বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৩

ছাত্রলীগের দেহ ব্যবসা

Zahadur Rahman added a new photo.
Photo

mojiborer fas kotha

photo.
এই তথ্যগুলো মার্কিন দূতাবাস তাদের ফরেন অ্যাফেয়ার্সে পাঠায়।

সারসংক্ষেপঃ জানুয়ারী ২৫,১৯৭৫ তারিখের সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাশের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান এখন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট। এই আমূল (sweeping) পরিবর্তন হয় নামকা-ওয়াস্তে (minuscale) বিরোধীদলের ওয়াক-আউটের মধ্য দিয়ে, কোন প্রকার আলোচনা ছাড়াই। সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি এবং একটি মন্ত্রীপরিষদ সম্বলিত সরকারব্যাবস্থা চালু হয়। মন্ত্রীপরিষদ সদস্য হবার জন্য পার্লামেন্টের সদস্য হওয়া জরুরূ ছিল না। সংশোধনীর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের একক এবং নিরংকুশ ইচ্ছায় সকল রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে একটি মাত্র দল গঠন করার বিধান রাখা হয়েছে। আইন পাশ হওয়ার সাথে সাথেই স্বয়ংক্রিয়ভাবেই মুজিব পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট বনে যান, জাতীয় সংসদের মেয়াদও পাঁচ বছর বেড়ে যায়। দেশের সমস্যা এবং শিক্ষিত সমাজের দুর্নীতি-অনিয়ম মোকাবিলায় ব্যবস্থার পরিবর্তন জরুরী ছিল বলে মুজিব সাফাই দেন।

পরের সপ্তাহে জাতীয় সংসদও আজকে রুটিনমাফিক জরুরী আইন অনুমদন করে প্রেসিডেন্টের গত সপ্তাহে গৃহীত পদক্ষেপকে বৈধতা দিয়েছে।
END SUMMARY
১,একটি সুপরিকল্পিতভাবে সাজানো দুঘন্টার অধিবেশনে জাতীয় সংসদে ২৫ জানুয়ারি সকালে প্রথমে প্রেসিডেন্টের গতমাসের আদেশকে বৈধতা দিয়ে একটি জরূরী আইনের বিল পাশ করে। দ্রুত উত্থাপিত এবং পাশকৃত চথুর্থ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। আলোচনার সুযোগ না পাওয়ায় বিরোধীদল ওয়াক-আউট করে; এর ফলে দুইবারের ভোটাভুটির পরও সংশোধনীটি ২৯২-০ ভোটে পাশ হয়েছে বলে ধরা হয়। মুজিবের, যিনি ইতমধ্যেই স্বতসিদ্ধভাবে একটিমাত্র অধিবেশনের মাধ্যমে সংশোধনীর যুগপৎ পাশ ও কার্যকরিতার বলে প্রেসিডেন্ট হয়ে গিয়েছিলেন, শপথ অনুষ্ঠিত হওয়া নির্ধারিত হয়েছে দুপুরে অনির্দিষ্টকালের জন্য সংসদ মুলতবি করে দেয়ার পরপরই, এক সংক্ষিপ্ত গোপন শপথ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ।
সংবিধানের মূল পরিবর্তন গুলো নিম্নরূপঃ

২,রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতিঃ পার্ট ৪, চ্যাপ্টার ১, নির্বাহী বিভাগ, এবং চ্যাপ্টার দুই, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীসভা-কে দুটি নতুন অধ্যায় দিয়ে স্থানচ্যুত করা হয়েছে যে অধ্যায়গুলোর নাম হচ্ছে ‘রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতি’ এবং ‘কাউন্সিল-অব-মিনিস্টারস’,রাষ্ট্রপতি(and head of the state) নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হবার কথা থাকলেও, শেষ আর্টিকেলের একটি বিশেষ ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে যার মাধ্যমে বর্তমান রাষ্ট্রপতি (মোহাম্মাদুল্লাহ) অভিসংসিত বলে গন্য হবেন এবং তদস্থলে মুজিবুর রহমান নির্বাচিত হয়েছেন বলে ধরা হবে। উপ-রাষ্ট্রপতি নিয়গ দেবেন রাষ্ট্রপতি, দুজনের মেয়াদই পাঁচ বছর, তাদের কেউই সংসদ সদস্য হতে পারবেন না (মুজিব আজকেই তার সংসদ সদস্য পদে ইস্তফা দিয়েছেন ),দাপ্তরিক কাজের জন্য প্রেসিডেন্ট বা ভাইস-প্রেসিডেন্ট কার কাছে জবাবদিহি করবেন না,অযোগ্যতার দায়েও পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্টকে অভিসংশিত বা বরখাস্ত করতে পারবে না , প্রেসিডেন্ট বা ভাইস-প্রেসিডেন্ট এর যেকোন একজন ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় স্পিকার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না। প্রজাতন্ত্রের সকল নির্বাহি ক্ষমতা প্রেসিডেন্ট প্রয়োগ করবেন এবং সাজা মওকুফ ও দন্ড পরিবর্তনের সকল ক্ষমতা তার হাতে থাকবে।
৩,দি কাউন্সিল অব মিনিস্টারসঃ
প্রেসিডেন্ট নিয়গকৃত এবং তার খেয়াল-খুশিমত একতি মন্ত্রীপরিষদ থাকবে যারা তাকে সাহায্য করবে এবং সীমিত ক্ষাত্রে পরামর্শ দেবে।

প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত এবং তার পারিষদের মত কোন কোর্ট চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না। একজন প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রীরা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি এবং প্রতিমন্ত্রী, যদি প্রয়োজন হয় তাহলে এম.পি. দের মধ্য থেকে বা এম.পি. হবার যোগ্য এমন কার মধ্য থেকে ন্যগকৃত হবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অন্যান্য প্রতিমন্ত্রীরা কাউন্সিলের সদস্য হবেন না। সকল মন্ত্রীরাই পার্লামেন্তে কথা বলতে পারবেন, যারা এম.পি. কেবল তারা ভোট দিতে পারবেন।
৪,লোকাল গভর্ন্মেন্টঃ সংশধনী লোকাল গভর্নমেন্টের ধারনা বিলুপ্ত করে এবং এখানে অন্য কিছু প্রতিস্থাপনও করে নি।
৫,দি পার্লামেন্টঃ এই সংশোধনী পার্লামেন্টের দ্বারা সরকারকে সমালচনার ক্ষমতা একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে। যদি কেউ দল থেকে পদত্যাগ করে তাহলে পার্লামেন্টে তার আসনও ছাড়তে হবে, এই বিধানের সাথে যুক্ত হয়েছে যদি কোন এম.পি. ভট দেয়া থেকে বিরত থাকে বা ভোটের সময় পার্টির অনুমতি ছাড়া সঙ্গসদে অনুপস্থিত থাকে তাহলে ধরে নেয়া হবে তিনি পার্টির বিরুদ্ধ মতে পার্লামেন্টে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ১২০
দিনের মধ্যে পার্লামেণ্ট আবার মিলিত হবে এই বিধান বাদ দিয়ে বছরে যে কোন সময় দুইবার অধিবেশন ডাকলেই যথেষ্ট হবে বলে দেয়া হয়েছে।
৬,জুডিশীয়ারীঃ আগের মত এখনব আর বিচারক বা ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতিকে সুপ্রিমকোর্টের প্রধানবিচারপতির পরামর্শ নিতে হবে না;ল তনি যাকে ইচ্ছা নিয়োগ দেবেন। ট্রাইব্যুনালগুলকে হাইকোর্টের নিয়ন্ত্রন থেকে মুক্ত করা হয়। আইন বিভাগের সকল কর্মকর্তা, কর্মচারি এবং ম্যাজিষ্ট্রেটরা সুপ্রিমকোর্ট নয়, বরং তাদের আচরন ও শৃংখলার জন্য প্রেসিডেন্টের কাছে দায়ি থাকবেন। যদিও এক জায়াগায় বলা হয়েছে,
---
“বিচারকরা বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগে স্বাধীন থাকবেন। এখন থেকে প্রেসিডেন্ট যে কোন বিচারককে দুর্ব্যবহার বা অযোগ্যতার দায়ে পদচ্যুত করতে পারবেন।”যদিও এর আগে বিচারককে পদচ্যুত করতে সংসদের দু-তৃতিয়াংশ এর অনুমোদন লাগত।

source=>
https://www.wikileaks.org/plusd/cables/1975DACCA00457_b.html
এই তথ্যগুলো মার্কিন দূতাবাস তাদের ফরেন অ্যাফেয়ার্সে পাঠায়।

সারসংক্ষেপঃ জানুয়ারী ২৫,১৯৭৫ তারিখের সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাশের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান এখন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট। এই আমূল (sweeping) পরিবর্তন হয় নামকা-ওয়াস্তে (minuscale) বিরোধীদলের ওয়াক-আউটের মধ্য দিয়ে, কোন প্রকার আলোচনা ছাড়াই। সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি এবং একটি মন্ত্রীপরিষদ সম্বলিত সরকারব্যাবস্থা চালু হয়। মন্ত্রীপরিষদ সদস্য হবার জন্য পার্লামেন্টের সদস্য হওয়া জরুরূ ছিল না। সংশোধনীর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের একক এবং নিরংকুশ ইচ্ছায় সকল রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে একটি মাত্র দল গঠন করার বিধান রাখা হয়েছে। আইন পাশ হওয়ার সাথে সাথেই স্বয়ংক্রিয়ভাবেই মুজিব পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট বনে যান, জাতীয় সংসদের মেয়াদও পাঁচ বছর বেড়ে যায়। দেশের সমস্যা এবং শিক্ষিত সমাজের দুর্নীতি-অনিয়ম মোকাবিলায় ব্যবস্থার পরিবর্তন জরুরী ছিল বলে মুজিব সাফাই দেন।

পরের সপ্তাহে জাতীয় সংসদও আজকে রুটিনমাফিক জরুরী আইন অনুমদন করে প্রেসিডেন্টের গত সপ্তাহে গৃহীত পদক্ষেপকে বৈধতা দিয়েছে।
END SUMMARY
১,একটি সুপরিকল্পিতভাবে সাজানো দুঘন্টার অধিবেশনে জাতীয় সংসদে ২৫ জানুয়ারি সকালে প্রথমে প্রেসিডেন্টের গতমাসের আদেশকে বৈধতা দিয়ে একটি জরূরী আইনের বিল পাশ করে। দ্রুত উত্থাপিত এবং পাশকৃত চথুর্থ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। আলোচনার সুযোগ না পাওয়ায় বিরোধীদল ওয়াক-আউট করে; এর ফলে দুইবারের ভোটাভুটির পরও সংশোধনীটি ২৯২-০ ভোটে পাশ হয়েছে বলে ধরা হয়। মুজিবের, যিনি ইতমধ্যেই স্বতসিদ্ধভাবে একটিমাত্র অধিবেশনের মাধ্যমে সংশোধনীর যুগপৎ পাশ ও কার্যকরিতার বলে প্রেসিডেন্ট হয়ে গিয়েছিলেন, শপথ অনুষ্ঠিত হওয়া নির্ধারিত হয়েছে দুপুরে অনির্দিষ্টকালের জন্য সংসদ মুলতবি করে দেয়ার পরপরই, এক সংক্ষিপ্ত গোপন শপথ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ।
সংবিধানের মূল পরিবর্তন গুলো নিম্নরূপঃ

২,রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতিঃ পার্ট ৪, চ্যাপ্টার ১, নির্বাহী বিভাগ, এবং চ্যাপ্টার দুই, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীসভা-কে দুটি নতুন অধ্যায় দিয়ে স্থানচ্যুত করা হয়েছে যে অধ্যায়গুলোর নাম হচ্ছে ‘রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতি’ এবং ‘কাউন্সিল-অব-মিনিস্টারস’,রাষ্ট্রপতি(and head of the state) নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হবার কথা থাকলেও, শেষ আর্টিকেলের একটি বিশেষ ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে যার মাধ্যমে বর্তমান রাষ্ট্রপতি (মোহাম্মাদুল্লাহ) অভিসংসিত বলে গন্য হবেন এবং তদস্থলে মুজিবুর রহমান নির্বাচিত হয়েছেন বলে ধরা হবে। উপ-রাষ্ট্রপতি নিয়গ দেবেন রাষ্ট্রপতি, দুজনের মেয়াদই পাঁচ বছর, তাদের কেউই সংসদ সদস্য হতে পারবেন না (মুজিব আজকেই তার সংসদ সদস্য পদে ইস্তফা দিয়েছেন ),দাপ্তরিক কাজের জন্য প্রেসিডেন্ট বা ভাইস-প্রেসিডেন্ট কার কাছে জবাবদিহি করবেন না,অযোগ্যতার দায়েও পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্টকে অভিসংশিত বা বরখাস্ত করতে পারবে না , প্রেসিডেন্ট বা ভাইস-প্রেসিডেন্ট এর যেকোন একজন ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় স্পিকার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না। প্রজাতন্ত্রের সকল নির্বাহি ক্ষমতা প্রেসিডেন্ট প্রয়োগ করবেন এবং সাজা মওকুফ ও দন্ড পরিবর্তনের সকল ক্ষমতা তার হাতে থাকবে।
৩,দি কাউন্সিল অব মিনিস্টারসঃ
প্রেসিডেন্ট নিয়গকৃত এবং তার খেয়াল-খুশিমত একতি মন্ত্রীপরিষদ থাকবে যারা তাকে সাহায্য করবে এবং সীমিত ক্ষাত্রে পরামর্শ দেবে।

প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত এবং তার পারিষদের মত কোন কোর্ট চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না। একজন প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রীরা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি এবং প্রতিমন্ত্রী, যদি প্রয়োজন হয় তাহলে এম.পি. দের মধ্য থেকে বা এম.পি. হবার যোগ্য এমন কার মধ্য থেকে ন্যগকৃত হবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অন্যান্য প্রতিমন্ত্রীরা কাউন্সিলের সদস্য হবেন না। সকল মন্ত্রীরাই পার্লামেন্তে কথা বলতে পারবেন, যারা এম.পি. কেবল তারা ভোট দিতে পারবেন।
৪,লোকাল গভর্ন্মেন্টঃ সংশধনী লোকাল গভর্নমেন্টের ধারনা বিলুপ্ত করে এবং এখানে অন্য কিছু প্রতিস্থাপনও করে নি।
৫,দি পার্লামেন্টঃ এই সংশোধনী পার্লামেন্টের দ্বারা সরকারকে সমালচনার ক্ষমতা একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে। যদি কেউ দল থেকে পদত্যাগ করে তাহলে পার্লামেন্টে তার আসনও ছাড়তে হবে, এই বিধানের সাথে যুক্ত হয়েছে যদি কোন এম.পি. ভট দেয়া থেকে বিরত থাকে বা ভোটের সময় পার্টির অনুমতি ছাড়া সঙ্গসদে অনুপস্থিত থাকে তাহলে ধরে নেয়া হবে তিনি পার্টির বিরুদ্ধ মতে পার্লামেন্টে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ১২০
দিনের মধ্যে পার্লামেণ্ট আবার মিলিত হবে এই বিধান বাদ দিয়ে বছরে যে কোন সময় দুইবার অধিবেশন ডাকলেই যথেষ্ট হবে বলে দেয়া হয়েছে।
৬,জুডিশীয়ারীঃ আগের মত এখনব আর বিচারক বা ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতিকে সুপ্রিমকোর্টের প্রধানবিচারপতির পরামর্শ নিতে হবে না;ল তনি যাকে ইচ্ছা নিয়োগ দেবেন। ট্রাইব্যুনালগুলকে হাইকোর্টের নিয়ন্ত্রন থেকে মুক্ত করা হয়। আইন বিভাগের সকল কর্মকর্তা, কর্মচারি এবং ম্যাজিষ্ট্রেটরা সুপ্রিমকোর্ট নয়, বরং তাদের আচরন ও শৃংখলার জন্য প্রেসিডেন্টের কাছে দায়ি থাকবেন। যদিও এক জায়াগায় বলা হয়েছে,
---
“বিচারকরা বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগে স্বাধীন থাকবেন। এখন থেকে প্রেসিডেন্ট যে কোন বিচারককে দুর্ব্যবহার বা অযোগ্যতার দায়ে পদচ্যুত করতে পারবেন।”যদিও এর আগে বিচারককে পদচ্যুত করতে সংসদের দু-তৃতিয়াংশ এর অনুমোদন লাগত।

source=>
https://www.wikileaks.org/plusd/cables/1975DACCA00457_b.html

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৩

mobile emergency


Photo

CHOR

ল্লা - Basherkella added a new photo.
Photo

MOJIBOR

Bangladesh - বাংলাদেশের চোখ's photo.
এই তথ্যগুলো মার্কিন দূতাবাস তাদের ফরেন অ্যাফেয়ার্সে পাঠায়।

সারসংক্ষেপঃ জানুয়ারী ২৫,১৯৭৫ তারিখের সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাশের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান এখন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট। এই আমূল (sweeping) পরিবর্তন হয় নামকা-ওয়াস্তে (minuscale) বিরোধীদলের ওয়াক-আউটের মধ্য দিয়ে, কোন প্রকার আলোচনা ছাড়াই। সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি এবং একটি মন্ত্রীপরিষদ সম্বলিত সরকারব্যাবস্থা চালু হয়। মন্ত্রীপরিষদ সদস্য হবার জন্য পার্লামেন্টের সদস্য হওয়া জরুরূ ছিল না। সংশোধনীর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের একক এবং নিরংকুশ ইচ্ছায় সকল রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে একটি মাত্র দল গঠন করার বিধান রাখা হয়েছে। আইন পাশ হওয়ার সাথে সাথেই স্বয়ংক্রিয়ভাবেই মুজিব পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট বনে যান, জাতীয় সংসদের মেয়াদও পাঁচ বছর বেড়ে যায়। দেশের সমস্যা এবং শিক্ষিত সমাজের দুর্নীতি-অনিয়ম মোকাবিলায় ব্যবস্থার পরিবর্তন জরুরী ছিল বলে মুজিব সাফাই দেন।

LIMITED OFFICIAL USE

LIMITED OFFICIAL USE

PAGE 02 DACCA 00457 01 OF 02 251135Z

পরের সপ্তাহে জাতীয় সংসদও আজকে রুটিনমাফিক জরুরী আইন অনুমদন করে প্রেসিডেন্টের গত সপ্তাহে গৃহীত পদক্ষেপকে বৈধতা দিয়েছে।
END SUMMARY
১,একটি সুপরিকল্পিতভাবে সাজানো দুঘন্টার অধিবেশনে জাতীয় সংসদে ২৫ জানুয়ারি সকালে প্রথমে প্রেসিডেন্টের গতমাসের আদেশকে বৈধতা দিয়ে একটি জরূরী আইনের বিল পাশ করে। দ্রুত উত্থাপিত এবং পাশকৃত চথুর্থ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। আলোচনার সুযোগ না পাওয়ায় বিরোধীদল ওয়াক-আউট করে; এর ফলে দুইবারের ভোটাভুটির পরও সংশোধনীটি ২৯২-০ ভোটে পাশ হয়েছে বলে ধরা হয়। মুজিবের, যিনি ইতমধ্যেই স্বতসিদ্ধভাবে একটিমাত্র অধিবেশনের মাধ্যমে সংশোধনীর যুগপৎ পাশ ও কার্যকরিতার বলে প্রেসিডেন্ট হয়ে গিয়েছিলেন, শপথ অনুষ্ঠিত হওয়া নির্ধারিত হয়েছে দুপুরে অনির্দিষ্টকালের জন্য সংসদ মুলতবি করে দেয়ার পরপরই, এক সংক্ষিপ্ত গোপন শপথ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ।
সংবিধানের মূল পরিবর্তন গুলো নিম্নরূপঃ

২,রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতিঃ পার্ট ৪, চ্যাপ্টার ১, নির্বাহী বিভাগ, এবং চ্যাপ্টার দুই, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীসভা-কে দুটি নতুন অধ্যায় দিয়ে স্থানচ্যুত করা হয়েছে যে অধ্যায়গুলোর নাম হচ্ছে ‘রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতি’ এবং ‘কাউন্সিল-অব-মিনিস্টারস’,রাষ্ট্রপতি(and head of the state) নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হবার কথা থাকলেও, শেষ আর্টিকেলের একটি বিশেষ ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে যার মাধ্যমে বর্তমান রাষ্ট্রপতি (মোহাম্মাদুল্লাহ) অভিসংসিত বলে গন্য হবেন এবং তদস্থলে মুজিবুর রহমান নির্বাচিত হয়েছেন বলে ধরা হবে। উপ-রাষ্ট্রপতি নিয়গ দেবেন রাষ্ট্রপতি, দুজনের মেয়াদই পাঁচ বছর, তাদের কেউই সংসদ সদস্য হতে পারবেন না (মুজিব আজকেই তার সংসদ সদস্য পদে ইস্তফা দিয়েছেন ),দাপ্তরিক কাজের জন্য প্রেসিডেন্ট বা ভাইস-প্রেসিডেন্ট কার কাছে জবাবদিহি করবেন না,অযোগ্যতার দায়েও পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্টকে অভিসংশিত বা বরখাস্ত করতে পারবে না , প্রেসিডেন্ট বা ভাইস-প্রেসিডেন্ট এর যেকোন একজন ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় স্পিকার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না। প্রজাতন্ত্রের সকল নির্বাহি ক্ষমতা প্রেসিডেন্ট প্রয়োগ করবেন এবং সাজা মওকুফ ও দন্ড পরিবর্তনের সকল ক্ষমতা তার হাতে থাকবে।
৩,দি কাউন্সিল অব মিনিস্টারসঃ
প্রেসিডেন্ট নিয়গকৃত এবং তার খেয়াল-খুশিমত একতি মন্ত্রীপরিষদ থাকবে যারা তাকে সাহায্য করবে এবং সীমিত ক্ষাত্রে পরামর্শ দেবে।
LIMITED OFFICIAL USE

LIMITED OFFICIAL USE

PAGE 03 DACCA 00457 01 OF 02 251135Z
প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত এবং তার পারিষদের মত কোন কোর্ট চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না। একজন প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রীরা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি এবং প্রতিমন্ত্রী, যদি প্রয়োজন হয় তাহলে এম.পি. দের মধ্য থেকে বা এম.পি. হবার যোগ্য এমন কার মধ্য থেকে ন্যগকৃত হবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অন্যান্য প্রতিমন্ত্রীরা কাউন্সিলের সদস্য হবেন না। সকল মন্ত্রীরাই পার্লামেন্তে কথা বলতে পারবেন, যারা এম.পি. কেবল তারা ভোট দিতে পারবেন।
৪,লোকাল গভর্ন্মেন্টঃ সংশধনী লোকাল গভর্নমেন্টের ধারনা বিলুপ্ত করে এবং এখানে অন্য কিছু প্রতিস্থাপনও করে নি।
৫,দি পার্লামেন্টঃ এই সংশোধনী পার্লামেন্টের দ্বারা সরকারকে সমালচনার ক্ষমতা একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে। যদি কেউ দল থেকে পদত্যাগ করে তাহলে পার্লামেন্টে তার আসনও ছাড়তে হবে, এই বিধানের সাথে যুক্ত হয়েছে যদি কোন এম.পি. ভট দেয়া থেকে বিরত থাকে বা ভোটের সময় পার্টির অনুমতি ছাড়া সঙ্গসদে অনুপস্থিত থাকে তাহলে ধরে নেয়া হবে তিনি পার্টির বিরুদ্ধ মতে পার্লামেন্টে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ১২০
দিনের মধ্যে পার্লামেণ্ট আবার মিলিত হবে এই বিধান বাদ দিয়ে বছরে যে কোন সময় দুইবার অধিবেশন ডাকলেই যথেষ্ট হবে বলে দেয়া হয়েছে।
৬,জুডিশীয়ারীঃ আগের মত এখনব আর বিচারক বা ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতিকে সুপ্রিমকোর্টের প্রধানবিচারপতির পরামর্শ নিতে হবে না;ল তনি যাকে ইচ্ছা নিয়োগ দেবেন। ট্রাইব্যুনালগুলকে হাইকোর্টের নিয়ন্ত্রন থেকে মুক্ত করা হয়। আইন বিভাগের সকল কর্মকর্তা, কর্মচারি এবং ম্যাজিষ্ট্রেটরা সুপ্রিমকোর্ট নয়, বরং তাদের আচরন ও শৃংখলার জন্য প্রেসিডেন্টের কাছে দায়ি থাকবেন। যদিও এক জায়াগায় বলা হয়েছে,
LIMITED OFFICIAL USE

NNN

LIMITED OFFICIAL USE

PAGE 01 DACCA 00457 02 OF 02 251148Z

13
ACTION NEA-09

INFO OCT-01 EUR-12 ISO-00 CIAE-00 DODE-00 NSAE-00 NSCE-00

SSO-00 USIE-00 INRE-00 PM-03 H-01 INR-07 L-02 NSC-05

PA-01 RSC-01 PRS-01 SP-02 SS-15 OMB-01 AID-05 IO-10

SSC-01 /077 W
--------------------- 038825
O R 251000Z JAN 75
FM AMEMBASSY DACCA
TO SECSTATE WASHDC NIACT IMMEDIATE 5568
INFO AMEMBASSY ISLAMABAD
AMEMBASSY NEW DELHI
AMEMBASSY LONDON
AMEMBASSY KATHMANDU

LIMITED OFFICIAL USE SECTION 2 OF 2 DACCA 0457
“বিচারকরা বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগে স্বাধীন থাকবেন। এখন থেকে প্রেসিডেন্ট যে কোন বিচারককে দুর্ব্যবহার বা অযোগ্যতার দায়ে পদচ্যুত করতে পারবেন।”যদিও এর আগে বিচারককে পদচ্যুত করতে সংসদের দু-তৃতিয়াংশ এর অনুমোদন লাগত।

https://www.wikileaks.org/plusd/cables/1975DACCA00457_b.html

collected from basher kella
এই তথ্যগুলো মার্কিন দূতাবাস তাদের ফরেন অ্যাফেয়ার্সে পাঠায়।

সারসংক্ষেপঃ জানুয়ারী ২৫,১৯৭৫ তারিখের সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাশের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান এখন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট। এই আমূল (sweeping) পরিবর্তন হয় নামকা-ওয়াস্তে (minuscale) বিরোধীদলের ওয়াক-আউটের মধ্য দিয়ে, কোন প্রকার আলোচনা ছাড়াই। সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি এবং একটি মন্ত্রীপরিষদ সম্বলিত সরকারব্যাবস্থা চালু হয়। মন্ত্রীপরিষদ সদস্য হবার জন্য পার্লামেন্টের সদস্য হওয়া জরুরূ ছিল না। সংশোধনীর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের একক এবং নিরংকুশ ইচ্ছায় সকল রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে একটি মাত্র দল গঠন করার বিধান রাখা হয়েছে। আইন পাশ হওয়ার সাথে সাথেই স্বয়ংক্রিয়ভাবেই মুজিব পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট বনে যান, জাতীয় সংসদের মেয়াদও পাঁচ বছর বেড়ে যায়। দেশের সমস্যা এবং শিক্ষিত সমাজের দুর্নীতি-অনিয়ম মোকাবিলায় ব্যবস্থার পরিবর্তন জরুরী ছিল বলে মুজিব সাফাই দেন।

LIMITED OFFICIAL USE

LIMITED OFFICIAL USE

PAGE 02 DACCA 00457 01 OF 02 251135Z

পরের সপ্তাহে জাতীয় সংসদও আজকে রুটিনমাফিক জরুরী আইন অনুমদন করে প্রেসিডেন্টের গত সপ্তাহে গৃহীত পদক্ষেপকে বৈধতা দিয়েছে।
END SUMMARY
১,একটি সুপরিকল্পিতভাবে সাজানো দুঘন্টার অধিবেশনে জাতীয় সংসদে ২৫ জানুয়ারি সকালে প্রথমে প্রেসিডেন্টের গতমাসের আদেশকে বৈধতা দিয়ে একটি জরূরী আইনের বিল পাশ করে। দ্রুত উত্থাপিত এবং পাশকৃত চথুর্থ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। আলোচনার সুযোগ না পাওয়ায় বিরোধীদল ওয়াক-আউট করে; এর ফলে দুইবারের ভোটাভুটির পরও সংশোধনীটি ২৯২-০ ভোটে পাশ হয়েছে বলে ধরা হয়। মুজিবের, যিনি ইতমধ্যেই স্বতসিদ্ধভাবে একটিমাত্র অধিবেশনের মাধ্যমে সংশোধনীর যুগপৎ পাশ ও কার্যকরিতার বলে প্রেসিডেন্ট হয়ে গিয়েছিলেন, শপথ অনুষ্ঠিত হওয়া নির্ধারিত হয়েছে দুপুরে অনির্দিষ্টকালের জন্য সংসদ মুলতবি করে দেয়ার পরপরই, এক সংক্ষিপ্ত গোপন শপথ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ।
সংবিধানের মূল পরিবর্তন গুলো নিম্নরূপঃ

২,রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতিঃ পার্ট ৪, চ্যাপ্টার ১, নির্বাহী বিভাগ, এবং চ্যাপ্টার দুই, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীসভা-কে দুটি নতুন অধ্যায় দিয়ে স্থানচ্যুত করা হয়েছে যে অধ্যায়গুলোর নাম হচ্ছে ‘রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতি’ এবং ‘কাউন্সিল-অব-মিনিস্টারস’,রাষ্ট্রপতি(and head of the state) নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হবার কথা থাকলেও, শেষ আর্টিকেলের একটি বিশেষ ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে যার মাধ্যমে বর্তমান রাষ্ট্রপতি (মোহাম্মাদুল্লাহ) অভিসংসিত বলে গন্য হবেন এবং তদস্থলে মুজিবুর রহমান নির্বাচিত হয়েছেন বলে ধরা হবে। উপ-রাষ্ট্রপতি নিয়গ দেবেন রাষ্ট্রপতি, দুজনের মেয়াদই পাঁচ বছর, তাদের কেউই সংসদ সদস্য হতে পারবেন না (মুজিব আজকেই তার সংসদ সদস্য পদে ইস্তফা দিয়েছেন ),দাপ্তরিক কাজের জন্য প্রেসিডেন্ট বা ভাইস-প্রেসিডেন্ট কার কাছে জবাবদিহি করবেন না,অযোগ্যতার দায়েও পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্টকে অভিসংশিত বা বরখাস্ত করতে পারবে না , প্রেসিডেন্ট বা ভাইস-প্রেসিডেন্ট এর যেকোন একজন ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় স্পিকার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না। প্রজাতন্ত্রের সকল নির্বাহি ক্ষমতা প্রেসিডেন্ট প্রয়োগ করবেন এবং সাজা মওকুফ ও দন্ড পরিবর্তনের সকল ক্ষমতা তার হাতে থাকবে।
৩,দি কাউন্সিল অব মিনিস্টারসঃ
প্রেসিডেন্ট নিয়গকৃত এবং তার খেয়াল-খুশিমত একতি মন্ত্রীপরিষদ থাকবে যারা তাকে সাহায্য করবে এবং সীমিত ক্ষাত্রে পরামর্শ দেবে।
LIMITED OFFICIAL USE

LIMITED OFFICIAL USE

PAGE 03 DACCA 00457 01 OF 02 251135Z
প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত এবং তার পারিষদের মত কোন কোর্ট চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না। একজন প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রীরা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি এবং প্রতিমন্ত্রী, যদি প্রয়োজন হয় তাহলে এম.পি. দের মধ্য থেকে বা এম.পি. হবার যোগ্য এমন কার মধ্য থেকে ন্যগকৃত হবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অন্যান্য প্রতিমন্ত্রীরা কাউন্সিলের সদস্য হবেন না। সকল মন্ত্রীরাই পার্লামেন্তে কথা বলতে পারবেন, যারা এম.পি. কেবল তারা ভোট দিতে পারবেন।
৪,লোকাল গভর্ন্মেন্টঃ সংশধনী লোকাল গভর্নমেন্টের ধারনা বিলুপ্ত করে এবং এখানে অন্য কিছু প্রতিস্থাপনও করে নি।
৫,দি পার্লামেন্টঃ এই সংশোধনী পার্লামেন্টের দ্বারা সরকারকে সমালচনার ক্ষমতা একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে। যদি কেউ দল থেকে পদত্যাগ করে তাহলে পার্লামেন্টে তার আসনও ছাড়তে হবে, এই বিধানের সাথে যুক্ত হয়েছে যদি কোন এম.পি. ভট দেয়া থেকে বিরত থাকে বা ভোটের সময় পার্টির অনুমতি ছাড়া সঙ্গসদে অনুপস্থিত থাকে তাহলে ধরে নেয়া হবে তিনি পার্টির বিরুদ্ধ মতে পার্লামেন্টে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ১২০
দিনের মধ্যে পার্লামেণ্ট আবার মিলিত হবে এই বিধান বাদ দিয়ে বছরে যে কোন সময় দুইবার অধিবেশন ডাকলেই যথেষ্ট হবে বলে দেয়া হয়েছে।
৬,জুডিশীয়ারীঃ আগের মত এখনব আর বিচারক বা ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতিকে সুপ্রিমকোর্টের প্রধানবিচারপতির পরামর্শ নিতে হবে না;ল তনি যাকে ইচ্ছা নিয়োগ দেবেন। ট্রাইব্যুনালগুলকে হাইকোর্টের নিয়ন্ত্রন থেকে মুক্ত করা হয়। আইন বিভাগের সকল কর্মকর্তা, কর্মচারি এবং ম্যাজিষ্ট্রেটরা সুপ্রিমকোর্ট নয়, বরং তাদের আচরন ও শৃংখলার জন্য প্রেসিডেন্টের কাছে দায়ি থাকবেন। যদিও এক জায়াগায় বলা হয়েছে,
LIMITED OFFICIAL USE

NNN

LIMITED OFFICIAL USE

PAGE 01 DACCA 00457 02 OF 02 251148Z

13
ACTION NEA-09

INFO OCT-01 EUR-12 ISO-00 CIAE-00 DODE-00 NSAE-00 NSCE-00

SSO-00 USIE-00 INRE-00 PM-03 H-01 INR-07 L-02 NSC-05

PA-01 RSC-01 PRS-01 SP-02 SS-15 OMB-01 AID-05 IO-10

SSC-01 /077 W
--------------------- 038825
O R 251000Z JAN 75
FM AMEMBASSY DACCA
TO SECSTATE WASHDC NIACT IMMEDIATE 5568
INFO AMEMBASSY ISLAMABAD
AMEMBASSY NEW DELHI
AMEMBASSY LONDON
AMEMBASSY KATHMANDU

LIMITED OFFICIAL USE SECTION 2 OF 2 DACCA 0457
“বিচারকরা বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগে স্বাধীন থাকবেন। এখন থেকে প্রেসিডেন্ট যে কোন বিচারককে দুর্ব্যবহার বা অযোগ্যতার দায়ে পদচ্যুত করতে পারবেন।”যদিও এর আগে বিচারককে পদচ্যুত করতে সংসদের দু-তৃতিয়াংশ এর অনুমোদন লাগত।

https://www.wikileaks.org/plusd/cables/1975DACCA00457_b.html

collected from basher kella

রবিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৩

পুলিম ধর্ষন

এক শিবির কর্মীর চিন্তা

Tarek Meah shared প্রবাসী যাযাবর's photo.
আই লাভ ছাত্রশিবির...
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির আমার প্রাণের স্পন্দন । আমার শরীরের প্রতিটি রক্তকণিকা যেমন প্রতি নিয়ত লা-ইলাহা’র জিকির করে তেমনি জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতি আমার সীমাহীন ভালবাসা আর দোয়া সবসময় সবখানে বিরাজমান । হয়তো পরিস্থিতির কারনে দেখাতে পারিনা । কিন্তু তারা মিশে আছে আমার অন্তরে ।  আমি আমার ধর্মকে যেমন ভালবাসি, আমি আমার দেশকে যেমন ভালবাসি, আমি আমার মা-বাবা ভাইবোনকে যেমন ভালবাসি, আমি আমার সন্তানকে যেমন ভালবাসি তেমনি আমি ভালবাসি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামকে এবং বাংলাদেশ  ইসলামী ছাত্রশিবিরকে । হয়তো আমার শরীর থেকে মাথা আলাদা হয়ে যাবে । হয়তো অন্ধকার কুঠরীতে মাসের পর মাস ধুকে ধুকে দিনাতিপাত করতে হবে । হয়তো আমার ঠিক মতো আহার জুটবে না । তবুও জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতি আমার মহব্বতের এতটুকু কমতি হবে না। 
কেন জানেন ? 
কারণ হচ্ছে আমি অনেক ভেবেছি, অনেক চিন্তা-গবেষণা করেছি , অনেক স্টাডী করেছি । 
আমি দেখেছি দল দু‘টির মাঝে আল্লাহর প্রিয় রাসূল হযরত মোহাম্মদ [স:] এর পুরনাঙ্গ জীবনের প্রতিচ্ছবি । 
যে যতই বলুক আমি জানি ইসলামের অনেকগুলো দলের মধ্যে সঠিক দলটি যাচাই করতে গেলে প্রথমেই ইসলামের শত্রুদের চিহ্ণিত করতে হবে । এরপর দেখতে হবে ঐ শত্রুরা ইসলামের কোন দলটিকে নিশ্চিন্ন করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে.. 
যে দলটি ইসলামকে মেনে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইনকে প্রতিষ্ঠা করার মানসে সংগ্রাম করছে শয়তান চাইবে ঐ দলটিকে বিভিন্ন ছলেবলে কৌশলে অপবাদ নিন্দাবাদ দিয়ে কোণঠাসা করে রাখতে । 
নাস্তিক্যবাদিরা, ইসলামের দুষমনেরা যে দলটির বেশী বিরুধীতা করবে বুঝতে হবে সে দলটেই ইসলামের সবচেয়ে সঠিক পথে আছে । 
আমি মহান আল্লাহর দরবারে একটানা তিনবছর পর্যন্ত প্রার্থনা করেছি আমাকে সঠিক পথের দলটিকে সমর্থন করার তৌফিক দেবার জন্য । অবশেষে আমি নিজেকে ইসলামী ছাত্র শিবিরের মঞ্চের গোড়ায় আবিস্কার করেছি । 
আমি অবাক বিস্ময়ে হতবাক, স্তম্ভিত হৃদয়ে ভ্রুকুঞ্চিত করে নিজের কপালের মধ্যখানে আল্লাহু দেখতে পেয়েছি । 
আমার অন্তর জীবন্ত হয়েছে, আমি আবিস্কার করেছি সহজ সরল পথের দিশারী সঠিক ইসলামী দলটি । 
আল্লাহর কাছে চেয়েছি বলেই আল্লাহ, আমার আল্লাহ, আমার মালিক, আমি যার গোলাম, আমি যার দাস, তিনিই আমাকে সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন । 
তাইতো আমি ইসলামী ছাত্র-শিবির এবং জামায়াতে ইসলামীকে এত এত এত ভালবাসি  । আমি সঠিক ভাবে নিশ্চিত রূপেই জানি এই ভালবাসা আমাকে ঠকাবে না, ইহকালে শান্তি আর পরকালে মুক্তি – দুটিই আমার চাই । আমি অনেক স্বার্থবাদী, তাইতো আমি শিবিরকে ভালবাসি । আই লাভ ছাত্রশিবির । মনে অনেক দু:খ বেদনা যে জীবনের শ্রেষ্ট একটি স্ট্যাটাস ছদ্মনামে দিতে হল আওয়ামী নাস্তিক্যবাদী পরিস্থিতির কারনে । ক্ষমা করো বন্ধুরা, ঈমানটা যে বড় বেশী দূর্বল । 
Probasi Jajabar (13.04.13)
আই লাভ ছাত্রশিবির...
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির আমার প্রাণের স্পন্দন । আমার শরীরের প্রতিটি রক্তকণিকা যেমন প্রতি নিয়ত লা-ইলাহা’র জিকির করে তেমনি জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতি আমার সীমাহীন ভালবাসা আর দোয়া সবসময় সবখানে বিরাজমান । হয়তো পরিস্থিতির কারনে দেখাতে পারিনা । কিন্তু তারা মিশে আছে আমার অন্তরে । আমি আমার ধর্মকে যেমন ভালবাসি, আমি আমার দেশকে যেমন ভালবাসি, আমি আমার মা-বাবা ভাইবোনকে যেমন ভালবাসি, আমি আমার সন্তানকে যেমন ভালবাসি তেমনি আমি ভালবাসি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামকে এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে । হয়তো আমার শরীর থেকে মাথা আলাদা হয়ে যাবে । হয়তো অন্ধকার কুঠরীতে মাসের পর মাস ধুকে ধুকে দিনাতিপাত করতে হবে । হয়তো আমার ঠিক মতো আহার জুটবে না । তবুও জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতি আমার মহব্বতের এতটুকু কমতি হবে না।
কেন জানেন ?
কারণ হচ্ছে আমি অনেক ভেবেছি, অনেক চিন্তা-গবেষণা করেছি , অনেক স্টাডী করেছি ।
আমি দেখেছি দল দু‘টির মাঝে আল্লাহর প্রিয় রাসূল হযরত মোহাম্মদ [স:] এর পুরনাঙ্গ জীবনের প্রতিচ্ছবি ।
যে যতই বলুক আমি জানি ইসলামের অনেকগুলো দলের মধ্যে সঠিক দলটি যাচাই করতে গেলে প্রথমেই ইসলামের শত্রুদের চিহ্ণিত করতে হবে । এরপর দেখতে হবে ঐ শত্রুরা ইসলামের কোন দলটিকে নিশ্চিন্ন করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে..
যে দলটি ইসলামকে মেনে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইনকে প্রতিষ্ঠা করার মানসে সংগ্রাম করছে শয়তান চাইবে ঐ দলটিকে বিভিন্ন ছলেবলে কৌশলে অপবাদ নিন্দাবাদ দিয়ে কোণঠাসা করে রাখতে ।
নাস্তিক্যবাদিরা, ইসলামের দুষমনেরা যে দলটির বেশী বিরুধীতা করবে বুঝতে হবে সে দলটেই ইসলামের সবচেয়ে সঠিক পথে আছে ।
আমি মহান আল্লাহর দরবারে একটানা তিনবছর পর্যন্ত প্রার্থনা করেছি আমাকে সঠিক পথের দলটিকে সমর্থন করার তৌফিক দেবার জন্য । অবশেষে আমি নিজেকে ইসলামী ছাত্র শিবিরের মঞ্চের গোড়ায় আবিস্কার করেছি ।
আমি অবাক বিস্ময়ে হতবাক, স্তম্ভিত হৃদয়ে ভ্রুকুঞ্চিত করে নিজের কপালের মধ্যখানে আল্লাহু দেখতে পেয়েছি ।
আমার অন্তর জীবন্ত হয়েছে, আমি আবিস্কার করেছি সহজ সরল পথের দিশারী সঠিক ইসলামী দলটি ।
আল্লাহর কাছে চেয়েছি বলেই আল্লাহ, আমার আল্লাহ, আমার মালিক, আমি যার গোলাম, আমি যার দাস, তিনিই আমাকে সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন ।
তাইতো আমি ইসলামী ছাত্র-শিবির এবং জামায়াতে ইসলামীকে এত এত এত ভালবাসি । আমি সঠিক ভাবে নিশ্চিত রূপেই জানি এই ভালবাসা আমাকে ঠকাবে না, ইহকালে শান্তি আর পরকালে মুক্তি – দুটিই আমার চাই । আমি অনেক স্বার্থবাদী, তাইতো আমি শিবিরকে ভালবাসি । আই লাভ ছাত্রশিবির । মনে অনেক দু:খ বেদনা যে জীবনের শ্রেষ্ট একটি স্ট্যাটাস ছদ্মনামে দিতে হল আওয়ামী নাস্তিক্যবাদী পরিস্থিতির কারনে । ক্ষমা করো বন্ধুরা, ঈমানটা যে বড় বেশী দূর্বল ।

শযতানের চেহারা

আমলীগ কেন ইসরামবিদ্বেশী


আওয়ামী লীগের ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের কারণ অনুধাবন করতে হলে আওয়ামী লীগের জন্ম, জন্মদাতা এবং জন্মদানের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে পর্যালোচনা করতে হবে। এ বিষয়ে স্যার উইনস্টন চার্চিলের অমর উক্তির ‘যত দূরবর্তী অতীত ইতিহাস তুমি জানবে তত দূরতম ভবিষ্যত তুমি দেখবে’) প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ করতে হবে। ৭১১ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয় থেকে শুরু করে ১৭৫৭ সালের পলাশী বিপর্যয়, টিপু সুলতানের পরাজয়, দিল্লী পতন, ১৮৫৮ সালের সিপাহী বিপ্লবে মুসলমানদের চূড়ান্ত পতন এবং ১৮৭০ পরবর্তী মুসলমানদের উত্থান প্রক্রিয়া, ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা, ১৯৭১ সালের পাকিস্তান ভাঙা এবং ’৭১ পরবর্তী পুনরায় মুসলিম শাসনের পতনের ধারাবাহিকতা, কারণ ও উপাদান সমূহ বিশ্লেষণ করলে আওয়ামী লীগের জন্মদাতা ও পালন কর্তাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য দিবালোকের মত সুস্পষ্ট হবে।৭১১ সাল থেকে ১৭৫৭ সাল পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন মুসলিম শাসনের সময় ভারত বর্ষের জনগণ একজাতির ন্যায় বসবাস করেছিল। কেননা মুসলিম শাসনামলে ধর্মের কারণে, বর্ণের কারণে, সম্প্রদায়ের কারণে কখনো প্রতিপক্ষ অত্যাচারিত হয়নি। উক্ত আমলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গারও কোনো নজির নেই। এতদসত্ত্বেও ভারতের বর্ণহিন্দুরা মনের দিক থেকে কখনো মুসলিম শাসন মেনে নেয়নি। মুসলমানদের উদারতার সুযোগ নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায় প্রথমে শক্তি সঞ্চয় করে এবং পরবর্তীতে ভারতবর্ষ থেকে মুসলিম শাসন উৎখাত করতে ইউরোপীয়দেরকে এদেশের শাসন ক্ষমতায় বসায়। দীর্ঘ ১৯০ বছর এই ইঙ্গ-হিন্দু চক্র মুসলমানদেরকে ভারতবর্ষ থেকে নিশ্চিহ্ন করার যাবতীয় প্রচেষ্টা গ্রহণ করে। এসময়ে মুসলমানদেরকে ভারতবর্ষের জমির মালিকানা থেকে, সরকারি চাকরি থেকে, সেনাবাহিনী থেকে উচ্ছেদ করে ভূমিদাসে পরিণত করে। এতদ্সত্ত্বেও কিছু দূরদর্শী মুসলিম ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ১৯৪৭ সালে বিশাল ভারতবর্ষের একটি ক্ষুদ্র অংশে নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়। এই ক্ষুদ্র ভূখ-েও যাতে মুসলমানরা ক্ষমতাসীন থাকতে না পারে সে লক্ষ্যে ইঙ্গ-হিন্দু শক্তি ৪৭ পরবর্তী সময়ে পুনরায় চক্রান্ত শুরু করে। এই চক্রান্তের শুরুতেই পাকিস্তানের ইসলামী ঐক্যকে দুর্বল ও ধ্বংস করার লক্ষ্যে প্রথমে মুসলিম ছাত্রলীগ তৎপর আওয়ামী মুসলিম লীগ এবং আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। তাদের সাথে যোগ করা হয় সাম্রাজ্যবাদ সৃষ্ট কমিউনিস্ট পার্টি সমূহ এবং অখ- ভারত প্রতিষ্ঠায় সংকল্পবদ্ধ পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রেসকে। এভাবেই প্রথমে পাকিস্তানের মুসলমানদেরকে দ্বিধাবিভক্ত করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা হয়। অতপর বাংলাদেশী মুসলমানদেরকে দ্বিধাবিভক্ত করার জন্য বাঙালি/বাংলাদেশী, স্বাধীনতার পক্ষÑবিপক্ষ, ধর্মভিত্তিক-ধর্মনিরপেক্ষ শ্রেণীর সৃষ্টি করা হয়। ইতোপূর্বে অর্থাৎ ১৭৫৭-১৯৪৭ সময়কালে ভারতের উগ্রহিন্দুরা মুসলমানদের উপর যে অত্যাচার-নির্যাতন চালাত বর্তমান বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ভারতন্থীরা ধর্মভিত্তিক ও ধর্মীয় ভাবাপন্ন মুসলমানদের উপর একই প্রকার অত্যাচার-নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করছে। হিন্দু শাসনে ভারতের মুসলমানরা যেরূপ অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার বাংলার মুসলমানরাও আওয়ামী শাসনে একইরূপ অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। প্রশ্ন উঠতে পারে আওয়ামী লীগ কি মুসলমানদের দল নয়? তার উত্তর হচ্ছে এই যে, যে দল সংবিধান থেকে ‘আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস’ মুছে দিতে পারে সে দল গায়ের জোরে বা আরবী নামের কারণে মুসলমান থাকে কিভাবে? আল্লাহর উপর আস্থা বা ঈমান না থাকলে কেউ মুসলমান হয় না, তার অকাট্য প্রমাণ হলো আরবী নামধারী আবু জেহেল, আবু লাহাব ও আবু তালেব মুসলমান ছিল না। তদুপরি যে দলটি মুসলমানদের চেয়ে অমুসলমানদেরকে বেশি আপন মনে করে, সে দলের শীর্ষ পরিবারটি মুসলমানদেরকে বাদ দিয়ে ইহুদী-খ্রিস্টান-হিন্দুদের সাথে আত্মীয়তা করে, যে দলের সেক্রেটারী জেনারেল নামের পূর্বে সৈয়দ রেখে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয় ‘আমি হিন্দু ও না মুসলমান ও না’ এবং যে দলটি মন্দির-গীর্জা-প্যাগোডাকে নিরাপদ মনে করে এবং কেবলমাত্র মসজিদকে ঘিরে রাখে র্যা ব-পুলিশ ও গোয়েন্দা দিয়ে। সে দলটি কোন স্তরের মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করে তা বোকা লোকটি ও বুঝতে পারে। এ দলটির সাথে অখ- ভারতে বিশ্বাসী এবং মুসলিম শাসন উৎখাতে প্রয়াসী, বর্ণহিন্দুদের জন্মগত সম্পর্কের ব্যাপারে অসংখ্য তথ্য প্রমাণ রয়েছে। তন্মধ্যে পাঠকদের জ্ঞাতার্থে প্রদত্ত কয়েকটি তথ্য নিম্নরূপ
১. ২০১২ সালের নভেম্বরে বেগম খালেদা জিয়ার ভারত সফরকে ব্যর্থ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্থ করার জন্য দিল্লী থেকে ২য়বার বার্তা পাঠিয়ে বলা হয়‘ আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের জন্মগত সম্পর্ক, এর পরেই অন্যদের প্রসঙ্গ’। (সূত্র : দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, তাং০৩-১১-১২ইং)
২. ২০০৭ সালের এপ্রিলে রায়রেরিলির এক জনসভায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘আমার পরিবারই পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে।’
৩. ৩০ নভেম্বর ১৯৭০ সালে জনসভায় ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ‘ভারত কখনো পাকিস্তানের অস্তিত্বকে মেনে নেবে না।’ (সূত্র : ঐ পৃ-১১২)
৪. পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর শেখ মজিবুর রহমান বিরোধী রাজনীতিতে একটি অবস্থান তৈরি করার জন্য ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার জ্যোতি সেন গুপ্তের সান্নিধ্যে আসেন, যিনি মনোরঞ্জন ধরসহ কতিপয় কংগ্রেস নেতার সঙ্গে মুজিবের পরিচয় করিয়ে দেন। মুজিব তাদের সাথে মিলে পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্য হাসিলে কাজ করার ব্যাপারে একমত হন। (সূত্র : জ্যোতি সেন গুপ্ত, হিস্ট্রী অব ফ্রীডম মুভমেন্ট অব বাংলাদেশ, ১৯৪৭-৭৩ : সাম ইনভলভমেন্ট)
৫. ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির পর সলিমুল্লাহ মুসলিম হল থেকে বিপুল পরিমাণ ধ্বংসাত্মক প্রচারপত্র উদ্ধার করা হয়। নারায়ণগঞ্জের মিছিলে জয়হিন্দ এবং যুক্তবাংলা চাই স্লোগান দেয়া হয়। নবগঠিত আওয়ামী লীগের নেতা (এমএলএ) যিনি হিন্দু মাড়োয়ারী ব্যবসায়ীর সাথে পাট ব্যবসায়ে সম্পৃক্ত ছিলেন তাঁর (ওসমান আলীর) বাসগৃহ থেকে ধ্বংসাত্মক লিফলেট উদ্ধার করা হয় এবং একই স্থান থেকে ভারতীয় হিন্দু যুবকদের গ্রেফতার করা হয়। একই রূপ ভারতীয় হিন্দু যুবক গ্রেফতার হয় চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং আরো কিছু স্থানে। (সূত্র : ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, বি আল হেলাল, পৃ: ৪৪৯-৫০)
৬. ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট গঠনের মূল কাজটি সম্পাদন করে কমিউনিস্ট পার্টি। প্রকাশ্য রাজনীতিতে কার্যতঃ নিষিদ্ধ এই পার্টি যুক্তফ্রন্ট গঠনে প্রধান ভূমিকা পালন করে। বামধারার ছাত্র ইউনিয়ন, গণতন্ত্রী দল ও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে কর্মরত বামরাই এতে প্রধান ভূমিকা পালন করে। তৎকালে হিন্দুস্থানে কমিউনিস্টদের উপর দমন-পীড়ন অব্যাহত থাকলে ও দিল্লী পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্টদের পৃষ্ঠপোষকতা দান করত শুধুমাত্র পাকিস্তানকে ধ্বংস করার জন্য। কমিউনিস্ট নেতৃত্বের মূল কাঠামোয় হিন্দু নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত থাকার কারণে ভারতীয় সাহায্য তাদের জন্য অবারিত ছিল। (সূত্র : মোহাম্মদ হান্নান, বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস, পৃ-২৫)
৭. শেরেবাংলা একে ফজলুল হক যুক্তফ্রন্ট গঠনের বিরোধী ছিলেন। ছাত্ররা এক বিরাট বিক্ষোভ মিছিল সংগঠিত করে তাঁর বাসভবন ঘেরাও করে রাখে। শেষ পর্যন্ত ছাত্রদের চাপে রাজি হলে তাঁকে ছাত্ররা কাঁধে নিয়ে উল্লাস করতে করতে ফিরে আসে। (প্রাগুক্ত পৃ: ২৫) দেশপ্রেমিক ইসলামী শক্তি ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত করলেও পরবর্তীতে এর নিয়ন্ত্রণ এসে যায় কমিউনিস্টদের হাতে। ’৫২ সালের পর তারা রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পুরোপুরি সক্রিয় হয়ে উঠে। প্রথমতঃ তারা মুসলিম জনমানসকে ইসলামী সংস্কৃতি থেকে তথাকথিত বাঙালি (হিন্দু) সংস্কৃতি অভিমুখে নিয়ে যায় স্মৃতিস্তম্ভ, শহীদ মিনার স্থাপন করে এবং হিন্দুয়ানী কায়দায় বিভিন্ন দিবস পালন করে। ২য় পর্যায়ে মুসলিম ঐক্যকে দ্বিধাবিভক্ত করার জন্য গঠন করে যুক্তফ্রন্ট। এভাবে তারা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আদর্শিক চেতনা থেকে জনগণকে বিচ্ছিন্ন করে ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজে লাগায়।
৮. স্বাধীন হিন্দুরাষ্ট্র তৈরির চেষ্টা আজকের নয়, পঞ্চাশের দশকেই হয়েছিল এর ব্লু প্রিন্ট। ‘বঙ্গভূমি ও বঙ্গসেনা’ পুস্তিকায় ডা. কালিদাস বৈদ্য নিজেই স্বীকার করেছেন যে, ১৯৬২ সালে তারা তিন জন যুবক কলকাতা থেকে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে যান এবং ‘সংখ্যালঘুদের মুক্তির জন্য ব্যাপক কর্মতৎপরতা চালান।’ গোপনে স্বাধীনতা ও তার সঙ্গে স্বতন্ত্র বাসভূমির কথাও প্রচার করেন। ঐ তিন যুবক হলো কালিদাস বৈদ্য, চিত্তররঞ্জন ছুতার ও নীরদ মজুমদার। ... কালিদাস বৈদ্য ও চিত্ত ছুতার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এবং বাংলাদেশে বহুকাল ভারতের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। ... মুজিব সরকারের উপর প্রভাব খাটানোর জন্য চিত্ত সুতারকে ভারত সরকার চিরকাল ব্যবহার করেছে। এখনো ভারত সরকারের তরফে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন চিত্তবাবু। (সূত্র : একশ’ বছরের রাজনীতি : আবুল আসাদ)
৯. পাকিস্তানের জন্মের প্রায় শুরু থেকে ভারতের ষ্টেটম্যান পত্রিকার ঢাকা অফিসে দায়িত্বপালনকারী ভারতীয় সাংবাদিক জ্যোতিসেন গুপ্ত স্বীকার করেছেন যে, শেখ মুজিবর রহমান সহ তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের বহু মহলের সাথে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার যোগাযোগ ছিল। (সূত্র : বাংলাদেশ মারাত্মক অপপ্রচারণা ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের শিকার, এমটি হোসেন, পৃ-৯৮)
১০. শেখ মুজিবের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে ১৯৭৭ সালের ১৫ আগস্ট কলকাতায় আযোজিত এক সভায় বঙ্গভূমি আন্দোলনের সূচনা করা হয়। সেই সমাবেশে ভারতে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আশ্রিতা শেখ হাসিনা ওয়াজেদ ও উপস্থিত ছিলেন।
১১. পূর্ব পাকিস্তানী রাষ্ট্রবিরোধী ব্যক্তিদের সঙ্গে হিন্দুস্থানী যোগসাজসের প্রত্যক্ষ পরিচয় পাওয়া গেল ১৯৬৭তে যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র উদঘাটিত হল। কয়েকজন সাক্ষ্য দিল যে, শেখ মুজিবর রহমান এই ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে যখন দেশের অবশিষ্ট অংশ থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে পৃথক করার উদ্দেশ্যে একটি বিপ্লবী সংস্থা গঠিত হয়েছিল।... পরিকল্পনার মূল বিষয় ছিল কমান্ডো হামলায় পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক ইউনিটসমূহের অস্ত্রাগারসমূহ দখল করে সেগুলোকে অচল করে দেয়া। ভারত এ কাজে বিদ্রোহীদেরকে অস্ত্র সরবরাহ করবে। (সূত্র : বাংলাদেশের স্বাধীনতা, যুদ্ধের আড়ালে যুদ্ধ, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, পৃ-১৩৩)
১২. ১৯৬২-৬৩ সালে আগরতলায় ভারতীয় আইবি করেন ডেক্সের ফরেন অপারেটিভদের সঙ্গে মুজিব অংশের একটি বৈঠক হয়। (প্রাগুক্ত পৃ-৩৭)
১৩. ’৬৫ সালের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সবাই সেদিন এক কাতারে সামিল হয়েছিল পাকিস্তানের পক্ষে। তবে একটি রাজনৈতিক দলের ভূমিকা ছিল রহস্যময়। এ দলটি ভারতকে ধিক্কার দিতে একবারও মুখ খোলেনি। সমসাময়িক পত্র-পত্রিকা সাময়িকীতে এর প্রমাণ মিলবে। ... সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটা আমাদের সবাইকে হতবাক করে দিয়েছিল তা হলো তৎকালীন গভর্নর মোনেম খাঁ যুদ্ধকালীন ঘটনা বলতে গিয়ে বৈঠকে বলেছেন, যুদ্ধ চলাকালে পূর্বপাকিস্তান যখন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন তখন শেখ মুজিব মোনেম খানকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি যদি এই সুযোগে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন তবে তাঁর দল সর্বোতভাবে তাঁকে সমর্থন দেবে। আর এটা শুধু নৈতিক বা আনুষ্ঠানিক সমর্থনই হবে না, হবে সর্বাত্মক সমর্থন। যুদ্ধাবস্থায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে এই ভেবে জনাব খান বিষয়টি চেপে গিয়েছিলেন। পরে অবশ্য তিনি বিষয়টি পিন্ডিকে জানিয়েছিলেন। (সূত্র : স্মৃতির পাতা থেকে, পিএ নাজির পৃ: ২১৪-২১৫)
১৪. ’৭০-এর নির্বাচনী জনসভায় মুজিব যেসব কথা বলেছিলেন, ঘটনা প্রবাহ সেভাবে এগোচ্ছিল না। ১৯৭০ সালে এলএফও ঘোষণার পর মুজিবকে তার ইনার কেবিনেটের সসদ্যদের উদ্দেশ্যে স্পষ্ট বলতে শোনা গেছে, আমার আসল লক্ষ্য বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। নির্বাচনের পর আমি এলএফও ছিঁড়ে ফেলব। কে তখন আমাকে চ্যালেঞ্জ করবে? এ ব্যাপারে বাইরের সূত্র থেকে সাহায্য আসবে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি সম্ভবত ভারত থেকে।
১৫. ১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ এক পরিচালক এক সিম্পোজিয়ামে বলেন, ভারতকে আজ এই সত্য অনুধাবন করতে হবে যে, পাকিস্তান ভেঙে গেলে আমাদের স্বার্থ উদ্ধার হবে। এ সুযোগ আর কখনো নাও আসতে পাারে। তাতে আরো বলা হয় বাংলাদেশের এই সঙ্কট তার এক নম্বর শত্রু পাকিস্তানকে বিনাশ করার জন্য শতাব্দীর সুযোগ এনে দিয়েছে। (প্রাগুক্ত-পৃ-১৭০)
১৬. ২৭ মার্চ ১৯৭১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী রাজ্য সভায় বলেন, অনেক কারণে এ বিষয়ে (পাকিস্তান ভাঙার ব্যাপারে) আমরা আগ্রহী। প্রথমত একজন সদস্য যেমন বলেছেন, শ্রী মুজিবুর রহমান আমাদের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন পূরণের পক্ষে। ... প্রতিবেশী বড় একটি দেশের সরকার প্রধান বলেছেন, ‘যেহেতু বিদ্রোহী নেতা ভারতের স্বপ্ন পূরণের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, সেহেতু ভারত পার্শবর্তী একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে আগ্রহী হতে বাধ্য। (প্রাগুক্ত-পৃ-১৭০)
১৭. কংগ্রেস ও ভারত সরকার আন্তরিকভাবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা মেনে নেয়নি এবং এর প্রতিষ্ঠার পরও এর অবসান ঘটিয়ে অখ- ভারত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য প্রকাশ্যভাবে বহুবার ঘোষণা করেছে এবং এর জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ১৯৪৯ সাল থেকেই ভারত সরকার পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ গঠন করার জন্য বাংলাদেশ সেল গঠন করেছিল। দায়িত্বে ছিলেন ড. ত্রিগুনা সেন। (দেখুন, বেলাল মোহাম্মদের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র)
১৮. ১৯৪৯ সালের প্রথমদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের ঢাকায় আগমন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে (বর্তমান মেডিকেল কলেজের সম্মুখস্থ খেলার মাঠ) বক্তৃতা দেয়ার কথা। এ উপলক্ষে ড. মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রারের অফিসে (বর্তমান জগন্নাথ হলের অংশ বিশেষ) রাত্রিকালে ঢাকা শহর ছাত্রনেতাদের এক সভা আহ্বান করা হয়। আমি ঢাকা ইসলামিক ইন্টারমেডিয়েট কলেজের (বর্তমান কাজী নজরুল ইসলাম কলেজ) ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঐ সভায় যোগদান করি। শেখ মুজিবর রহমান ও ঢাকা কলেজের ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ঐ সভায় উপস্থিত হন। ... ঐ সভাতেই তিনি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্য ও পাকিস্তানি রাজনীতিবিদদের বিমাতাসুলভ মনোভাবের উল্লেখ করেন এবং লিয়াকত আলী খানকে সম্বর্ধনা দানের বিরোধীতা করেন। অবশ্য সে সভায় একথা তখন তেমন সমর্থন লাভ করেনি। সভা শেষ হয় রাত ১২টার পর। তখন শেখ সাহেব ও আমি হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরি। উনি তখন আরমানিটোলার এক বাসায় থাকতেন। আমি থাকতাম আহসান মঞ্জিল সংলগ্ন ছাত্রাবাসে। সারাটি পথ তিনি আমাকে পাকিস্তানিদের শোষণ ও পূর্ব পাকিস্তানের বঞ্চনার কথা বলতে থাকেন এবং পাকিস্তান থেকে আমাদের পৃথক হয়ে যাওয়াই উচিতÑ এ কথা বলেন। (সূত্র : ফজলুল কাদের চৌধুরী ও সমকালীন মুসলিম সমাজ, মোহাম্মদ হাসন, বইয়ের ভূমিকার লেখক ড. মোহর আলী পৃ-১২)

উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত অবলোকন করে যে কোনো সাধারণ জ্ঞানের মানুষ ও বুঝতে পারবে যে, আধিপত্যবাদী ও বর্ণবাদী ভারতীয় নেতৃবৃন্দের অখ- ভারত গঠনের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্যই ভারত ১৯৪৭ সাল থেকেই তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টিসমূহ, পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রেস সদস্যবৃন্দ এবং মুসলিম লীগের ক্ষমতালোভী নেতৃবৃন্দের মদদ দেয়া শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় নিয়মতান্ত্রিক ভাষা আন্দোলন বিপদগামী হয়ে রক্তাক্ত পরিণতি লাভ করে। এই রক্তপাতের পর মুসলিম সংস্কৃতিকে বিপদগামী ও হিন্দু সংস্কৃতির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্মৃতিস্তম্ভ, শহীদ মিনার ও হিন্দু সংস্কৃতির আদলে ভাষা দিবস চালু করা হয়। যা পর্যায়ক্রমে মূর্তিপূজা, প্রতিকৃতি পূজা, মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বলনে পর্যবসিত হয়। যে মুসলিম ঐক্য সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী ও তাদের দোসর ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তির শতসহস্র চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে উপমহাদেশে মুসলমানদেরকে পাকিস্তান নামক একটি স্বাধীন সার্বভৌম ভূখ- দান করেছিল সে মুসলিম ঐক্যকে বিনষ্ট করার জন্য ৪৭ পরবর্তীতে মিথ্যাচার ও ভাষা আন্দোলনকে ব্যবহার করে মুসলিম ছাত্রলীগ, আওয়ামী মুসলিম লীগ ও আওয়ামী লীগ গঠন করা হয়। পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম শক্তিকে দ্বিধাবিভক্ত করার জন্য যুক্তফ্রন্ট গঠন করা হয়। পর্যায়ক্রমে অদূরদর্শী ও ক্ষমতালোভী শেখ মুজিবুর রহমানকে ব্যবহার করে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানকে চূড়ান্তভাবে দুইভাগ করা হয় এবং পাকিস্তানি বাহিনী ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভারতীয় বাহিনীর নিকট আত্মসমর্থন করে। ঘটনার এখানেই শেষ নয় ১৯৭১ সালের পর থেকে মুসলিম বিদ্বেষী ইহুদী-খ্রিস্টান চক্রের সাথে হাত মিলিয়ে ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারত বর্তমান পাকিস্তানের সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও উ. পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশকে আলাদা করে পাকিস্তানকে ৪ টুকরা এবং বাংলাদেশকে জুমল্যান্ড, বঙ্গভূমি ও বাংলাদেশ এরূপ তিন টুকরা করার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।বর্তমান পাকিস্তানে ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে ভারত সৃষ্ট পিপিপি, সাম্রাজ্যবাদ সৃষ্ট বামপন্থী দলসমূহ, টিটিপি, মোহাজের কওমী পার্টি, বালুচ লিবারেশন ফ্রন্ট, ধর্ম ব্যবসায়ী ভ-পীর-ফকির, কবর পূজারী, মাজার পূজারী, পীর পূজারী ও বেদআতীগণ। বর্তমান বাংলাদেশে ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে ভারত সৃষ্ট আওয়ামী লীগ, সাম্রাজ্যবাদ সৃষ্ট বামপন্থী দল সমূহ, শান্তিবাহিনী, বঙ্গসেনা, ধর্মব্যবসায়ী ভ-পীর, ফকির, কবরপূজারী পীর পূজারী ও বেদআতীগণ। ১৯৪৭ পূর্বকালের ভারতের এবং বর্তমান ভারতে মুসলমানরা হিন্দুদের যে সকল অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছিল এবং হচ্ছে বর্তমান বাংলাদেশে ও ঈমানদার দেশ প্রেমিক মুসলমানরা ভারত সৃষ্ট আওয়ামী জোট কর্তৃক একই প্রকার অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। হিন্দুস্থানের হিন্দুরা যেভাবে বিগত ২৫০ বছর যাবত মুসলমানদেরকে ধর্মপালনে বাধা দিয়েছে, ধর্ম ও নীতির কারণে জুলুম নিপীড়ন করেছে বর্তমান বাংলাদেশে ও দেশপ্রেমিক ইসলামী শক্তিসমূহ একই রূপ অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে প্রভুকে খুশি করার জন্য এরা প্রভুর চেয়ে আরো বেশি হিংস্রতার আশ্রয় গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে ভারত সৃষ্ট দল ও গোষ্ঠীসমূহ বর্তমানে সম্পূর্ণভাবে বর্ণহিন্দু মানস ধারন করে মুসলিম ও ইসলাম বিদ্বেষের প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়েছে।এতদ্সংক্রান্ত তথ্যাবলী উল্লেখের পূর্বে কয়েকটি মৌলিক বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করা হচ্ছে। বিষয়গুলো হলো - ভারত তত্ত্ব বা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আদর্শিক ভিত্তি ও কারণ এবং পাকিস্তান ভাঙার কৌশলের ধারাবাহিকতা।

ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহেরু এর প্রণেতা, পরবর্তীতে ইন্দিরা গান্ধী ও আইকে গুজরাল একে আরো অগ্রবর্তী করেছেন। নেহেরু ডকট্রিনের মূল কথা হলো ১৯৪৭ পূর্ব ইৎরঃরংয ওহফরধ নিয়ে হবে অখ- ভারত। সেক্ষেত্রে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও বার্মা অখ- ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। পার্শ্ববর্তী নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও মালদ্বীপ হবে ভারতীয় সামরিক ও রাজনৈতিক আধিপত্যের আওতাধীন। এ লক্ষ্যেই নেহেরুর নেতৃত্বাধীন ভারত ১৯৪৭ থেকেই কার্যক্রম পরিচালনা করছে যা এখনো অব্যাহত আছে। এই আধিপত্যবাদের বলি হয়েছে ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত দেশীয় রাজ্যসমূহ, পার্শ্ববর্তী সার্ক দেশ সমূহ, বার্মা ও আফগানিস্তান। ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী ভারত পৃথিবীর অন্যান্য ইসলাম বিরোধী শক্তিসমূহ যথা ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সাথে হাত মিলিয়ে তার অপকর্ম অব্যাহত রেখেছে। ভারতের এই অপকর্ম পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিম-লকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। এসব দেশের ভারত সৃষ্ট রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী প্রতিনিয়ত ভারতের স্বার্থে নিজ নিজ দেশে অশান্তি সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট, এই জোটের বলয়ে অবস্থানকারী বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতি কর্মীরা প্রতিনিয়ত নিজ দেশকে ভারতের পদতলে বলি দিয়ে ভারতের স্বপ্নপূরণে সহযোগিতা করছে এবং ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে।বেশির ভাগ লোকেরা মনে করে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ রাজশক্তি ভারত ২ টুকরা করে ভারত ত্যাগ করেছে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা ছিল ভিন্ন। নিম্নের তথ্যটি দেখলে বিষয়টি বোধগম্য হবে।* ব্রিটিশ ভারতের প্রত্যক্ষ শাসনাধীন অঞ্চলের বাইরে আরো ৭০০টি স্বাধীন রাজ্য ছিল ভারতবর্ষে। ব্রিটিশ রাজশক্তি ছলে-বলে কৌশলে এ সকল রাজ্যের বেশির ভাগ দখলে নিতে সক্ষম হয়েছিল। এর পরেও ১৯৪৭ সালে আরো ২৮৩টি রাজ্য অবশিষ্ট ছিল যাদেরকে করদ রাজ্য বা মিত্র রাজ্য বলা হত। এসব রাজ্যের হিন্দু-মুসলিম রাজা ও নবাবগণ নিজ নিজ আইন অনুসারে রাজ্য শাসন করতেন। ইংরেজ সরকারকে এই রাজ্যগুলো কর দিত। ইংরেজ সরকার ভারতবর্ষ ত্যাগ করার আগে দেশীয় রাজাদের ডেকে বলেছিলেন যে, ‘তাঁরা প্রত্যক্ষভাবে ব্রিটিশ সরকারের অধীন, ভারত সরকারের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। ইংরেজ ভারত ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে তারা স্বাধীন। তারা চাইলে স্বাধীন থাকতে পারে অথবা স্বেচ্ছায় ভারত বা পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতে পারে। ভারত ত্যাগের প্রাক্কালে ভাগ সমূহ ছিল নিম্নরূপÑদেশীয় রাজ্য ২৮১টিহিন্দুস্থান ১টিপাকিস্তান ১টিপর্তুগীজ শাসনকৃত ১টিফরাসী শাসনাধীন ১টিমোট ২৮৫টিসূত্র : সাপ্তাহিক দেশ, কংগ্রেস শতবর্ষ সংখ্যা, (১৮৮৫-১৯৯৫) লেখক : শ্রী অতুল্য ঘোষ পৃ-১৩০...কিন্তু ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী ভারত ত্যাগ করার পর ভারত অত্যাচার, আগ্রাসন, আন্তর্জাতিক নীতিভঙ্গ, প্রতারণা ও জবরদস্তির মাধ্যমে উক্ত ২৮৩টি রাজ্য দখল করে নেয়।


পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আদর্শিক ভিত্তি ও কারণ

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আদর্শিক ভিত্তি হলো মুসলমানরা অন্য কোনো জাতির অংশ নয় বরং একটি স্বতন্ত্র জাতি। অন্য কোনো জাতির সাথে মিলিত হয়ে মুসলমানরা কোনো মিশ্র জাতীয়তাও নির্মাণ করতে পারে না। কেননা মুসলিম জাতীয়তাবোধের একমাত্র আদর্শ হলো তাদের দ্বীন বা ধর্ম। তারা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাদের এই আকাক্সক্ষা বাস্তবায়ন করবে অন্য কোনো পথে নয়।১৯৪৭ সালের পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিল ভারতের বর্ণবাদী মুসলিম বিদ্বেষী ও মুসলমানদের অস্তিত্ববিরোধী হিন্দুদের আধিপত্য থেকে মুক্ত হয়ে মুসলমান জাতির জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র কায়েম করা যে রাষ্ট্রে তারা নিজেদের ঐতিহ্য এবং আদর্শের আলোকে জাতীয জীবন ব্যবস্থাকে পুনর্গঠিত করতে পারে। যে রাষ্ট্রে তারা প্রতিনিয়ত সাংস্কৃতিক নিস্পেষন বা অনৈসলামীক ধর্মীয় অনুশাসনের ভয়ে শঙ্কিত হতে হবে না। যে রাষ্ট্রের অর্থনীতি, রাজনীতি বা সংস্কৃতি কিরূপ হবে তা নির্ভর করবে মুসলিম জাতির মৌলিক আদর্শগুলোকে আমরা কিভাবে ব্যাখ্যা করব তার উপর। আমাদের আবাসভূমির উপর আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষিত হলে রাষ্ট্র পরিচালনার স্বাধীনতা আমাদের থাকবে।এই লক্ষ্য উদ্দেশ্যকে সানে নিয়েই আমাদের পূর্বপুরুষরা ১৯৪০ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত নিরন্তর রক্তাক্ত লড়াই-সংগ্রাম করেছে তৎকালীন বিশ্বশক্তি ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী ও তাদের সহযোগী বর্ণহিন্দুদের বিরুদ্ধে। অবশেষে মুসলমানদের ধর্মীয় চেতনাভিত্তিক জাতীয় ঐক্য ২০ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় সমর্থ হয়। এ লড়াইয়ে সমগ্র ভারতবর্ষের মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। ১৯৪৭ সালের পর দেখা গেল হিন্দু শাসন থেকে মুক্ত হতে এরা নিজেদের সংগ্রামের ফসল পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছে বুক ভরা আশা নিয়ে। এদের মধ্যে অনেকেই ছিল কপর্দকহীন, ছিন্নভিন্ন, আহত ও পঙ্গু আর বাকিরা ছিল সফল শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, কারিগর ও উচ্চপদস্থ আমলা। এরাই কৃষিভিত্তিক পূর্ব পাকিস্তানের রাস্তাঘাট, বিমানবন্দর-নৌবন্দর-শিল্পকারখানা গড়ে তুলল এবং আমরা দ্রুত এগিয়ে চললাম। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস মুসলমানদের অস্তিত্ব বিনাশী হিন্দুস্থান ও তাদের এদেশীয় দোসররা ১৯৭০-৭১ সালে এসব দরদী মেহমানদের ও ১ম স্বাধীনতার মুক্তিযোদ্ধাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, অবশিষ্টরা এখনো চরম অবহেলায় ধুঁকে ধুঁকে মরছে। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি এসব মোহাজের ভাইদের সহায়তা ছাড়া আমরা আধুনিক শিল্পবিপ্লবের যুগে প্রবেশ করতে সক্ষম হতাম না। হিন্দু ভারতের সক্রিয় সহযোগিতায় যারা এসব অপকর্ম করেছে তাদেরকে কি বাংলাদেশের বা মুসলমানদের বন্ধু বলা যায়?

ফকরুর আলমগীরের মেয়ে


নগর পুড়লে দেবালয় এড়ায় না
শামারুহ মির্জা

আমার বাবা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আপাদমস্তক একজন রাজনীতিবিদ। আমি এই মানুষটি এবং অন্য আরও কিছু প্রসঙ্গ নিয়ে কিছু কথা লিখছি। নিজের বাবাকে নিয়ে লেখা বোধহয় খুব শোভন নয়! আপাতদৃষ্টিতে এ কাজটি আমি আজ করতে চাই এবং করব।
মির্জা আলমগীরের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্ব্বীরা তাকে শ্রদ্ধা করেছেন সবসময়। এলাকায় যে কোনো বিপদে-আপদে প্রথমে ছোটেন তাঁর কাছে, সমাধানের জন্য। তিনি যে দলেরই হোন না কেন, তিনি যে ধর্মেরই হোন না কেন। বলুকাকার একটি কথা মনে পড়ে গেল। নির্বাচনী প্রচারণায় আমি হাঁটছি এক পাড়া থেকে আরেক পাড়ায়। বলুকাকার বাসার সামনে এসেছি, সঙ্গে থাকা দু’জন বললেন—ভেতরে যাওয়ার দরকার নেই, তিনি আব্বুর বিরুদ্ধে প্রচারণা করছেন। আমি তবু এগিয়ে গেলাম। ঘরে ঢুকতেই দেখি বলুকাকা আর ক’জন বসে। বললাম, বলুকাকা, আব্বুর জন্য দোয়া করবেন। বলুকাকা হেসে বললেন—মাগো, রাজনৈতিক কারণে আমি তোমার বাবার বিরোধিতা করছি; কিন্তু মানুষ আলমগীরের জন্য আমার মঙ্গল কামনা নির্ভেজাল, সবসময় ।
নাম বলছি না, তবে আওয়ামী লীগের এক বিখ্যাত বাগ্মী রাজনীতিবিদ এক টকশোতে আব্বুর সঙ্গে বসতে চাননি। তার স্রেফ কথা, এই ভদ্রলোকের সঙ্গে আমি ঝগড়া করতে পারব না। শতভাগ সততার সঙ্গে মানুষটি সারা জীবন রাজনীতি করেছেন; নিজের আদর্শ, নিজের বিশ্বাসের সঙ্গে কখনো সমঝোতা করেননি। শুধু বোঝেননি, এই বাংলাদেশে তিনি বড়ই অনুপযুক্ত এক রাজনীতিবিদ। একটি ‘গণতান্ত্রিক’ সরকার আজ এই মানুষটিকে যেভাবে অপদস্থ করল, তা আসলেই উদাহরণ হয়ে থাকবে চরম অবিচারের।
কী অপরাধ ছিল তাঁর? তিনি বিরোধী দলের মহাসচিব, সরকারের সমালোচনা করতেন, কর্মীদের সংগঠিত করতেন, তাঁদের উজ্জীবিত করতেন সরকারবিরোধী আন্দোলনে প্রকাশ্যে বক্তৃতা দিয়ে, যা পুরো বাংলাদেশের মানুষ দেখত, শুনত, উপলব্ধি করার চেষ্টা করত। তিনি বোমাবাজি করেছেন কিংবা করিয়েছেন? গাড়িতে আগুন দিতে বলেছেন? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মির্জা আলমগীরের চরম শত্রুও তা বিশ্বাস করবে না!
পঁয়ষট্টি বছরের মানুষটাকে আমি প্রায়ই প্রশ্ন করতাম—আব্বু, এই নষ্ট, পচে যাওয়া সমাজে তুমি কেন এখনও রাজনীতি করছ? ’৭১-পূর্ববর্তী রাজনীতির সেই পরিবেশ তো আর নেই। আগেও রাজনীতিবিদদের বন্দি করা হতো, তাদের সঙ্গে যথাযথভাবে ব্যবহার করা হতো, আজ তো কোনো নিয়ম নেই, আজ তো গ্রেফতার করেই রিমান্ডে নিয়ে প্রাগৈতিহাসিকভাবে অত্যাচার করে। এসব বাদ দাও না! আব্বু স্মিত হেসে বলতেন, ‘শেষ চেষ্টাটা করেই দেখি, আমার তো চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই।’ তাঁর খুব প্রিয় কবিতার একটি লাইন প্রায়ই আমাকে বলতেন, ‘এখনি অন্ধ বন্ধ করো না পাখা।’
আমার এই বাবার বিরুদ্ধে এই সরকার দুটি আজব মামলা দিয়েছে। একটিতে অভিযোগ, আব্বু এবং আরও ক’জন মিলে সচিবালয়ে ককটেল ফুটিয়েছে বা ফোটাতে সহযোগিতা করেছে; আরেকটিতে অভিযোগ, তাঁর এবং আরও ক’জনের প্ররোচনায় ২৯ এপ্রিল একটি বাস পোড়ানো হয়েছে। মামলার চার্জশিট পড়ছিলাম। নিজের অজান্তেই হেসে উঠলাম। আমাকে হাসতে দেখে আমার এক স্টুডেন্ট প্রশ্ন করল, কেন হাসছি। ওকে পুরো ঘটনাটা খুলে বললাম। ও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল। তোমার বাবাকে আসামি বানিয়েছে? এই মামলায়? ওর বিস্ময় দেখে বললাম, বাংলাদেশের ৯৯ ভাগ মানুষ তোমার মতোই বিস্মিত! ওকে বললাম—জানো, এই সরকার দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেয়ে সরকার গঠন করেছে, এরা দিনবদলের কথা বলেছে! ওর বিস্ময় আরও বাড়ল। ‘বল কী, এটা নির্বাচিত সরকার! আমি তো ভেবেছি, এটা স্বৈরাচারী সামরিক সরকার।’ খারাপ লাগছিল। বললাম, ‘চিন্তা করো না, ঠিক হয়ে যাবে, সরকার একটু টালমাটাল এখন, ঠিক হয়ে যাবে।’ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ঘটনাটা আসার পরে অনেকেই আমার কাছে জানতে চাইল পুরো ব্যাপারটা। খুব চেষ্টা করলাম দেশের ‘ভাবমূর্তি’ রক্ষা করে বুঝিয়ে বলার। সবাইকে আশ্বাস দিলাম, আমাদের বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা আছে।
নিম্নআদালত আব্বুদের জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠিয়েছে। রায় ঘোষণার পরপরই আব্বুকে ফোন দিলাম। ভীষণ পজিটিভ, হাসছিলেন আমার দুশ্চিন্তা দেখে। হঠাত্ গলাটা বোধহয় আবেগে কিছুটা বুজে এলো। বললেন—‘মাগো, তুমি সাহস হারিয়ো না, আমরা একসঙ্গে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করব, করতেই হবে। যা-ই হোক, তুমি সাহস হারিয়ো না মা।’ আমি আর কথা বলতে পারলাম না। তাঁকে বললাম না, আমি আর স্বপ্ন দেখি না বাংলাদেশ নিয়ে, আমি আর আশা করি না। আমার কেন জানি আজকাল শুধু মনে হয়, ওরা ভিন্নমতাবলম্বী, সাহসী, সত্যবাদী, দেশপ্রেমিক কোনো বাংলাদেশী নাগরিককে মুক্ত থাকতে দেবে না। তুমি যদি স্বাধীনভাবে কথা বলতে চাও, চুপ করে থাকো। এর কিছুই তাঁকে বলা হোল না। শুধু বললাম, ‘তুমি ভালো থেকো আব্বু।’
আমার প্রিয় শিক্ষক প্রফেসর আনোয়ার হোসেনের লেখা আজকাল প্রায়ই পড়ি। সব লেখাতেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তাঁর সংগ্রামের কথা, তাঁর ভাইয়ের আত্মদানের কথা, সোনার বাংলা নিয়ে তাঁর পরিবারের স্বপ্নের কথা। আমারও মনে পড়ে ১/১১-এর পরে তাঁর সাহসী ভূমিকার কথা, আরেকটু আগেকার কথাও মনে পড়ে, শামসুন নাহার হলে পুলিশি অভিযানের বিরুদ্ধে তাঁর সাহসী ভূমিকার কথা। আমরা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। স্যারকে দেখতে গিয়েছিলাম তাঁর বাসায়, তাঁর আগেও স্যারের বাসায় গেছি রাতের খাবার খেতে, ক’জন বন্ধুসহ। কিছুদিন আগে মেইলে পেলাম তাঁর চিঠি, ১/১১-এর পরে কোর্টে দেয়া তাঁর জবানবন্দিসহ, তাঁকে ভোট দেয়ার আবেদন করে।
এই স্যার আজ আর প্রতিবাদ করছেন না, গর্জে উঠছেন না, মিছিলে যাচ্ছেন না। উনি দেখছেন, সেই একই পুলিশি রিমান্ডে রাজনৈতিক নেত্রীকে চার পেয়ে পশুর মতো অত্যাচার করা হচ্ছে, মেয়েটি দাঁড়াতে পারছে না, সেই একই রিমান্ডে মানুষের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া হচ্ছে, সেই একই বাহিনী রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে যাচ্ছে কারও বাবাকে, কারও স্বামীকে, কারও সস্তানকে, ক’দিন পরে বুড়িগঙ্গায় ভেসে উঠছে মানুষের হাত, পা। স্যার কিন্তু কিছুই বলছেন না। স্যার একটি রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস করেন জানি। খুব স্বাভাবিক। প্রতিটি মানুষ রাজনৈতিক। কিন্তু যে কোনো অন্যায় তো অন্যায়ই, যে কোনো অবিচার তো অবিচারই, যে কোনো অত্যাচার তো অত্যাচারই। এসবের তো অন্য কোনো নাম নেই, অন্য কোনো সংজ্ঞা নেই। তবে? তাঁর এই নীরবতার কারণ কী? স্যারের একটি লেখা পড়লাম, কালের কণ্ঠে। তিনি লিখেছেন তাঁর প্রিয় শিক্ষককে নিয়ে। সেই লেখাতেও তিনি কয়েকবার উল্লেখ করলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর অতীত সংগ্রামের কথা। প্রশ্ন করি তাঁকে, আপনার ভাই যে আদর্শের জন্য জীবন দিয়েছেন, তার কতটুকু এই ‘সোনার বাংলা’য় বাস্তবায়ন হয়েছে? প্রশ্ন করি তাঁকে, বর্তমানকে তিনি কীভাবে দেখছেন এবং বর্তমানে তিনি কী করছেন? সংগ্রাম কি চলমান প্রক্রিয়া নয়?
আমি স্যারের কথা উল্লেখ করলাম, কারণ আমি মনে করি বাংলাদেশের বেশিরভাগ বুদ্ধিজীবীকে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন। আমাদের আঁতেলরা এক একটি দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে গিয়ে কেমন জানি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হয়ে যান। একটি মার্কা, একটি রঙ তাঁদের অন্ধ করে দেয়। চোখের সামনে সমাজটা নষ্ট হয়ে যায়, চোখের সামনে মানুষগুলো কুঁকড়ে যায়, চোখের সামনে দেশটা বধ্যভূমিতে পরিণত হয়, এদের কিচ্ছু যায় আসে না। একটু আগেই খবর পেলাম, আনোয়ার স্যার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মনোনীত হয়েছেন, স্যারের সাম্প্রতিক নীরবতার কারণটা এখন বোধগম্য হলো!
সোহেল তাজের পদত্যাগের পর একটি ব্যাপার আমার কাছে পুরো পরিষ্কার। আমরা সবাই এক একটি সোহেল তাজ। আমরা খুব সাহস, উদ্যোগ নিয়ে নেমে পড়ি সমাজ বদলাবো বলে। ফেসবুকে এমন ঝড় তুলি, সে ঝড়েই যেন উড়ে যায় সব অনাচার, রাজনীতিবিদদের গালিগালাজ করে অর্গাজমের সমপরিমাণ আনন্দ বোধ করি, অন্যের পিণ্ডি চটকিয়ে দাবি করি—আমিই আলাদা, আমিই শুদ্ধ। তারপর যখন ত্বধষরঃু নরঃবং, দৈত্যগুলো কামড়ে দেয়, তখন গাল ফুলাই, অবুঝ শিশুর মতো বলি—‘আমি তোমার সঙ্গে আর খেলব না।’ বিশাল একটা চিঠি লিখে পালিয়ে যাই আমেরিকা। ব্যস, নাটকের এখানেই সমাপ্তি।
আমার কিছু উচ্চশিক্ষিত বন্ধু আছে, এরা প্রায়ই বিভিন্ন আড্ডায়, ফেসবুকে রাজনীতিবিদের পিণ্ডি চটকায়। খুব ফ্যাশনের কাজ, নিজের নিরপেক্ষতা প্রমাণের কী সাংঘাতিক চেষ্টা, অনেক হাত তালি। ভাবখানা এমন, ‘হলো তো? দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করা শেষ, এবার চলো, শীশা খেতে যাই।’ সুবিধাবাদের চূড়ান্ত! রাজনীতিবিদদের গালি দিয়ে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলানো যায় না, এ সহজ কথাটি আমার উচ্চশিক্ষিত বন্ধুদের মাথায় ঢোকে না, সম্ভবত ইচ্ছাকৃতভাবেই!
আমার বাবা একটি কথা আজকাল প্রায়ই বলেন, ‘আমাদের দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিবর্তনে একটি অন্যতম মূল ভূমিকা রেখেছে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত। পুঁজিবাদ আর ভোগবাদের প্রভাবে এই মধ্যবিত্ত আজ নির্লিপ্ত হয়ে গেছে, সুবিধাজনক বলে।’ আর আমার মাথা বলে, এটা খুব ভয়ঙ্কর একটা অবস্থা। কোনো নিয়মতান্ত্রিকভাবে, সভ্যভাবে এই অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়। আজ ব্যক্তি মির্জা আলমগীরের ওপর যে অন্যায় হলো, যে অবিচার হোল—এর ফল ভোগ করতে হবে পুরো জাতিকে। এটা পরিষ্কার। আজ অথবা কাল। নগর পুড়লে দেবালয় এড়ায় না।
লেখক : কলামিস্ট, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষারত
নগর পুড়লে দেবালয় এড়ায় না
শামারুহ মির্জা

আমার বাবা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আপাদমস্তক একজন রাজনীতিবিদ। আমি এই মানুষটি এবং অন্য আরও কিছু প্রসঙ্গ নিয়ে কিছু কথা লিখছি। নিজের বাবাকে নিয়ে লেখা বোধহয় খুব শোভন নয়! আপাতদৃষ্টিতে এ কাজটি আমি আজ করতে চাই এবং করব।
মির্জা আলমগীরের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্ব্বীরা তাকে শ্রদ্ধা করেছেন সবসময়। এলাকায় যে কোনো বিপদে-আপদে প্রথমে ছোটেন তাঁর কাছে, সমাধানের জন্য। তিনি যে দলেরই হোন না কেন, তিনি যে ধর্মেরই হোন না কেন। বলুকাকার একটি কথা মনে পড়ে গেল। নির্বাচনী প্রচারণায় আমি হাঁটছি এক পাড়া থেকে আরেক পাড়ায়। বলুকাকার বাসার সামনে এসেছি, সঙ্গে থাকা দু’জন বললেন—ভেতরে যাওয়ার দরকার নেই, তিনি আব্বুর বিরুদ্ধে প্রচারণা করছেন। আমি তবু এগিয়ে গেলাম। ঘরে ঢুকতেই দেখি বলুকাকা আর ক’জন বসে। বললাম, বলুকাকা, আব্বুর জন্য দোয়া করবেন। বলুকাকা হেসে বললেন—মাগো, রাজনৈতিক কারণে আমি তোমার বাবার বিরোধিতা করছি; কিন্তু মানুষ আলমগীরের জন্য আমার মঙ্গল কামনা নির্ভেজাল, সবসময় ।
নাম বলছি না, তবে আওয়ামী লীগের এক বিখ্যাত বাগ্মী রাজনীতিবিদ এক টকশোতে আব্বুর সঙ্গে বসতে চাননি। তার স্রেফ কথা, এই ভদ্রলোকের সঙ্গে আমি ঝগড়া করতে পারব না। শতভাগ সততার সঙ্গে মানুষটি সারা জীবন রাজনীতি করেছেন; নিজের আদর্শ, নিজের বিশ্বাসের সঙ্গে কখনো সমঝোতা করেননি। শুধু বোঝেননি, এই বাংলাদেশে তিনি বড়ই অনুপযুক্ত এক রাজনীতিবিদ। একটি ‘গণতান্ত্রিক’ সরকার আজ এই মানুষটিকে যেভাবে অপদস্থ করল, তা আসলেই উদাহরণ হয়ে থাকবে চরম অবিচারের।
কী অপরাধ ছিল তাঁর? তিনি বিরোধী দলের মহাসচিব, সরকারের সমালোচনা করতেন, কর্মীদের সংগঠিত করতেন, তাঁদের উজ্জীবিত করতেন সরকারবিরোধী আন্দোলনে প্রকাশ্যে বক্তৃতা দিয়ে, যা পুরো বাংলাদেশের মানুষ দেখত, শুনত, উপলব্ধি করার চেষ্টা করত। তিনি বোমাবাজি করেছেন কিংবা করিয়েছেন? গাড়িতে আগুন দিতে বলেছেন? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মির্জা আলমগীরের চরম শত্রুও তা বিশ্বাস করবে না!
পঁয়ষট্টি বছরের মানুষটাকে আমি প্রায়ই প্রশ্ন করতাম—আব্বু, এই নষ্ট, পচে যাওয়া সমাজে তুমি কেন এখনও রাজনীতি করছ? ’৭১-পূর্ববর্তী রাজনীতির সেই পরিবেশ তো আর নেই। আগেও রাজনীতিবিদদের বন্দি করা হতো, তাদের সঙ্গে যথাযথভাবে ব্যবহার করা হতো, আজ তো কোনো নিয়ম নেই, আজ তো গ্রেফতার করেই রিমান্ডে নিয়ে প্রাগৈতিহাসিকভাবে অত্যাচার করে। এসব বাদ দাও না! আব্বু স্মিত হেসে বলতেন, ‘শেষ চেষ্টাটা করেই দেখি, আমার তো চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই।’ তাঁর খুব প্রিয় কবিতার একটি লাইন প্রায়ই আমাকে বলতেন, ‘এখনি অন্ধ বন্ধ করো না পাখা।’
আমার এই বাবার বিরুদ্ধে এই সরকার দুটি আজব মামলা দিয়েছে। একটিতে অভিযোগ, আব্বু এবং আরও ক’জন মিলে সচিবালয়ে ককটেল ফুটিয়েছে বা ফোটাতে সহযোগিতা করেছে; আরেকটিতে অভিযোগ, তাঁর এবং আরও ক’জনের প্ররোচনায় ২৯ এপ্রিল একটি বাস পোড়ানো হয়েছে। মামলার চার্জশিট পড়ছিলাম। নিজের অজান্তেই হেসে উঠলাম। আমাকে হাসতে দেখে আমার এক স্টুডেন্ট প্রশ্ন করল, কেন হাসছি। ওকে পুরো ঘটনাটা খুলে বললাম। ও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল। তোমার বাবাকে আসামি বানিয়েছে? এই মামলায়? ওর বিস্ময় দেখে বললাম, বাংলাদেশের ৯৯ ভাগ মানুষ তোমার মতোই বিস্মিত! ওকে বললাম—জানো, এই সরকার দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেয়ে সরকার গঠন করেছে, এরা দিনবদলের কথা বলেছে! ওর বিস্ময় আরও বাড়ল। ‘বল কী, এটা নির্বাচিত সরকার! আমি তো ভেবেছি, এটা স্বৈরাচারী সামরিক সরকার।’ খারাপ লাগছিল। বললাম, ‘চিন্তা করো না, ঠিক হয়ে যাবে, সরকার একটু টালমাটাল এখন, ঠিক হয়ে যাবে।’ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ঘটনাটা আসার পরে অনেকেই আমার কাছে জানতে চাইল পুরো ব্যাপারটা। খুব চেষ্টা করলাম দেশের ‘ভাবমূর্তি’ রক্ষা করে বুঝিয়ে বলার। সবাইকে আশ্বাস দিলাম, আমাদের বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা আছে।
নিম্নআদালত আব্বুদের জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠিয়েছে। রায় ঘোষণার পরপরই আব্বুকে ফোন দিলাম। ভীষণ পজিটিভ, হাসছিলেন আমার দুশ্চিন্তা দেখে। হঠাত্ গলাটা বোধহয় আবেগে কিছুটা বুজে এলো। বললেন—‘মাগো, তুমি সাহস হারিয়ো না, আমরা একসঙ্গে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করব, করতেই হবে। যা-ই হোক, তুমি সাহস হারিয়ো না মা।’ আমি আর কথা বলতে পারলাম না। তাঁকে বললাম না, আমি আর স্বপ্ন দেখি না বাংলাদেশ নিয়ে, আমি আর আশা করি না। আমার কেন জানি আজকাল শুধু মনে হয়, ওরা ভিন্নমতাবলম্বী, সাহসী, সত্যবাদী, দেশপ্রেমিক কোনো বাংলাদেশী নাগরিককে মুক্ত থাকতে দেবে না। তুমি যদি স্বাধীনভাবে কথা বলতে চাও, চুপ করে থাকো। এর কিছুই তাঁকে বলা হোল না। শুধু বললাম, ‘তুমি ভালো থেকো আব্বু।’
আমার প্রিয় শিক্ষক প্রফেসর আনোয়ার হোসেনের লেখা আজকাল প্রায়ই পড়ি। সব লেখাতেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তাঁর সংগ্রামের কথা, তাঁর ভাইয়ের আত্মদানের কথা, সোনার বাংলা নিয়ে তাঁর পরিবারের স্বপ্নের কথা। আমারও মনে পড়ে ১/১১-এর পরে তাঁর সাহসী ভূমিকার কথা, আরেকটু আগেকার কথাও মনে পড়ে, শামসুন নাহার হলে পুলিশি অভিযানের বিরুদ্ধে তাঁর সাহসী ভূমিকার কথা। আমরা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। স্যারকে দেখতে গিয়েছিলাম তাঁর বাসায়, তাঁর আগেও স্যারের বাসায় গেছি রাতের খাবার খেতে, ক’জন বন্ধুসহ। কিছুদিন আগে মেইলে পেলাম তাঁর চিঠি, ১/১১-এর পরে কোর্টে দেয়া তাঁর জবানবন্দিসহ, তাঁকে ভোট দেয়ার আবেদন করে।
এই স্যার আজ আর প্রতিবাদ করছেন না, গর্জে উঠছেন না, মিছিলে যাচ্ছেন না। উনি দেখছেন, সেই একই পুলিশি রিমান্ডে রাজনৈতিক নেত্রীকে চার পেয়ে পশুর মতো অত্যাচার করা হচ্ছে, মেয়েটি দাঁড়াতে পারছে না, সেই একই রিমান্ডে মানুষের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া হচ্ছে, সেই একই বাহিনী রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে যাচ্ছে কারও বাবাকে, কারও স্বামীকে, কারও সস্তানকে, ক’দিন পরে বুড়িগঙ্গায় ভেসে উঠছে মানুষের হাত, পা। স্যার কিন্তু কিছুই বলছেন না। স্যার একটি রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস করেন জানি। খুব স্বাভাবিক। প্রতিটি মানুষ রাজনৈতিক। কিন্তু যে কোনো অন্যায় তো অন্যায়ই, যে কোনো অবিচার তো অবিচারই, যে কোনো অত্যাচার তো অত্যাচারই। এসবের তো অন্য কোনো নাম নেই, অন্য কোনো সংজ্ঞা নেই। তবে? তাঁর এই নীরবতার কারণ কী? স্যারের একটি লেখা পড়লাম, কালের কণ্ঠে। তিনি লিখেছেন তাঁর প্রিয় শিক্ষককে নিয়ে। সেই লেখাতেও তিনি কয়েকবার উল্লেখ করলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর অতীত সংগ্রামের কথা। প্রশ্ন করি তাঁকে, আপনার ভাই যে আদর্শের জন্য জীবন দিয়েছেন, তার কতটুকু এই ‘সোনার বাংলা’য় বাস্তবায়ন হয়েছে? প্রশ্ন করি তাঁকে, বর্তমানকে তিনি কীভাবে দেখছেন এবং বর্তমানে তিনি কী করছেন? সংগ্রাম কি চলমান প্রক্রিয়া নয়?
আমি স্যারের কথা উল্লেখ করলাম, কারণ আমি মনে করি বাংলাদেশের বেশিরভাগ বুদ্ধিজীবীকে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন। আমাদের আঁতেলরা এক একটি দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে গিয়ে কেমন জানি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হয়ে যান। একটি মার্কা, একটি রঙ তাঁদের অন্ধ করে দেয়। চোখের সামনে সমাজটা নষ্ট হয়ে যায়, চোখের সামনে মানুষগুলো কুঁকড়ে যায়, চোখের সামনে দেশটা বধ্যভূমিতে পরিণত হয়, এদের কিচ্ছু যায় আসে না। একটু আগেই খবর পেলাম, আনোয়ার স্যার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মনোনীত হয়েছেন, স্যারের সাম্প্রতিক নীরবতার কারণটা এখন বোধগম্য হলো!
সোহেল তাজের পদত্যাগের পর একটি ব্যাপার আমার কাছে পুরো পরিষ্কার। আমরা সবাই এক একটি সোহেল তাজ। আমরা খুব সাহস, উদ্যোগ নিয়ে নেমে পড়ি সমাজ বদলাবো বলে। ফেসবুকে এমন ঝড় তুলি, সে ঝড়েই যেন উড়ে যায় সব অনাচার, রাজনীতিবিদদের গালিগালাজ করে অর্গাজমের সমপরিমাণ আনন্দ বোধ করি, অন্যের পিণ্ডি চটকিয়ে দাবি করি—আমিই আলাদা, আমিই শুদ্ধ। তারপর যখন ত্বধষরঃু নরঃবং, দৈত্যগুলো কামড়ে দেয়, তখন গাল ফুলাই, অবুঝ শিশুর মতো বলি—‘আমি তোমার সঙ্গে আর খেলব না।’ বিশাল একটা চিঠি লিখে পালিয়ে যাই আমেরিকা। ব্যস, নাটকের এখানেই সমাপ্তি।
আমার কিছু উচ্চশিক্ষিত বন্ধু আছে, এরা প্রায়ই বিভিন্ন আড্ডায়, ফেসবুকে রাজনীতিবিদের পিণ্ডি চটকায়। খুব ফ্যাশনের কাজ, নিজের নিরপেক্ষতা প্রমাণের কী সাংঘাতিক চেষ্টা, অনেক হাত তালি। ভাবখানা এমন, ‘হলো তো? দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করা শেষ, এবার চলো, শীশা খেতে যাই।’ সুবিধাবাদের চূড়ান্ত! রাজনীতিবিদদের গালি দিয়ে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলানো যায় না, এ সহজ কথাটি আমার উচ্চশিক্ষিত বন্ধুদের মাথায় ঢোকে না, সম্ভবত ইচ্ছাকৃতভাবেই!
আমার বাবা একটি কথা আজকাল প্রায়ই বলেন, ‘আমাদের দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিবর্তনে একটি অন্যতম মূল ভূমিকা রেখেছে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত। পুঁজিবাদ আর ভোগবাদের প্রভাবে এই মধ্যবিত্ত আজ নির্লিপ্ত হয়ে গেছে, সুবিধাজনক বলে।’ আর আমার মাথা বলে, এটা খুব ভয়ঙ্কর একটা অবস্থা। কোনো নিয়মতান্ত্রিকভাবে, সভ্যভাবে এই অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়। আজ ব্যক্তি মির্জা আলমগীরের ওপর যে অন্যায় হলো, যে অবিচার হোল—এর ফল ভোগ করতে হবে পুরো জাতিকে। এটা পরিষ্কার। আজ অথবা কাল। নগর পুড়লে দেবালয় এড়ায় না।
লেখক : কলামিস্ট, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষারত

হাসিনার কৃতিত্ব


স্কাইপ কলঙ্কের অন্যতম নায়ক, বিতর্কিত বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, এম ইউ আহমেদের হত্যাকারী আওয়ামী বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর প্রতি সুপ্রিমকোর্ট বার এসোসিয়েশনের অনাস্থার পরও তাদের বহাল রেখেছে সরকার!
http://www.dailysangram.com/news_details.php?news_id=103726
স্কাইপ কলঙ্কের অন্যতম নায়ক, বিতর্কিত বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, এম ইউ আহমেদের হত্যাকারী আওয়ামী বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর প্রতি সুপ্রিমকোর্ট বার এসোসিয়েশনের অনাস্থার পরও তাদের বহাল রেখেছে সরকার!
http://www.dailysangram.com/news_details.php?news_id=103726

শাহবাগ ০১

আমার দেশ

(যে ছবি ছাপানো নিয়ে দৈনিক আমার দেশ-এর বিরুদ্দে আওয়ামীলীগ ও তার দোসর কিছু হলুদ মিডিয়ার বিরামহীন মিথ্যাচার শুরু করেছে। আসল সত্য কি জানতে হলে এই রিপোর্ট নিজে পড়ূন এবং শেয়ার করুন)

যে ছবি ও লেখা নিয়ে গতকালের সাধারণ ডায়রি করা হয়েছে এ ব্যাপারে আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে আগেই ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। ব্যাখ্যায় জানানো হয়, আমার দেশ-এর ‘প্রবাস জীবন’ শীর্ষক একটি সাপ্তাহিক পাতা প্রকাশিত হয় মূলত প্রবাসীদের পাঠানো লেখা, প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও চিঠিপত্র নিয়ে। গত ৬ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রবাস জীবন পাতায় ‘আলেমদের নির্যাতনের প্রতিবাদে কা’বার ইমামদের মানববন্ধন’ শিরোনামে একটি সচিত্র চিঠি প্রকাশিত হয়। আবুল কালাম আজাদ নামে যিনি ই-মেইল যোগে ওই ছবি ও লেখা পাঠিয়েছেন তিনি আমার দেশ ও নয়া দিগন্তে নিয়মিত লেখেন। মূলত তিনি বেসরকারি টেলিভিশন ‘বাংলাভিশন’ এর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত। মিসর ও মধ্যপ্রাচ্যের বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট ও প্রবাসীদের তত্পরতা নিয়ে লেখালেখি করেন তিনি।

আমার দেশ-এর প্রবাস জীবন পাতায় চিঠিটি তার নামেই প্রকাশিত হয়েছে। আরও দু’টি জাতীয় দৈনিকে একই সূত্রের বরাতে একই ছবিসহ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। চিঠির লেখক আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রেরিত লেখার তথ্যগুলো পুরোপুরি সত্য ও তথ্যনির্ভর। তিনি জানান, প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে মক্কা প্রবাসী কিছু সাঈদীভক্ত আলেম ৪ জানুয়ারি জুমার নামাজ শেষে কাবা ঘরের কাছে সাঈদীর পক্ষে কর্মসূচি পালন করেন। ওই কর্মসূচি আয়োজনের সঙ্গে মক্কা প্রবাসী মুসলিম ব্রাদারহুডের কয়েকজন নেতাও জড়িত ছিলেন। এ সময় আল্লামা সাঈদীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় মসজিদুল হারামের খতিব বিখ্যাত কারি শাইখ আবদুর রহমান আল সুদাইসীকে তারা অনুরোধ করেন সাঈদী সম্পর্কে বক্তব্য রাখার জন্য। খতীব সুদাইসী আল্লামা সাঈদীর সঙ্গে তার ব্যক্তিগত পরিচয় ও সম্পর্ক নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক যে বক্তব্য দেন তা অবিকৃতভাবে লেখা হয়েছে। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে কুবা মসজিদের খতিব শাইখ আহমদ ইবনে আলী আল হুজায়ফীসহ বিভিন্ন মসজিদের খতিব ও সাধারণ মুসল্লি উপস্থিত ছিলেন। ওই কর্মসূচির খবর মিসরসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে বলেও জানান আজাদ।
লেখার সঙ্গে আবদুর রহমান আল সুদাইসীকে চেনানোর জন্য ইন্টারনেট থেকে ফাইল ছবি পাঠানো হয়েছে বলে জানান আবুল কালাম আজাদ। লেখা ও সংবাদের সঙ্গে ফাইল ছবি ব্যবহার গণমাধ্যমের বহুল প্রচলিত রীতি। সে হিসেবেই ছবিটি পাঠান আজাদ। আমার দেশ-এ প্রকাশিত ছবিতে কোনো ক্যাপশন দেয়া হয়নি। লেখা হয়নি যে ছবিটি কাবার ইমামদের মানববন্ধনের।

এদিকে ছবি নিয়ে বিতর্কের শুরুতেই প্রকাশের দিন ৬ জানুয়ারি সকালে আমার দেশ কর্তৃপক্ষ তাত্ক্ষণিকভাবে অনলাইন থেকে সেটি প্রত্যাহার করে নেন। তা সত্ত্বেও প্রকাশের তিন মাস পর বিষয়টি নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিতর্ক ও ধূম্রজাল সৃষ্টি এবং শেষ পর্যন্ত জিডি করা হলো।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2013/04/13/196239#.UWjwEqI4vTo
Like · · Share

শাহবাগের ইতিহাস,হাসিনার ফসল

শাহবাগ চত্বরে দেহ দানের বিনিময়ে মাইক্রোফোন দানের ভয়ংকর তথ্য উন্মোচিত!
-------------------------------
টিভি ক্যামেরার সামনে মেয়েটি
-------------------------------
মেয়েটি অনেকক্ষণ ধরে তার পেছনে পেছনে ঘুরছে, সেই অনুষ্ঠান শেষে হলঘর থেকে বেরিয়ে আসার পর থেকে যখন তার চারদিকে ভক্ত ও তদবিরবাজদের ভিড়। এত ছেলেমেয়ের মাঝখানে সাদামাটা প্রায় ময়লা কাপড়ে উসর-ধূসর চুল মাথায় বিদ্ঘুটে রঙের সালোয়ার-কামিজ পরা মেয়েটির প্রতি তার চোখ পড়ার কথা না, তবু পড়ল। এতে তিনি বিস্মিত হলেন এবং কিছুটা বিরক্তও। অনেকেই তার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে। কেননা, তিনি শুধু একজন সেলিব্রিটি নন, ইংরেজিতে যাকে বলে ফেভার। তা অন্যের প্রতি দেখানোর মতো তার যথেষ্ট ক্ষমতাও আছে। সেলিব্রিটির পেছনে, ছেলেমেয়েরা ঘোরে মুগ্ধতার জন্য অথবা কিছু পাওয়ার আশায়। সংসারে সবারই কিছু না কিছু চাওয়ার আছে। জীবন যতই জটিল হচ্ছে, চাওয়ার তালিকা বেড়েই যাচ্ছে। চারদিকে প্রতিযোগিতার দৌড় জীবনকে আরও জটিল করে তুলছে।
মেয়েটি নাছোড়বান্দা, তিনি যতই তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন, সে ঘুরে এসে দাঁড়ায় সামনে, প্রথম সারিতে না হলেও দ্বিতীয় কি তৃতীয় সারিতে। দেখতে সে সুশ্রী নয়, তবে তার চোখে-মুখে তীক্ষ একটা ভাব আছে, নতুন ছুরির মতো। তার চোখের নিচে ক্লান্তির কালো দাগ, মুখে একধরনের রুক্ষতা। আগে সেখানে যে কমনীয়তা ছিল তা মুছে ফেলেছে। ঠোঁট দুটি চকচক করছে, যেন গ্লিসারিন মাখানো। আসলে সে ঘন ঘন জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে নিচ্ছে। গলার নিচে কণ্ঠি বের হয়ে এসেছে, ওপরের দিকে গলার মধ্যে কয়েকটি ভাঁজ, সেখানে ঘামের পানি জমে আছে রুপার চিকন হারের মতো। শুকনো খড়ের মতো চুল উড়ছে বাতাসে। প্রায় ময়লা সবুজ ওড়না লাল কামিজে জড়ানো শরীরের ওপরে একটা স্তন ঢেকে রেখেছে, বুকের অন্য পাশে ওড়না কামিজের কাপড়ের ওপর ছড়িয়ে রাখা, প্রায় সমতল দুই দিকেই, হঠাৎ দেখে ছেলে কি মেয়ে বোঝা যায় না। মেয়েটি বাংলাদেশের পতাকার রং দিয়েই সালোয়ার-কামিজ বানিয়েছে অথবা সেই রকম তৈরি করা কাপড় কিনেছে। আজকাল অনেকেই এভাবে কাপড় পরে, কিছুটা দেশপ্রেম দেখাতে, কিছুটা ফ্যাশন স্টেটমেন্টের জন্য। মেয়েটা দেখতে সুশ্রী না হলেও বয়সের জন্য একধরনের আকর্ষণ আছে তার শরীরে। অগোছালো বেশবাস সেই আকর্ষণে একটা বন্যতার ভাব সৃষ্টি করেছে, যেন সে যেখানে খুশি লাফিয়ে পড়তে পারে। দেখেই মনে হয় খুবই বেপরোয়া আর অ্যাগ্রেসিভ।
বুঝলেন স্যার, ওরা আমার সঙ্গে পলিটিকস করছে। সামনের সারিতে থাকতে দিচ্ছে না। অথচ এই কদিন আমি সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে থেকে স্লোগান দিয়েছি। আমার গলার স্বর এত উঁচু যে মাইক্রোফোনের বলতে গেলে দরকার হয় না। এক মাইল দূর থেকেই শুনে বুঝতে পারবেন এটা আমার গলার স্বর। মিটিংয়ের জন্য স্লোগানের দরকার, স্লোগানই মিটিং জমিয়ে তোলে। আপনি নিশ্চয়ই জানেন। অভিজ্ঞ লোক আপনি। আমি কয়েক দিন মিটিং জমিয়ে রেখেছি শুধু আমার গলার জোরে স্লোগান দিয়ে দিয়ে। কাগজে আমার নাম এসেছে। টেলিভিশনে আমাকে প্রায়ই দেখিয়েছে। পাবনা থেকে দেখে আমার ছোট বোন ফোনে বলেছে, আপু তোকে দেখা গিয়েছে। কয়েকবার। তুই খুব মাতিয়ে রেখেছিস। আমার মাও প্রশংসা করেছেন দেখে। কেন করবেন না? নিজের মেয়ের খ্যাতিতে কোন মা গর্ব অনুভব করে না? বাবা? না, তিনি কিছু বলেননি। বেতো রুগি, বিছানায় শুয়ে থাকেন সব সময়। শুনেছি, ছোট বোনকে বলেছেন, ও ঢাকা গেল পড়াশোনা করতে। এখন মিছিল-মিটিং আর মানববন্ধন করে সময় নষ্ট করছে। ওর পড়াশোনার কী হবে? জমির ভাই তো পড়ার কথা বলেই ওকে নিয়ে গেলেন ঢাকায়। এখন এসব কী হচ্ছে? ওর ভবিষ্যৎ আমার চোখের সামনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
জমির ভাই, মানে আমার বাবার অনাত্মীয় জমির সাহেবকে জানেন স্যার? আমরা তাকে চাচা বলি। তিনি একজন রাজনৈতিক নেতা, মফস্বল শহর পাবনা থেকে শুরু করেছিলেন রাজনীতি, আস্তে আস্তে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ঢাকায় পৌঁছেছেন। বাবার সঙ্গে জানাশোনা অনেক দিন থেকে। আগে প্রায় প্রতিদিন আসতেন, ঢাকায় আসার পর যান মাঝেমধ্যে। একদিন আমাদের বাসায় এসে বললেন, তোমার বড় মেয়েটা বেশ চটপটে আছে। ওকে ঢাকায় পাঠাও। মফস্বলে থেকে কত দূর আর যেতে পারবে? এখানে কি-ই বা সুযোগ রয়েছে? এখন সবই তো ঢাকায়।
ঢাকায় গিয়ে কী করবে সীমা? ওর তো গ্র্যাজুয়েশনও হয়নি। বাবা বলেছিলেন।
শুনে জমির চাচা উত্তর দিয়েছিলেন, কেন? ঢাকাতেই গ্র্যাজুয়েশন করবে। সেই ব্যবস্থা করে দেব আমি। কলেজ ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে জানাশোনা আছে। বললেই অ্যাডমিশন হয়ে যাবে। হোস্টেলেও জায়গা পেতে অসুবিধা হবে না। সবই তো রাজনৈতিক দলের কন্ট্রোলে, যখন যারা ক্ষমতায় থাকে, তাদের। এখন আমরা আছি, সব সিদ্ধান্ত আমরাই নিই। কে অ্যাডমিশন পাবে, কার জন্য সিট খালি করাতে হবে—এ সবই আমাদের আওতায়। বুঝলেন না, একটা সিস্টেম তৈরি হয়ে গিয়েছে। বেশ সুন্দর চলছে। কেউ বাদ সাধছে না, কোনো হট্টগোল নেই। সবাই পাবে এই সুযোগ, পালা করে। বেশ গণতান্ত্রিক এই ব্যবস্থা। তা ছাড়া দলের কেউ না হলেও এসব সুযোগ পাওয়া যায়। একটু খরচ করতে হয় আর কি। সে যাই হোক, আপনার মেয়েটার দায়িত্ব আমি নিলাম। ও ঢাকায় যাবে, কলেজে ভর্তি হবে, হোস্টেলে থাকবে। পড়াশোনা করবে। মাঝেমধ্যে আমাদের পার্টি অফিসে এসে এটা-ওটা নিয়ে কাজ করে সাহায্য করবে।
কী কাজ করবে? কী নিয়ে সাহায্য করতে হবে সীমাকে? বাবার স্বরে উদ্বেগ ও ব্যাকুলতা।
তেমন কিছু না। ধরেন নেতার জন্য বক্তৃতা লেখা, প্যামফ্লেট তৈরি, প্রচার পুস্তিকা লেখা, ব্যানারের স্লোগান—এই সব আরকি। বড় ধরনের কোনো কাজ না, জটিলও না। খুব বেশি সময় দিতে হবে না তাকে। পড়াশোনার কোনো ক্ষতি হবে না।
বাবা শুনে আমার দিকে তাকিয়েছেন। মাথা নেড়ে বলেছেন, ও অমন কাজ আগে কখনো করেনি। পারবে না। তা ছাড়া ওই সব নিয়ে থাকলে পড়াশোনা লাটে উঠবে।
জমির চাচা আশ্বাস দিয়ে বললেন, কাজগুলো সব সোজা। লেখালেখি, তা-ও বাংলায়। ছোট ছোট আকারে। তাতে সময় বেশি লাগবে না। আর পড়াশোনার সময় তো সে এসব কাজ করবে না, অবসরে করবে। সন্ধ্যার পর। কখনো রাতে।
সন্ধ্যার পর, রাতে? বাবা খুব চিন্তিত হয়ে তাকিয়েছেন জমির চাচার দিকে। বলেছেন মাথা দুলিয়ে কাঁপা গলায়, শুনেছি, সন্ধ্যার পর ঢাকার রাস্তাঘাট নিরাপদ না। গুন্ডা-বদমাশ ঘুরে বেড়ায়। ইভটিজার পিছু নেয়।
আরে না। ওসব বাড়িয়ে বলে লোকে। ঢাকা রাজধানী, সেখানে আইনশৃঙ্খলা থাকবে না তো থাকবে কোথায়? অন্য সব মেয়ে থাকছে না ঢাকায়? কাজ করছে না, ঘোরাঘুরি করছে না? মজার ব্যাপার কি জানেন?
কী? বাবার চোখে একরাশ কৌতূহল এবং পুরোনো প্রশ্ন।
ঢাকায় মফস্বলের মেয়েরাই বেশি ফ্রি, বেশি দুরন্ত, বেশ সাহসী। ওরা কাউকে পরোয়া করে না। সব পার্টিতেই তারা আছে। টেলিভিশনে দেখেন না, মিছিলের সময় সামনে থেকে কেমন হাত তুলে জোরে জোরে স্লোগান দেয়। মফস্বলের মেয়েরাই ঢাকায় আন্দোলন জমিয়ে রাখে। বলতে গেলে ওরাই আসল কর্মী দল। ছেলেগুলো ফাঁকিবাজ। তারা মেয়েদের দিয়েই সব কাজ করিয়ে নিতে চায়। শুধু বাহবা আর টাকা নেওয়ার সময় সামনে থাকে। সব কাজের ক্রেডিট নেয়। জমির চাচা অনেকক্ষণ কথা বলে থামেন।
স্যার, কিছুই জানা ছিল না আমার, মফস্বলের মানুষ, তা-ও আবার মেয়ে। অল্প সময়ে অনেক কিছু শিখলাম। হয়তো আরও শেখার আছে। মেয়েদের সারা জীবনটাই জানার। ছাত্রী হয়েই থাকতে হয় সবকিছু জানার জন্য। অ্যাপ্রেন্টিস বলে না? আমরা হলাম তাই। কিন্তু আমি আর পারছি না স্যার। আমার একটা চাকরি দরকার। ভদ্রলোকের, ভদ্রমেয়ের মতো চাকরি। আপনি দিতে পারেন। আপনার তো সেই সুযোগ রয়েছে। আমার বেশি কিছু দেওয়ার নেই, সবই তো দেখতে পাচ্ছেন। প্রায় দেউলে হয়ে গিয়েছে শরীর আর মন। দেওয়ার মতো কিছু হয়তো একসময় ছিল, এখন তেমন কিছু নেই। মিথ্যে বলব কেন। আপনি অভিজ্ঞ লোক। সেলিব্রিটি।
তিনি বিরক্ত হয়ে বলেন, তোমার একটা দোষ আছে। তুমি বেশি কথা বল।
মেয়েটি শুনে মিইয়ে যায়। তারপর বলে, জমির চাচা কোথায়? আছেন, তিনি তার জায়গাতেই আছেন, দলের কাজ করছেন উঠে-পড়ে, দলে আরও কিছুটা ওপরে উঠতে পেরেছেন। অনেক ফন্দিফিকির জানেন তিনি। কী করে ডিঙিয়ে যেতে হয়, ওপরের মানুষকে তুষ্ট করতে হয়, সব জানা আছে তার। তিনি আরও ওপরে উঠবেন।
আমি? না, আমার পক্ষে ওপরে ওঠা সম্ভব হবে না। যেটুকু উঠেছি, ওই পর্যন্ত। মানববন্ধন করি, মিছিলে যাই, মঞ্চ তৈরি করে তার ওপরে উঠে গলা ফাটিয়ে স্লোগান দিই। টেলিভিশনে দেখায়। কাগজে নাম ছাপা হয়। পাবনা থেকে ছোট বোন প্রশংসা করে ফোনে জানায়। মা-ও খুশি, তার মেয়েকে টেলিভিশনে দেখা যাচ্ছে, সবাই তার কথা বলছে। মা আমাকে নিয়ে গর্ব করেন বলে শুনেছি।
পড়াশোনা? হ্যাঁ, জমির চাচা তাঁর কথা রেখেছিলেন। কলেজে অ্যাডমিশন হয়েছে। হোস্টেলে শেয়ারে সিট পেয়েছি, মানে দুজনে একসঙ্গে থাকতে হয়। ক্লাস বেশি হয় না, প্রায়ই বন্ধ থাকে। আমরাও ফুরসত পাই না। হরতাল, মিটিং, মিছিল। মঞ্চে উঠে স্লোগান দেওয়া। এতে অনেক সময় চলে যায়। তবে কলেজে নামটা আছে খাতায়। হোস্টেলে সিটটা আছে এখনো। কেউ আপত্তি করে না, কেন করবে? প্রায় সবাই তো আমার মতো অবস্থার। কারও অনুগ্রহে অ্যাডমিশন আর সিট পাওয়া। সন্ধ্যার পর পড়াশোনা? না, সেটা প্রায় কারোরই হয় না। সবাই কিছু না কিছু নিয়ে ব্যস্ত, টাকার ধান্দায় ঘোরে। আমি পার্টি অফিসে যাই। কখনো একা, কখনো ছাত্রনেতাদের সঙ্গে। জমির ভাইয়ের অফিসে বসে বক্তৃতা লিখি, কখনো লিফলেট। কম্পিউটারে প্রিন্ট আউট বের করে দেখাই। তিনি প্রুফ দেখে দেন। আবার টাইপ করি। এসব কাজ ছেলেরা করতে চায় না। তারা মারধর, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ভাঙচুর—এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কাজ শেষ হলে আড্ডা দেয়, ড্রিংক করে একসঙ্গে বসে।
ড্রিংক? না, না। চা-টা না। অ্যালকোহল। হুইসকি। বিয়ার। আমাকেও খেতে হয়েছে পাল্লায় পড়ে। ওদের সঙ্গে থাকতে হলে তাদের সমর্থন পাওয়ার জন্য নানাভাবে সঙ্গ দিতে হয়। এড়ানোর উপায় নেই। ওরা নেতাদের কাছে নালিশ করলে আমাদের ভাতা বন্ধ। দেড় হাজার টাকা ভাতা পাই আমি অফিস থেকে, তাই দিয়ে কলেজে পড়া, হোস্টেলে থাকা। খুব মূল্যবান সেই ভাতা। বোকামি করে হারাতে পারি না। তাহলে যে পথে বসব।
জমির ভাইকে বলোনি কেন এসব? কী যে বলেন! তিনি কি ধোয়া তুলসি পাতা? তিনিও ড্রিংক করেন। রাতে কাজ শেষ হয়ে গেলে অফিসে বসেই করেন। আমাকেও খেতে হয়েছে তার সঙ্গে। আদর করে জড়ানো গলায় বলেছেন, খাও, খাও। ভালো জিনিস। স্বাস্থ্য ভালো থাকে। এনার্জি বাড়ায়। এত পরিশ্রম করার পর দরকার আছে এটার। সাহেবরা তো খারাপ জিনিস তৈরি করেনি। অল্প অল্প খাও, তাহলে বেসামাল হবে না। একটু সামলে চলতে হবে, হাজার হোক এটা পার্টি অফিস। বেসামাল হতে চাও তো আমার বাসায় এসো। তোমার ভাবি? আরে সে থাকলে তো! কেউ নেই, বাসা খালি। মারা গিয়েছে? না, মারা যাবে কেন? মেয়েরা অত তাড়াতাড়ি মরে না। এই ঝগড়া করে চলে গেল আরকি। বলল, রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে ঘর করা পোষাবে না তার। কয়েক বছর একসঙ্গে থাকার পর এই কথা বলা। এত দিন যখন সহ্য করতে পেরেছে, তখন বাকিটাও পারত। কোনো মানে হয় হঠাৎ করে এসব কথা বলার? যারা দেশের জন্য খাটছে দিন-রাত, তাদের কিছু খামখেয়ালি, নিয়ম ভেঙে চলা—এসব সহ্য করতে না পারলে চলবে কেন? শুনল না মেয়ে মানুষটা। চলে গেল। যাক গে। বেশ আছি। হাত-পা ঝাড়া। চাকর আছে, রাঁধুনি আছে বাসায়। খাওয়া-দাওয়ার অসুবিধা হচ্ছে না, ঘুমোবার সময় বেশ ঘুমোচ্ছি। হ্যাঁ, তোমার যখন খুশি যেতে পারো। ওদের বললেই তোমাকে খেতে দেবে। দোকানে দোকানে সব সময় খাওয়া ভালো না লাগারই কথা। সেই তো বিরিয়ানি, নয়তো পরোটা-গোশত। কত দিনের পুরোনো কে জানে। স্বাদ বদলের জন্য এসো আমার বাড়ি মাঝে মাঝে। যখন খুশি। আমি বলে রাখব। জমির চাচা বললেও আমি সঙ্গে সঙ্গে তার বাসায় যাইনি। আমার মনে বেশ সন্দেহ জমেছিল। আস্তে আস্তে লোকটার চেহারা খুলে যাচ্ছিল আমার সামনে।
জমির চাচা নিজেই একদিন নিয়ে গেলেন তার বাসায়। প্রায় জোর করেই ড্রিংক করালেন ড্রয়িংরুমে বসে। সেদিন বেশিই খাওয়া হয়ে গিয়েছিল, তারই চাপে। ড্রিংকের পর পোলাও-কোর্মা খাওয়া হলো। খুব ফুর্তি লাগছিল। অমন মজা করে খাইনি অনেক দিন। তিনি যখন অনেক রাতে বললেন, দেরি হয়ে গিয়েছে। এখন হোস্টেলে যাওয়া ঠিক হবে না। থেকে যাও এখানে।
তাঁকে বেশি করে বলতে হলো না। থেকে গেলাম প্রায় স্বেচ্ছায়। সেই শুরু। তারপর বেশ কয়েক দিন হয়েছে অমন, একসঙ্গে ড্রিংক করা, খাওয়া আর ঘুমানো। দলের ছেলেরা তো বোকা না, টের পেয়ে গিয়েছে। ঠাট্টা করেছে, মিসট্রেস বলে। গায়ে মাখিনি। এমন ভাব করেছি, যেন শুনতেই পাইনি। ওরা ঠাট্টা করা বন্ধ করেনি।
জমির চাচাকে কেন বলিনি ওদের কথা? এই জন্য বলিনি যে জমির চাচা ওদের কিছু বলবেন না। তাদের নিয়ে কাজ করতে হয় তাকে।
তিনি রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছেন, অনেক জায়গাজুড়ে মঞ্চ। রাস্তায়, ফুটপাতে মানুষের ভিড়। অল্প বয়সের ছেলেমেয়েই বেশি। স্লোগান উঠছে থেকে থেকে, কোলাহল বাড়ছে। তিনি সীমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি মঞ্চে যাবে না আজ? স্লোগান দিতে?
না। ছাত্রনেতারা পলিটিকস করছে আমার সঙ্গে। বলছে, তাদের খাদ্য হতে হবে। শুধু জমির চাচার একার খাদ্য হলে চলবে না। রাতের বেলা মঞ্চের আশপাশে তাদের সঙ্গেও শুতে হবে। তাহলেই হাতে মাইক্রোফোন দেবে, নচেৎ নয়।
শুনে তিনি অবিশ্বাসের চোখে তার দিকে তাকান। রাস্তার স্লোগান ক্রমেই জোরালো হয়। তিনি সীমা নামের মেয়েটিকে বলেন, মাইক্রোফোন ওরা কন্ট্রোল করে? ওরাই ঠিক করে কে কখন স্লোগান দেবে?
তা নয় তো কী? ওরাই তো মঞ্চের নেতা। ওদের কথা যারা মানবে না, তারা হাতে মাইক্রোফোন পাবে না। গলা যত সুন্দরই হোক। আমার মতো ভরাট গলা হলেও চান্স পাবে না। মেয়েটি হঠাৎ তার দিকে তাকিয়ে বলল, শুনবেন স্যার? একটা স্লোগান দেব? আমার ভরাট গলায়?
না, না। দরকার নেই। এমনিতেই বুঝতে পারছি তোমার গলা বেশ ভরাট। রেডিও, টিভি অ্যানাউন্সারদের মতো, নিউজ রিডারের মতো।
মেয়েটি খুব খুশি হয় শুনে। হাসিমুখে বলে, সত্যি বলছেন স্যার? টিভি অ্যানাউন্সার, নিউজ রিডারের মতো? বলতে বলতে মেয়েটির চোখ ভিজে এল। ধরা গলায় বলল, আমার মতো অধঃপতিত মেয়ের ভাগ্যে কি তা হবে কখনো? হতে পারত যদি খারাপ হয়ে না যেতাম। ভালো পথে চলতাম। ভালো লোকের সঙ্গে মিশতাম। কিন্তু তা কী করে সম্ভব? আমার মতো অবস্থার একটা মেয়ে ভালো পথে কী করে চলবে? ভালো মানুষের সঙ্গ সে কোথায় পাবে? হাজার চেষ্টা করলেও তা হবে না। পাবনা থেকে ঢাকা অনেক দূরের পথ। আমি তো জানি পথের বাধাগুলো কোথায় কোথায় দাঁড়িয়ে। না, অত বড় কিছুর কথা ভাবতে পারি না আমি এখন। ছোটখাটো একটা চাকরি পেলেই বর্তে যাব। যেকোনো কাজ, যা ভদ্রভাবে চলতে দেবে, সুন্দরভাবে থাকতে দেবে। আচ্ছা স্যার, আপনার টেলিভিশন চ্যানেলে লেখাটেখার কোনো কাজ নেই? আমি খুব ভালো বাংলা লিখি। কবি শামসুর রাহমানের ওপর লেখা আমার কয়েকটা প্রবন্ধ আছে। অনেকে প্রশংসা করেছিল। আরও কয়েকটা লিখে একটা বই বের করব ভেবেছিলাম। কিন্তু সময় হলো না। ইচ্ছেটা এখনো আছে।
জমির চাচাকে বলব? তিনি উড়িয়ে দেবেন কথাটা। বলবেন, কবি-টবিদের ওপরে বই লিখে কী হবে? তার চেয়ে আমাদের দলের ওপর লেখো। দলের নেতাদের ওপর লেখো। তারপর একটু থেমে বলেছেন, তোমার অসুবিধা কোথায়? এই সব কথা তোমার মাথায় ঢোকে কেন? মাসে তিন হাজার টাকা পাচ্ছ। সেই টাকায় কলেজের ফি, হোস্টেলের খরচ দিচ্ছ। এই বয়সে এর চেয়ে ভালো চাকরি আর কী হতে পারে? তাও আবার পার্টটাইম। পরীক্ষায় পাস করার পর বেশি বেতনে চাকরি পেয়ে যাবে, তখন তুমি শুধু শামসুর রাহমান কেন, সব কবিদের নিয়ে লিখবে। এখন তোমাকে আমার অফিসের কাজের জন্য বেশি দরকার। ছাত্রনেতারা হাসি-ঠাট্টা করে? তা একসঙ্গে করলে বন্ধুরা অমন করবেই, গায়ে না মাখালেই হলো অথবা হেসে উড়িয়ে দেবে। আর শোনো, আমাকে না বলে ছাত্রনেতাদের সম্পর্কে কিছুই বলতে যাবে না। ওরা রেগে গেলে সবকিছু করতে পারে। দল ভেঙে অন্য কোথাও যাওয়ারও চেষ্টা কোরো না। দলের ছেলেরা সেটা সহ্য করবে না। ওরা সাংঘাতিক কিছু করে ফেলবে। দলের ছেলেমেয়েদের দলে রাখা তাদের জন্য একটা প্রেসটিজের ব্যাপার। ইচ্ছে করলেই কাউকে চলে যেতে দেওয়া যায় না। ঢোকা সহজ, বেরোনো কঠিন। বুঝলে? মাথা ঠিক রেখে কাজ করো। সমস্যা হলেই আমার কাছে চলে আসবে, খোলাখুলি সব বলবে।
জমির সাহেব মঞ্চের ছেলেদের বলছেন না কেন তোমাকে মাইক্রোফোন দেওয়ার জন্য? তিনি মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করেন।
বলছেন না এই জন্য যে তিনি তাদের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করতে চান না। তা ছাড়া ব্যাপারটা নাটকের মতো। পেছন থেকে প্রম্পটার যা বলছে, তাই নিয়ে স্লোগান হচ্ছে, সে অনুযায়ী সবকিছু চলছে। বাইরে থেকে কিছু বোঝা যায় না। জমির চাচা মঞ্চের পেছন থেকে সামনে আসতে যাবেন কেন? তিনি এবং তার বন্ধুরা টাকা দিয়ে যাচ্ছেন, খাওয়ার প্যাকেট পাঠাচ্ছেন। মঞ্চ চালু থাকছে, মিছিল বের হচ্ছে। ব্যস, এতেই তারা সন্তুষ্ট। একটা মেয়ের জন্য তিনি কিংবা তার সহকর্মীরা ছাত্রনেতাদের খেপাতে যাবেন কেন? নিজের দুর্বলতা থাকলে এমনই হয়। না, জমির চাচাকে বলে কিছু হবে না। সে আমার জানা আছে। হাতে মাইক্রোফোন পাওয়ার একটাই উপায়। ছাত্রনেতাদের কথা শুনতে হবে। সোজা কথায়, তাদের খাদ্য হতে হবে। হ্যাঁ স্যার, আমার মতো মেয়েরা সবাই খাদ্য। তারা মেনে নিয়েছে, ইচ্ছায় এবং অনিচ্ছায়। কী করবে? বাবার এত টাকা নেই যে তার খরচে ঢাকায় থাকবে। চাচা নেই, মামা নেই যে সাহায্য করতে পারেন। একমাত্র জমির চাচারা আছেন। তারা আগ বাড়িয়ে সাহায্য করতে আসেন। বড় মিষ্টি তাদের ব্যবহার। প্রায় অপত্যস্নেহে তাঁরা সঙ্গে নিয়ে ঘোরেন।
মেয়েটি প্রসঙ্গ বদলায়। বলে, আপনাকে টেলিভিশনে দেখেছি, টকশোতে আপনার কথা শুনেছি। আপনাকে অন্য রকম মনে হয়েছে। মানে অন্য পুরুষদের মতো না। আমার ভুলও হতে পারে। কিন্তু সত্যিই আপনাকে দেখে আমার এমন মনে হয়েছে। তা স্যার, পারবেন আমার জন্য কিছু করতে? বড় কিছু না। মঞ্চের আড়ালেই থাকব, লেখালেখি কিছু থাকলে করে দেব। টেলিভিশনেও লেখার কাজ নিশ্চয়ই আছে?
এই বইটা থেকে পড়ব? কতটুকু? এক প্যারা? বেশ পড়ছি। বলে মেয়েটি পড়তে থাকে এক মনে। পড়া শেষ হলে সে তাকে বলে, ক্যামন হলো স্যার? স্লোগান দিয়ে দিয়ে গলাটা ভেঙে গিয়েছে। নরমাল হলে আর একটু ভালো হতো। তা লেখালেখির কাজের জন্য তো গলার স্বরের দরকার নেই। আমার লেখা প্রবন্ধগুলো আপনাকে দেব। কবি শামসুর রাহমানের ওপর লেখা প্রবন্ধ। আমার খুব প্রিয় কবি ছিলেন। ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতাটি পড়লেই আমার গায়ের রোমকূপ দাঁড়িয়ে যায়। আমি প্রবন্ধগুলো আপনার অফিসে গিয়ে দিয়ে আসব। আপনার কাছে পৌঁছাবে কি না কে জানে। কত রকমের সিকিউরিটি আপনাদের অফিসে। তবু আমি দিয়ে আসব।
তিনি পকেট থেকে মোবাইল বের করে চোখের সামনে নিয়ে একটা নম্বরে টিপ দিলেন। তারপর ওপাশে কণ্ঠস্বর শোনা যেতেই তিনি বললেন, একটা মেয়ে যাবে অফিসে। নাম সীমা। ওর একটা অডিশন নেবে। হ্যাঁ, সে একটা কিছু পড়ে যাবে, যা তোমরা তাকে দেবে। শোনার পর নিজেদের মধ্যে আলোচনা করবে। তারপর আমাকে তোমাদের মত দেবে। হ্যাঁ, আমিও শুনব তার রেকর্ড করা অডিশন।
স্যার, আমি টেলিভিশনে অডিশন দেব? সত্যি বলছেন? না, না ঠাট্টা করবেন না আমার সঙ্গে। আমি এর মধ্যেই জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছি। আর বাড়াতে চাই নে কষ্টের বোঝা। স্যার, চাকরি না দেন, আমার সঙ্গে ঠাট্টা করবেন না। আমি মফস্বলের সামান্য একজন মেয়ে, তার ওপর আবার অধঃপতিত। পড়ে গেলে নাকি ওঠা কঠিন। আমি একটু দেখতে চাই, পড়ে গেলেও ওঠা যায় কি না, তার জন্য ছোট একটা সুযোগ দেন শুধু।
তিনি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি খুব বেশি কথা বল।
শাহবাগ চত্বর লোকে লোকারণ্য। সব বয়সের মানুষ নর-নারীতে ভরে গিয়েছে সব রাস্তা, ফুটপাত। সবাই ব্যগ্র হয়ে তাকিয়ে আছে দক্ষিণের দিকে, যেখানে জাতীয় জাদুঘর, পাবলিক লাইব্রেরি আর তারপর আর্ট ইনস্টিটিউট। হকাররা ভিড়ের মধ্যে নানা ধরনের জিনিস বিক্রি করছে। খেলনা, খাবার জিনিস—সবই। লাল আর সাদা হাওয়াই মিঠাইয়ের পেজা তুলার মতো ফাঁপানো শরীর প্লাস্টিকের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। বাবার কাঁধে চড়ে একটা শিশু হাওয়াই মিঠাই খাচ্ছে, কাঁধে চড়েই কেউ বাতাসে খেলনা নাড়ছে। বাঁশি বাজাচ্ছে এক হকার, গলায় ঝোলানো ঝোলায় বিক্রির বাঁশি। শুকনো মিষ্টি বিক্রি করছে ঠেলাওয়ালা। বাতাসে ভাজা-পোড়ার গন্ধ। শিশুপার্কের সামনে এক চিলতে জায়গায় ফকির আলমগীর তাঁর দল নিয়ে লালনসংগীত গাইছেন ফিউশন সুরে।
একটু পরে আর্ট ইনস্টিটিউট থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হলো। সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ের মধ্যে ঢেউয়ের মতো একটা চঞ্চলতা আছড়ে পড়ল। পেপিয়ার-ম্যাশে তৈরি মস্ত বড় বাঘ, প্যাঁচা, ময়ূর মাথার ওপরে তুলে এগিয়ে আসছে শোভাযাত্রার ছেলেমেয়েরা। উত্তেজনায় ফেটে পড়ছে যেন, চঞ্চল হয়ে উঠেছে ভিড়ের মানুষ। গরমে ঘামছে সবাই, লাল হয়ে এসেছে মুখ। ধুলো উড়ছে, বাতাসে রোদের ঝাঁজ।
মেয়েটি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে হাতে মাইক্রোফোন নিয়ে বলছে, ‘নতুন বর্ষকে স্বাগত জানিয়ে এগিয়ে আসছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। এতক্ষণ যারা অধীর প্রতীক্ষায় ছিল, হাজার হাজার সেই সব নর-নারী শিশু-কিশোরের প্রতীক্ষা শেষ হলো। গান শোনা যাচ্ছে, এসো হে বৈশাখ, এসো এসো।’ বলতে বলতে মেয়েটির স্বর ক্রমেই উঁচু হলো। এত কোলাহল, গানের চড়া সুর, তার ভেতরে মেয়েটির কণ্ঠস্বর স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। সে পরেছে লাল পেড়ে সাদা সুতির একটা শাড়ি। তার এক হাতে ছোট গাঁদা ফুলের মালা বালার মতো জড়িয়ে।