এ বিষয়ে (পাকিস্তান ভাঙার ব্যাপারে) আমরা আগ্রহী। প্রথমত একজন সদস্য যেমন বলেছেন, শ্রী মুজিবুর রহমান আমাদের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন পূরণের পক্ষে। ... প্রতিবেশী বড় একটি দেশের সরকার প্রধান বলেছেন, ‘যেহেতু বিদ্রোহী নেতা ভারতের স্বপ্ন পূরণের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, সেহেতু ভারত পার্শবর্তী একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে আগ্রহী হতে বাধ্য। (প্রাগুক্ত-পৃ-১৭০)
১৭. কংগ্রেস ও ভারত সরকার আন্তরিকভাবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা মেনে নেয়নি এবং এর প্রতিষ্ঠার পরও এর অবসান ঘটিয়ে অখ- ভারত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য প্রকাশ্যভাবে বহুবার ঘোষণা করেছে এবং এর জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ১৯৪৯ সাল থেকেই ভারত সরকার পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ গঠন করার জন্য বাংলাদেশ সেল গঠন করেছিল। দায়িত্বে ছিলেন ড. ত্রিগুনা সেন। (দেখুন, বেলাল মোহাম্মদের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র)
১৮. ১৯৪৯ সালের প্রথমদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের ঢাকায় আগমন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে (বর্তমান মেডিকেল কলেজের সম্মুখস্থ খেলার মাঠ) বক্তৃতা দেয়ার কথা। এ উপলক্ষে ড. মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রারের অফিসে (বর্তমান জগন্নাথ হলের অংশ বিশেষ) রাত্রিকালে ঢাকা শহর ছাত্রনেতাদের এক সভা আহ্বান করা হয়। আমি ঢাকা ইসলামিক ইন্টারমেডিয়েট কলেজের (বর্তমান কাজী নজরুল ইসলাম কলেজ) ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঐ সভায় যোগদান করি। শেখ মুজিবর রহমান ও ঢাকা কলেজের ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ঐ সভায় উপস্থিত হন। ... ঐ সভাতেই তিনি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্য ও পাকিস্তানি রাজনীতিবিদদের বিমাতাসুলভ মনোভাবের উল্লেখ করেন এবং লিয়াকত আলী খানকে সম্বর্ধনা দানের বিরোধীতা করেন। অবশ্য সে সভায় একথা তখন তেমন সমর্থন লাভ করেনি। সভা শেষ হয় রাত ১২টার পর। তখন শেখ সাহেব ও আমি হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরি। উনি তখন আরমানিটোলার এক বাসায় থাকতেন। আমি থাকতাম আহসান মঞ্জিল সংলগ্ন ছাত্রাবাসে। সারাটি পথ তিনি আমাকে পাকিস্তানিদের শোষণ ও পূর্ব পাকিস্তানের বঞ্চনার কথা বলতে থাকেন এবং পাকিস্তান থেকে আমাদের পৃথক হয়ে যাওয়াই উচিতÑ এ কথা বলেন। (সূত্র : ফজলুল কাদের চৌধুরী ও সমকালীন মুসলিম সমাজ, মোহাম্মদ হাসন, বইয়ের ভূমিকার লেখক ড. মোহর আলী পৃ-১২)

উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত অবলোকন করে যে কোনো সাধারণ জ্ঞানের মানুষ ও বুঝতে পারবে যে, আধিপত্যবাদী ও বর্ণবাদী ভারতীয় নেতৃবৃন্দের অখ- ভারত গঠনের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্যই ভারত ১৯৪৭ সাল থেকেই তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টিসমূহ, পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রেস সদস্যবৃন্দ এবং মুসলিম লীগের ক্ষমতালোভী নেতৃবৃন্দের মদদ দেয়া শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় নিয়মতান্ত্রিক ভাষা আন্দোলন বিপদগামী হয়ে রক্তাক্ত পরিণতি লাভ করে। এই রক্তপাতের পর মুসলিম সংস্কৃতিকে বিপদগামী ও হিন্দু সংস্কৃতির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্মৃতিস্তম্ভ, শহীদ মিনার ও হিন্দু সংস্কৃতির আদলে ভাষা দিবস চালু করা হয়। যা পর্যায়ক্রমে মূর্তিপূজা, প্রতিকৃতি পূজা, মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বলনে পর্যবসিত হয়। যে মুসলিম ঐক্য সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী ও তাদের দোসর ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তির শতসহস্র চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে উপমহাদেশে মুসলমানদেরকে পাকিস্তান নামক একটি স্বাধীন সার্বভৌম ভূখ- দান করেছিল সে মুসলিম ঐক্যকে বিনষ্ট করার জন্য ৪৭ পরবর্তীতে মিথ্যাচার ও ভাষা আন্দোলনকে ব্যবহার করে মুসলিম ছাত্রলীগ, আওয়ামী মুসলিম লীগ ও আওয়ামী লীগ গঠন করা হয়। পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম শক্তিকে দ্বিধাবিভক্ত করার জন্য যুক্তফ্রন্ট গঠন করা হয়। পর্যায়ক্রমে অদূরদর্শী ও ক্ষমতালোভী শেখ মুজিবুর রহমানকে ব্যবহার করে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানকে চূড়ান্তভাবে দুইভাগ করা হয় এবং পাকিস্তানি বাহিনী ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভারতীয় বাহিনীর নিকট আত্মসমর্থন করে। ঘটনার এখানেই শেষ নয় ১৯৭১ সালের পর থেকে মুসলিম বিদ্বেষী ইহুদী-খ্রিস্টান চক্রের সাথে হাত মিলিয়ে ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারত বর্তমান পাকিস্তানের সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও উ. পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশকে আলাদা করে পাকিস্তানকে ৪ টুকরা এবং বাংলাদেশকে জুমল্যান্ড, বঙ্গভূমি ও বাংলাদেশ এরূপ তিন টুকরা করার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।বর্তমান পাকিস্তানে ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে ভারত সৃষ্ট পিপিপি, সাম্রাজ্যবাদ সৃষ্ট বামপন্থী দলসমূহ, টিটিপি, মোহাজের কওমী পার্টি, বালুচ লিবারেশন ফ্রন্ট, ধর্ম ব্যবসায়ী ভ-পীর-ফকির, কবর পূজারী, মাজার পূজারী, পীর পূজারী ও বেদআতীগণ। বর্তমান বাংলাদেশে ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে ভারত সৃষ্ট আওয়ামী লীগ, সাম্রাজ্যবাদ সৃষ্ট বামপন্থী দল সমূহ, শান্তিবাহিনী, বঙ্গসেনা, ধর্মব্যবসায়ী ভ-পীর, ফকির, কবরপূজারী পীর পূজারী ও বেদআতীগণ। ১৯৪৭ পূর্বকালের ভারতের এবং বর্তমান ভারতে মুসলমানরা হিন্দুদের যে সকল অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছিল এবং হচ্ছে বর্তমান বাংলাদেশে ও ঈমানদার দেশ প্রেমিক মুসলমানরা ভারত সৃষ্ট আওয়ামী জোট কর্তৃক একই প্রকার অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। হিন্দুস্থানের হিন্দুরা যেভাবে বিগত ২৫০ বছর যাবত মুসলমানদেরকে ধর্মপালনে বাধা দিয়েছে, ধর্ম ও নীতির কারণে জুলুম নিপীড়ন করেছে বর্তমান বাংলাদেশে ও দেশপ্রেমিক ইসলামী শক্তিসমূহ একই রূপ অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে প্রভুকে খুশি করার জন্য এরা প্রভুর চেয়ে আরো বেশি হিংস্রতার আশ্রয় গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে ভারত সৃষ্ট দল ও গোষ্ঠীসমূহ বর্তমানে সম্পূর্ণভাবে বর্ণহিন্দু মানস ধারন করে মুসলিম ও ইসলাম বিদ্বেষের প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়েছে।এতদ্সংক্রান্ত তথ্যাবলী উল্লেখের পূর্বে কয়েকটি মৌলিক বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করা হচ্ছে। বিষয়গুলো হলো - ভারত তত্ত্ব বা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আদর্শিক ভিত্তি ও কারণ এবং পাকিস্তান ভাঙার কৌশলের ধারাবাহিকতা।

ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহেরু এর প্রণেতা, পরবর্তীতে ইন্দিরা গান্ধী ও আইকে গুজরাল একে আরো অগ্রবর্তী করেছেন। নেহেরু ডকট্রিনের মূল কথা হলো ১৯৪৭ পূর্ব ইৎরঃরংয ওহফরধ নিয়ে হবে অখ- ভারত। সেক্ষেত্রে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও বার্মা অখ- ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। পার্শ্ববর্তী নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও মালদ্বীপ হবে ভারতীয় সামরিক ও রাজনৈতিক আধিপত্যের আওতাধীন। এ লক্ষ্যেই নেহেরুর নেতৃত্বাধীন ভারত ১৯৪৭ থেকেই কার্যক্রম পরিচালনা করছে যা এখনো অব্যাহত আছে। এই আধিপত্যবাদের বলি হয়েছে ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত দেশীয় রাজ্যসমূহ, পার্শ্ববর্তী সার্ক দেশ সমূহ, বার্মা ও আফগানিস্তান। ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী ভারত পৃথিবীর অন্যান্য ইসলাম বিরোধী শক্তিসমূহ যথা ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সাথে হাত মিলিয়ে তার অপকর্ম অব্যাহত রেখেছে। ভারতের এই অপকর্ম পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিম-লকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। এসব দেশের ভারত সৃষ্ট রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী প্রতিনিয়ত ভারতের স্বার্থে নিজ নিজ দেশে অশান্তি সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট, এই জোটের বলয়ে অবস্থানকারী বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতি কর্মীরা প্রতিনিয়ত নিজ দেশকে ভারতের পদতলে বলি দিয়ে ভারতের স্বপ্নপূরণে সহযোগিতা করছে এবং ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে।বেশির ভাগ লোকেরা মনে করে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ রাজশক্তি ভারত ২ টুকরা করে ভারত ত্যাগ করেছে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা ছিল ভিন্ন। নিম্নের তথ্যটি দেখলে বিষয়টি বোধগম্য হবে।* ব্রিটিশ ভারতের প্রত্যক্ষ শাসনাধীন অঞ্চলের বাইরে আরো ৭০০টি স্বাধীন রাজ্য ছিল ভারতবর্ষে। ব্রিটিশ রাজশক্তি ছলে-বলে কৌশলে এ সকল রাজ্যের বেশির ভাগ দখলে নিতে সক্ষম হয়েছিল। এর পরেও ১৯৪৭ সালে আরো ২৮৩টি রাজ্য অবশিষ্ট ছিল যাদেরকে করদ রাজ্য বা মিত্র রাজ্য বলা হত। এসব রাজ্যের হিন্দু-মুসলিম রাজা ও নবাবগণ নিজ নিজ আইন অনুসারে রাজ্য শাসন করতেন। ইংরেজ সরকারকে এই রাজ্যগুলো কর দিত। ইংরেজ সরকার ভারতবর্ষ ত্যাগ করার আগে দেশীয় রাজাদের ডেকে বলেছিলেন যে, ‘তাঁরা প্রত্যক্ষভাবে ব্রিটিশ সরকারের অধীন, ভারত সরকারের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। ইংরেজ ভারত ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে তারা স্বাধীন। তারা চাইলে স্বাধীন থাকতে পারে অথবা স্বেচ্ছায় ভারত বা পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতে পারে। ভারত ত্যাগের প্রাক্কালে ভাগ সমূহ ছিল নিম্নরূপÑদেশীয় রাজ্য ২৮১টিহিন্দুস্থান ১টিপাকিস্তান ১টিপর্তুগীজ শাসনকৃত ১টিফরাসী শাসনাধীন ১টিমোট ২৮৫টিসূত্র : সাপ্তাহিক দেশ, কংগ্রেস শতবর্ষ সংখ্যা, (১৮৮৫-১৯৯৫) লেখক : শ্রী অতুল্য ঘোষ পৃ-১৩০...কিন্তু ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী ভারত ত্যাগ করার পর ভারত অত্যাচার, আগ্রাসন, আন্তর্জাতিক নীতিভঙ্গ, প্রতারণা ও জবরদস্তির মাধ্যমে উক্ত ২৮৩টি রাজ্য দখল করে নেয়।


পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আদর্শিক ভিত্তি ও কারণ

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আদর্শিক ভিত্তি হলো মুসলমানরা অন্য কোনো জাতির অংশ নয় বরং একটি স্বতন্ত্র জাতি। অন্য কোনো জাতির সাথে মিলিত হয়ে মুসলমানরা কোনো মিশ্র জাতীয়তাও নির্মাণ করতে পারে না। কেননা মুসলিম জাতীয়তাবোধের একমাত্র আদর্শ হলো তাদের দ্বীন বা ধর্ম। তারা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাদের এই আকাক্সক্ষা বাস্তবায়ন করবে অন্য কোনো পথে নয়।১৯৪৭ সালের পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিল ভারতের বর্ণবাদী মুসলিম বিদ্বেষী ও মুসলমানদের অস্তিত্ববিরোধী হিন্দুদের আধিপত্য থেকে মুক্ত হয়ে মুসলমান জাতির জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র কায়েম করা যে রাষ্ট্রে তারা নিজেদের ঐতিহ্য এবং আদর্শের আলোকে জাতীয জীবন ব্যবস্থাকে পুনর্গঠিত করতে পারে। যে রাষ্ট্রে তারা প্রতিনিয়ত সাংস্কৃতিক নিস্পেষন বা অনৈসলামীক ধর্মীয় অনুশাসনের ভয়ে শঙ্কিত হতে হবে না। যে রাষ্ট্রের অর্থনীতি, রাজনীতি বা সংস্কৃতি কিরূপ হবে তা নির্ভর করবে মুসলিম জাতির মৌলিক আদর্শগুলোকে আমরা কিভাবে ব্যাখ্যা করব তার উপর। আমাদের আবাসভূমির উপর আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষিত হলে রাষ্ট্র পরিচালনার স্বাধীনতা আমাদের থাকবে।এই লক্ষ্য উদ্দেশ্যকে সানে নিয়েই আমাদের পূর্বপুরুষরা ১৯৪০ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত নিরন্তর রক্তাক্ত লড়াই-সংগ্রাম করেছে তৎকালীন বিশ্বশক্তি ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী ও তাদের সহযোগী বর্ণহিন্দুদের বিরুদ্ধে। অবশেষে মুসলমানদের ধর্মীয় চেতনাভিত্তিক জাতীয় ঐক্য ২০ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় সমর্থ হয়। এ লড়াইয়ে সমগ্র ভারতবর্ষের মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। ১৯৪৭ সালের পর দেখা গেল হিন্দু শাসন থেকে মুক্ত হতে এরা নিজেদের সংগ্রামের ফসল পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছে বুক ভরা আশা নিয়ে। এদের মধ্যে অনেকেই ছিল কপর্দকহীন, ছিন্নভিন্ন, আহত ও পঙ্গু আর বাকিরা ছিল সফল শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, কারিগর ও উচ্চপদস্থ আমলা। এরাই কৃষিভিত্তিক পূর্ব পাকিস্তানের রাস্তাঘাট, বিমানবন্দর-নৌবন্দর-শিল্পকারখানা গড়ে তুলল এবং আমরা দ্রুত এগিয়ে চললাম। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস মুসলমানদের অস্তিত্ব বিনাশী হিন্দুস্থান ও তাদের এদেশীয় দোসররা ১৯৭০-৭১ সালে এসব দরদী মেহমানদের ও ১ম স্বাধীনতার মুক্তিযোদ্ধাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, অবশিষ্টরা এখনো চরম অবহেলায় ধুঁকে ধুঁকে মরছে। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি এসব মোহাজের ভাইদের সহায়তা ছাড়া আমরা আধুনিক শিল্পবিপ্লবের যুগে প্রবেশ করতে সক্ষম হতাম না। হিন্দু ভারতের সক্রিয় সহযোগিতায় যারা এসব অপকর্ম করেছে তাদেরকে কি বাংলাদেশের বা মুসলমানদের বন্ধু বলা যায়?

ফকরুর আলমগীরের মেয়ে


নগর পুড়লে দেবালয় এড়ায় না
শামারুহ মির্জা

আমার বাবা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আপাদমস্তক একজন রাজনীতিবিদ। আমি এই মানুষটি এবং অন্য আরও কিছু প্রসঙ্গ নিয়ে কিছু কথা লিখছি। নিজের বাবাকে নিয়ে লেখা বোধহয় খুব শোভন নয়! আপাতদৃষ্টিতে এ কাজটি আমি আজ করতে চাই এবং করব।
মির্জা আলমগীরের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্ব্বীরা তাকে শ্রদ্ধা করেছেন সবসময়। এলাকায় যে কোনো বিপদে-আপদে প্রথমে ছোটেন তাঁর কাছে, সমাধানের জন্য। তিনি যে দলেরই হোন না কেন, তিনি যে ধর্মেরই হোন না কেন। বলুকাকার একটি কথা মনে পড়ে গেল। নির্বাচনী প্রচারণায় আমি হাঁটছি এক পাড়া থেকে আরেক পাড়ায়। বলুকাকার বাসার সামনে এসেছি, সঙ্গে থাকা দু’জন বললেন—ভেতরে যাওয়ার দরকার নেই, তিনি আব্বুর বিরুদ্ধে প্রচারণা করছেন। আমি তবু এগিয়ে গেলাম। ঘরে ঢুকতেই দেখি বলুকাকা আর ক’জন বসে। বললাম, বলুকাকা, আব্বুর জন্য দোয়া করবেন। বলুকাকা হেসে বললেন—মাগো, রাজনৈতিক কারণে আমি তোমার বাবার বিরোধিতা করছি; কিন্তু মানুষ আলমগীরের জন্য আমার মঙ্গল কামনা নির্ভেজাল, সবসময় ।
নাম বলছি না, তবে আওয়ামী লীগের এক বিখ্যাত বাগ্মী রাজনীতিবিদ এক টকশোতে আব্বুর সঙ্গে বসতে চাননি। তার স্রেফ কথা, এই ভদ্রলোকের সঙ্গে আমি ঝগড়া করতে পারব না। শতভাগ সততার সঙ্গে মানুষটি সারা জীবন রাজনীতি করেছেন; নিজের আদর্শ, নিজের বিশ্বাসের সঙ্গে কখনো সমঝোতা করেননি। শুধু বোঝেননি, এই বাংলাদেশে তিনি বড়ই অনুপযুক্ত এক রাজনীতিবিদ। একটি ‘গণতান্ত্রিক’ সরকার আজ এই মানুষটিকে যেভাবে অপদস্থ করল, তা আসলেই উদাহরণ হয়ে থাকবে চরম অবিচারের।
কী অপরাধ ছিল তাঁর? তিনি বিরোধী দলের মহাসচিব, সরকারের সমালোচনা করতেন, কর্মীদের সংগঠিত করতেন, তাঁদের উজ্জীবিত করতেন সরকারবিরোধী আন্দোলনে প্রকাশ্যে বক্তৃতা দিয়ে, যা পুরো বাংলাদেশের মানুষ দেখত, শুনত, উপলব্ধি করার চেষ্টা করত। তিনি বোমাবাজি করেছেন কিংবা করিয়েছেন? গাড়িতে আগুন দিতে বলেছেন? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মির্জা আলমগীরের চরম শত্রুও তা বিশ্বাস করবে না!
পঁয়ষট্টি বছরের মানুষটাকে আমি প্রায়ই প্রশ্ন করতাম—আব্বু, এই নষ্ট, পচে যাওয়া সমাজে তুমি কেন এখনও রাজনীতি করছ? ’৭১-পূর্ববর্তী রাজনীতির সেই পরিবেশ তো আর নেই। আগেও রাজনীতিবিদদের বন্দি করা হতো, তাদের সঙ্গে যথাযথভাবে ব্যবহার করা হতো, আজ তো কোনো নিয়ম নেই, আজ তো গ্রেফতার করেই রিমান্ডে নিয়ে প্রাগৈতিহাসিকভাবে অত্যাচার করে। এসব বাদ দাও না! আব্বু স্মিত হেসে বলতেন, ‘শেষ চেষ্টাটা করেই দেখি, আমার তো চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই।’ তাঁর খুব প্রিয় কবিতার একটি লাইন প্রায়ই আমাকে বলতেন, ‘এখনি অন্ধ বন্ধ করো না পাখা।’
আমার এই বাবার বিরুদ্ধে এই সরকার দুটি আজব মামলা দিয়েছে। একটিতে অভিযোগ, আব্বু এবং আরও ক’জন মিলে সচিবালয়ে ককটেল ফুটিয়েছে বা ফোটাতে সহযোগিতা করেছে; আরেকটিতে অভিযোগ, তাঁর এবং আরও ক’জনের প্ররোচনায় ২৯ এপ্রিল একটি বাস পোড়ানো হয়েছে। মামলার চার্জশিট পড়ছিলাম। নিজের অজান্তেই হেসে উঠলাম। আমাকে হাসতে দেখে আমার এক স্টুডেন্ট প্রশ্ন করল, কেন হাসছি। ওকে পুরো ঘটনাটা খুলে বললাম। ও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল। তোমার বাবাকে আসামি বানিয়েছে? এই মামলায়? ওর বিস্ময় দেখে বললাম, বাংলাদেশের ৯৯ ভাগ মানুষ তোমার মতোই বিস্মিত! ওকে বললাম—জানো, এই সরকার দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেয়ে সরকার গঠন করেছে, এরা দিনবদলের কথা বলেছে! ওর বিস্ময় আরও বাড়ল। ‘বল কী, এটা নির্বাচিত সরকার! আমি তো ভেবেছি, এটা স্বৈরাচারী সামরিক সরকার।’ খারাপ লাগছিল। বললাম, ‘চিন্তা করো না, ঠিক হয়ে যাবে, সরকার একটু টালমাটাল এখন, ঠিক হয়ে যাবে।’ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ঘটনাটা আসার পরে অনেকেই আমার কাছে জানতে চাইল পুরো ব্যাপারটা। খুব চেষ্টা করলাম দেশের ‘ভাবমূর্তি’ রক্ষা করে বুঝিয়ে বলার। সবাইকে আশ্বাস দিলাম, আমাদের বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা আছে।
নিম্নআদালত আব্বুদের জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠিয়েছে। রায় ঘোষণার পরপরই আব্বুকে ফোন দিলাম। ভীষণ পজিটিভ, হাসছিলেন আমার দুশ্চিন্তা দেখে। হঠাত্ গলাটা বোধহয় আবেগে কিছুটা বুজে এলো। বললেন—‘মাগো, তুমি সাহস হারিয়ো না, আমরা একসঙ্গে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করব, করতেই হবে। যা-ই হোক, তুমি সাহস হারিয়ো না মা।’ আমি আর কথা বলতে পারলাম না। তাঁকে বললাম না, আমি আর স্বপ্ন দেখি না বাংলাদেশ নিয়ে, আমি আর আশা করি না। আমার কেন জানি আজকাল শুধু মনে হয়, ওরা ভিন্নমতাবলম্বী, সাহসী, সত্যবাদী, দেশপ্রেমিক কোনো বাংলাদেশী নাগরিককে মুক্ত থাকতে দেবে না। তুমি যদি স্বাধীনভাবে কথা বলতে চাও, চুপ করে থাকো। এর কিছুই তাঁকে বলা হোল না। শুধু বললাম, ‘তুমি ভালো থেকো আব্বু।’
আমার প্রিয় শিক্ষক প্রফেসর আনোয়ার হোসেনের লেখা আজকাল প্রায়ই পড়ি। সব লেখাতেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তাঁর সংগ্রামের কথা, তাঁর ভাইয়ের আত্মদানের কথা, সোনার বাংলা নিয়ে তাঁর পরিবারের স্বপ্নের কথা। আমারও মনে পড়ে ১/১১-এর পরে তাঁর সাহসী ভূমিকার কথা, আরেকটু আগেকার কথাও মনে পড়ে, শামসুন নাহার হলে পুলিশি অভিযানের বিরুদ্ধে তাঁর সাহসী ভূমিকার কথা। আমরা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। স্যারকে দেখতে গিয়েছিলাম তাঁর বাসায়, তাঁর আগেও স্যারের বাসায় গেছি রাতের খাবার খেতে, ক’জন বন্ধুসহ। কিছুদিন আগে মেইলে পেলাম তাঁর চিঠি, ১/১১-এর পরে কোর্টে দেয়া তাঁর জবানবন্দিসহ, তাঁকে ভোট দেয়ার আবেদন করে।
এই স্যার আজ আর প্রতিবাদ করছেন না, গর্জে উঠছেন না, মিছিলে যাচ্ছেন না। উনি দেখছেন, সেই একই পুলিশি রিমান্ডে রাজনৈতিক নেত্রীকে চার পেয়ে পশুর মতো অত্যাচার করা হচ্ছে, মেয়েটি দাঁড়াতে পারছে না, সেই একই রিমান্ডে মানুষের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া হচ্ছে, সেই একই বাহিনী রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে যাচ্ছে কারও বাবাকে, কারও স্বামীকে, কারও সস্তানকে, ক’দিন পরে বুড়িগঙ্গায় ভেসে উঠছে মানুষের হাত, পা। স্যার কিন্তু কিছুই বলছেন না। স্যার একটি রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস করেন জানি। খুব স্বাভাবিক। প্রতিটি মানুষ রাজনৈতিক। কিন্তু যে কোনো অন্যায় তো অন্যায়ই, যে কোনো অবিচার তো অবিচারই, যে কোনো অত্যাচার তো অত্যাচারই। এসবের তো অন্য কোনো নাম নেই, অন্য কোনো সংজ্ঞা নেই। তবে? তাঁর এই নীরবতার কারণ কী? স্যারের একটি লেখা পড়লাম, কালের কণ্ঠে। তিনি লিখেছেন তাঁর প্রিয় শিক্ষককে নিয়ে। সেই লেখাতেও তিনি কয়েকবার উল্লেখ করলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর অতীত সংগ্রামের কথা। প্রশ্ন করি তাঁকে, আপনার ভাই যে আদর্শের জন্য জীবন দিয়েছেন, তার কতটুকু এই ‘সোনার বাংলা’য় বাস্তবায়ন হয়েছে? প্রশ্ন করি তাঁকে, বর্তমানকে তিনি কীভাবে দেখছেন এবং বর্তমানে তিনি কী করছেন? সংগ্রাম কি চলমান প্রক্রিয়া নয়?
আমি স্যারের কথা উল্লেখ করলাম, কারণ আমি মনে করি বাংলাদেশের বেশিরভাগ বুদ্ধিজীবীকে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন। আমাদের আঁতেলরা এক একটি দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে গিয়ে কেমন জানি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হয়ে যান। একটি মার্কা, একটি রঙ তাঁদের অন্ধ করে দেয়। চোখের সামনে সমাজটা নষ্ট হয়ে যায়, চোখের সামনে মানুষগুলো কুঁকড়ে যায়, চোখের সামনে দেশটা বধ্যভূমিতে পরিণত হয়, এদের কিচ্ছু যায় আসে না। একটু আগেই খবর পেলাম, আনোয়ার স্যার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মনোনীত হয়েছেন, স্যারের সাম্প্রতিক নীরবতার কারণটা এখন বোধগম্য হলো!
সোহেল তাজের পদত্যাগের পর একটি ব্যাপার আমার কাছে পুরো পরিষ্কার। আমরা সবাই এক একটি সোহেল তাজ। আমরা খুব সাহস, উদ্যোগ নিয়ে নেমে পড়ি সমাজ বদলাবো বলে। ফেসবুকে এমন ঝড় তুলি, সে ঝড়েই যেন উড়ে যায় সব অনাচার, রাজনীতিবিদদের গালিগালাজ করে অর্গাজমের সমপরিমাণ আনন্দ বোধ করি, অন্যের পিণ্ডি চটকিয়ে দাবি করি—আমিই আলাদা, আমিই শুদ্ধ। তারপর যখন ত্বধষরঃু নরঃবং, দৈত্যগুলো কামড়ে দেয়, তখন গাল ফুলাই, অবুঝ শিশুর মতো বলি—‘আমি তোমার সঙ্গে আর খেলব না।’ বিশাল একটা চিঠি লিখে পালিয়ে যাই আমেরিকা। ব্যস, নাটকের এখানেই সমাপ্তি।
আমার কিছু উচ্চশিক্ষিত বন্ধু আছে, এরা প্রায়ই বিভিন্ন আড্ডায়, ফেসবুকে রাজনীতিবিদের পিণ্ডি চটকায়। খুব ফ্যাশনের কাজ, নিজের নিরপেক্ষতা প্রমাণের কী সাংঘাতিক চেষ্টা, অনেক হাত তালি। ভাবখানা এমন, ‘হলো তো? দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করা শেষ, এবার চলো, শীশা খেতে যাই।’ সুবিধাবাদের চূড়ান্ত! রাজনীতিবিদদের গালি দিয়ে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলানো যায় না, এ সহজ কথাটি আমার উচ্চশিক্ষিত বন্ধুদের মাথায় ঢোকে না, সম্ভবত ইচ্ছাকৃতভাবেই!
আমার বাবা একটি কথা আজকাল প্রায়ই বলেন, ‘আমাদের দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিবর্তনে একটি অন্যতম মূল ভূমিকা রেখেছে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত। পুঁজিবাদ আর ভোগবাদের প্রভাবে এই মধ্যবিত্ত আজ নির্লিপ্ত হয়ে গেছে, সুবিধাজনক বলে।’ আর আমার মাথা বলে, এটা খুব ভয়ঙ্কর একটা অবস্থা। কোনো নিয়মতান্ত্রিকভাবে, সভ্যভাবে এই অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়। আজ ব্যক্তি মির্জা আলমগীরের ওপর যে অন্যায় হলো, যে অবিচার হোল—এর ফল ভোগ করতে হবে পুরো জাতিকে। এটা পরিষ্কার। আজ অথবা কাল। নগর পুড়লে দেবালয় এড়ায় না।
লেখক : কলামিস্ট, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষারত
নগর পুড়লে দেবালয় এড়ায় না
শামারুহ মির্জা

আমার বাবা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আপাদমস্তক একজন রাজনীতিবিদ। আমি এই মানুষটি এবং অন্য আরও কিছু প্রসঙ্গ নিয়ে কিছু কথা লিখছি। নিজের বাবাকে নিয়ে লেখা বোধহয় খুব শোভন নয়! আপাতদৃষ্টিতে এ কাজটি আমি আজ করতে চাই এবং করব।
মির্জা আলমগীরের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্ব্বীরা তাকে শ্রদ্ধা করেছেন সবসময়। এলাকায় যে কোনো বিপদে-আপদে প্রথমে ছোটেন তাঁর কাছে, সমাধানের জন্য। তিনি যে দলেরই হোন না কেন, তিনি যে ধর্মেরই হোন না কেন। বলুকাকার একটি কথা মনে পড়ে গেল। নির্বাচনী প্রচারণায় আমি হাঁটছি এক পাড়া থেকে আরেক পাড়ায়। বলুকাকার বাসার সামনে এসেছি, সঙ্গে থাকা দু’জন বললেন—ভেতরে যাওয়ার দরকার নেই, তিনি আব্বুর বিরুদ্ধে প্রচারণা করছেন। আমি তবু এগিয়ে গেলাম। ঘরে ঢুকতেই দেখি বলুকাকা আর ক’জন বসে। বললাম, বলুকাকা, আব্বুর জন্য দোয়া করবেন। বলুকাকা হেসে বললেন—মাগো, রাজনৈতিক কারণে আমি তোমার বাবার বিরোধিতা করছি; কিন্তু মানুষ আলমগীরের জন্য আমার মঙ্গল কামনা নির্ভেজাল, সবসময় ।
নাম বলছি না, তবে আওয়ামী লীগের এক বিখ্যাত বাগ্মী রাজনীতিবিদ এক টকশোতে আব্বুর সঙ্গে বসতে চাননি। তার স্রেফ কথা, এই ভদ্রলোকের সঙ্গে আমি ঝগড়া করতে পারব না। শতভাগ সততার সঙ্গে মানুষটি সারা জীবন রাজনীতি করেছেন; নিজের আদর্শ, নিজের বিশ্বাসের সঙ্গে কখনো সমঝোতা করেননি। শুধু বোঝেননি, এই বাংলাদেশে তিনি বড়ই অনুপযুক্ত এক রাজনীতিবিদ। একটি ‘গণতান্ত্রিক’ সরকার আজ এই মানুষটিকে যেভাবে অপদস্থ করল, তা আসলেই উদাহরণ হয়ে থাকবে চরম অবিচারের।
কী অপরাধ ছিল তাঁর? তিনি বিরোধী দলের মহাসচিব, সরকারের সমালোচনা করতেন, কর্মীদের সংগঠিত করতেন, তাঁদের উজ্জীবিত করতেন সরকারবিরোধী আন্দোলনে প্রকাশ্যে বক্তৃতা দিয়ে, যা পুরো বাংলাদেশের মানুষ দেখত, শুনত, উপলব্ধি করার চেষ্টা করত। তিনি বোমাবাজি করেছেন কিংবা করিয়েছেন? গাড়িতে আগুন দিতে বলেছেন? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মির্জা আলমগীরের চরম শত্রুও তা বিশ্বাস করবে না!
পঁয়ষট্টি বছরের মানুষটাকে আমি প্রায়ই প্রশ্ন করতাম—আব্বু, এই নষ্ট, পচে যাওয়া সমাজে তুমি কেন এখনও রাজনীতি করছ? ’৭১-পূর্ববর্তী রাজনীতির সেই পরিবেশ তো আর নেই। আগেও রাজনীতিবিদদের বন্দি করা হতো, তাদের সঙ্গে যথাযথভাবে ব্যবহার করা হতো, আজ তো কোনো নিয়ম নেই, আজ তো গ্রেফতার করেই রিমান্ডে নিয়ে প্রাগৈতিহাসিকভাবে অত্যাচার করে। এসব বাদ দাও না! আব্বু স্মিত হেসে বলতেন, ‘শেষ চেষ্টাটা করেই দেখি, আমার তো চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই।’ তাঁর খুব প্রিয় কবিতার একটি লাইন প্রায়ই আমাকে বলতেন, ‘এখনি অন্ধ বন্ধ করো না পাখা।’
আমার এই বাবার বিরুদ্ধে এই সরকার দুটি আজব মামলা দিয়েছে। একটিতে অভিযোগ, আব্বু এবং আরও ক’জন মিলে সচিবালয়ে ককটেল ফুটিয়েছে বা ফোটাতে সহযোগিতা করেছে; আরেকটিতে অভিযোগ, তাঁর এবং আরও ক’জনের প্ররোচনায় ২৯ এপ্রিল একটি বাস পোড়ানো হয়েছে। মামলার চার্জশিট পড়ছিলাম। নিজের অজান্তেই হেসে উঠলাম। আমাকে হাসতে দেখে আমার এক স্টুডেন্ট প্রশ্ন করল, কেন হাসছি। ওকে পুরো ঘটনাটা খুলে বললাম। ও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল। তোমার বাবাকে আসামি বানিয়েছে? এই মামলায়? ওর বিস্ময় দেখে বললাম, বাংলাদেশের ৯৯ ভাগ মানুষ তোমার মতোই বিস্মিত! ওকে বললাম—জানো, এই সরকার দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেয়ে সরকার গঠন করেছে, এরা দিনবদলের কথা বলেছে! ওর বিস্ময় আরও বাড়ল। ‘বল কী, এটা নির্বাচিত সরকার! আমি তো ভেবেছি, এটা স্বৈরাচারী সামরিক সরকার।’ খারাপ লাগছিল। বললাম, ‘চিন্তা করো না, ঠিক হয়ে যাবে, সরকার একটু টালমাটাল এখন, ঠিক হয়ে যাবে।’ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ঘটনাটা আসার পরে অনেকেই আমার কাছে জানতে চাইল পুরো ব্যাপারটা। খুব চেষ্টা করলাম দেশের ‘ভাবমূর্তি’ রক্ষা করে বুঝিয়ে বলার। সবাইকে আশ্বাস দিলাম, আমাদের বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা আছে।
নিম্নআদালত আব্বুদের জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠিয়েছে। রায় ঘোষণার পরপরই আব্বুকে ফোন দিলাম। ভীষণ পজিটিভ, হাসছিলেন আমার দুশ্চিন্তা দেখে। হঠাত্ গলাটা বোধহয় আবেগে কিছুটা বুজে এলো। বললেন—‘মাগো, তুমি সাহস হারিয়ো না, আমরা একসঙ্গে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করব, করতেই হবে। যা-ই হোক, তুমি সাহস হারিয়ো না মা।’ আমি আর কথা বলতে পারলাম না। তাঁকে বললাম না, আমি আর স্বপ্ন দেখি না বাংলাদেশ নিয়ে, আমি আর আশা করি না। আমার কেন জানি আজকাল শুধু মনে হয়, ওরা ভিন্নমতাবলম্বী, সাহসী, সত্যবাদী, দেশপ্রেমিক কোনো বাংলাদেশী নাগরিককে মুক্ত থাকতে দেবে না। তুমি যদি স্বাধীনভাবে কথা বলতে চাও, চুপ করে থাকো। এর কিছুই তাঁকে বলা হোল না। শুধু বললাম, ‘তুমি ভালো থেকো আব্বু।’
আমার প্রিয় শিক্ষক প্রফেসর আনোয়ার হোসেনের লেখা আজকাল প্রায়ই পড়ি। সব লেখাতেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তাঁর সংগ্রামের কথা, তাঁর ভাইয়ের আত্মদানের কথা, সোনার বাংলা নিয়ে তাঁর পরিবারের স্বপ্নের কথা। আমারও মনে পড়ে ১/১১-এর পরে তাঁর সাহসী ভূমিকার কথা, আরেকটু আগেকার কথাও মনে পড়ে, শামসুন নাহার হলে পুলিশি অভিযানের বিরুদ্ধে তাঁর সাহসী ভূমিকার কথা। আমরা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। স্যারকে দেখতে গিয়েছিলাম তাঁর বাসায়, তাঁর আগেও স্যারের বাসায় গেছি রাতের খাবার খেতে, ক’জন বন্ধুসহ। কিছুদিন আগে মেইলে পেলাম তাঁর চিঠি, ১/১১-এর পরে কোর্টে দেয়া তাঁর জবানবন্দিসহ, তাঁকে ভোট দেয়ার আবেদন করে।
এই স্যার আজ আর প্রতিবাদ করছেন না, গর্জে উঠছেন না, মিছিলে যাচ্ছেন না। উনি দেখছেন, সেই একই পুলিশি রিমান্ডে রাজনৈতিক নেত্রীকে চার পেয়ে পশুর মতো অত্যাচার করা হচ্ছে, মেয়েটি দাঁড়াতে পারছে না, সেই একই রিমান্ডে মানুষের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া হচ্ছে, সেই একই বাহিনী রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে যাচ্ছে কারও বাবাকে, কারও স্বামীকে, কারও সস্তানকে, ক’দিন পরে বুড়িগঙ্গায় ভেসে উঠছে মানুষের হাত, পা। স্যার কিন্তু কিছুই বলছেন না। স্যার একটি রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস করেন জানি। খুব স্বাভাবিক। প্রতিটি মানুষ রাজনৈতিক। কিন্তু যে কোনো অন্যায় তো অন্যায়ই, যে কোনো অবিচার তো অবিচারই, যে কোনো অত্যাচার তো অত্যাচারই। এসবের তো অন্য কোনো নাম নেই, অন্য কোনো সংজ্ঞা নেই। তবে? তাঁর এই নীরবতার কারণ কী? স্যারের একটি লেখা পড়লাম, কালের কণ্ঠে। তিনি লিখেছেন তাঁর প্রিয় শিক্ষককে নিয়ে। সেই লেখাতেও তিনি কয়েকবার উল্লেখ করলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর অতীত সংগ্রামের কথা। প্রশ্ন করি তাঁকে, আপনার ভাই যে আদর্শের জন্য জীবন দিয়েছেন, তার কতটুকু এই ‘সোনার বাংলা’য় বাস্তবায়ন হয়েছে? প্রশ্ন করি তাঁকে, বর্তমানকে তিনি কীভাবে দেখছেন এবং বর্তমানে তিনি কী করছেন? সংগ্রাম কি চলমান প্রক্রিয়া নয়?
আমি স্যারের কথা উল্লেখ করলাম, কারণ আমি মনে করি বাংলাদেশের বেশিরভাগ বুদ্ধিজীবীকে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন। আমাদের আঁতেলরা এক একটি দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে গিয়ে কেমন জানি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হয়ে যান। একটি মার্কা, একটি রঙ তাঁদের অন্ধ করে দেয়। চোখের সামনে সমাজটা নষ্ট হয়ে যায়, চোখের সামনে মানুষগুলো কুঁকড়ে যায়, চোখের সামনে দেশটা বধ্যভূমিতে পরিণত হয়, এদের কিচ্ছু যায় আসে না। একটু আগেই খবর পেলাম, আনোয়ার স্যার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মনোনীত হয়েছেন, স্যারের সাম্প্রতিক নীরবতার কারণটা এখন বোধগম্য হলো!
সোহেল তাজের পদত্যাগের পর একটি ব্যাপার আমার কাছে পুরো পরিষ্কার। আমরা সবাই এক একটি সোহেল তাজ। আমরা খুব সাহস, উদ্যোগ নিয়ে নেমে পড়ি সমাজ বদলাবো বলে। ফেসবুকে এমন ঝড় তুলি, সে ঝড়েই যেন উড়ে যায় সব অনাচার, রাজনীতিবিদদের গালিগালাজ করে অর্গাজমের সমপরিমাণ আনন্দ বোধ করি, অন্যের পিণ্ডি চটকিয়ে দাবি করি—আমিই আলাদা, আমিই শুদ্ধ। তারপর যখন ত্বধষরঃু নরঃবং, দৈত্যগুলো কামড়ে দেয়, তখন গাল ফুলাই, অবুঝ শিশুর মতো বলি—‘আমি তোমার সঙ্গে আর খেলব না।’ বিশাল একটা চিঠি লিখে পালিয়ে যাই আমেরিকা। ব্যস, নাটকের এখানেই সমাপ্তি।
আমার কিছু উচ্চশিক্ষিত বন্ধু আছে, এরা প্রায়ই বিভিন্ন আড্ডায়, ফেসবুকে রাজনীতিবিদের পিণ্ডি চটকায়। খুব ফ্যাশনের কাজ, নিজের নিরপেক্ষতা প্রমাণের কী সাংঘাতিক চেষ্টা, অনেক হাত তালি। ভাবখানা এমন, ‘হলো তো? দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করা শেষ, এবার চলো, শীশা খেতে যাই।’ সুবিধাবাদের চূড়ান্ত! রাজনীতিবিদদের গালি দিয়ে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলানো যায় না, এ সহজ কথাটি আমার উচ্চশিক্ষিত বন্ধুদের মাথায় ঢোকে না, সম্ভবত ইচ্ছাকৃতভাবেই!
আমার বাবা একটি কথা আজকাল প্রায়ই বলেন, ‘আমাদের দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিবর্তনে একটি অন্যতম মূল ভূমিকা রেখেছে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত। পুঁজিবাদ আর ভোগবাদের প্রভাবে এই মধ্যবিত্ত আজ নির্লিপ্ত হয়ে গেছে, সুবিধাজনক বলে।’ আর আমার মাথা বলে, এটা খুব ভয়ঙ্কর একটা অবস্থা। কোনো নিয়মতান্ত্রিকভাবে, সভ্যভাবে এই অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়। আজ ব্যক্তি মির্জা আলমগীরের ওপর যে অন্যায় হলো, যে অবিচার হোল—এর ফল ভোগ করতে হবে পুরো জাতিকে। এটা পরিষ্কার। আজ অথবা কাল। নগর পুড়লে দেবালয় এড়ায় না।
লেখক : কলামিস্ট, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষারত